Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পূর্বসূরির জেতা ট্রফি ধরে রাখতে চায় বিরাট বাহিনী

ধোনি, কপ্টার শটটা দেখাও তো: ফারুখ

সোমবার সন্ধেয় লর্ডসের লং রুমে যেন জুটি বেঁধে ব্যাট করতে নেমেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এবং ধোনি। তবে ব্যাট নয়, মাইক হাতে ছক্কা হাঁকড়ে উপস্থিত অতিথিদের মনোরঞ্জন করে গেলেন দু’জনে। ধোনি যেমন বললেন, ‘‘ইংল্যান্ড ক্রিকেট খেলার জন্য দারুণ একটা জায়গা।

মেজাজ: লর্ডসের লং রুমে বিরাট কোহালি। ছবি: টুইটার

মেজাজ: লর্ডসের লং রুমে বিরাট কোহালি। ছবি: টুইটার

সুমিত ঘোষ
বার্মিংহাম শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০৪:৫২
Share: Save:

ভারতীয় দূতাবাসের দেওয়া পার্টিতে আবার দেখা হয়ে গেল দু’জনের।

প্রথম জন ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার— যিনি উইকেটকিপিংয়ের সঙ্গে মারকুটে ব্যাটিং মেশানো আধুনিক এই উত্তেজক প্যাকেজের স্রষ্টা ছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ চেন্নাইয়ে (তখন ছিল মাদ্রাজ) লাঞ্চের আগে ৯৪ করেছিলেন হল, গ্রিফিথ, সোবার্স, গিবসদের বেধড়ক ঠেঙিয়ে।

অন্য জন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— যিনি ফারুখের সৃষ্টি করা প্যাকেজিংকে ক্রিকেট বাজারের অন্যতম সেরা আকর্ষণ করে তুলেছেন। বলা হয় অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং ধোনি বরাবরের মতো উইকেটকিপিংয়ের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়ে গিয়েছেন।

সোমবার সন্ধেয় লর্ডসের লং রুমে যেন জুটি বেঁধে ব্যাট করতে নেমেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এবং ধোনি। তবে ব্যাট নয়, মাইক হাতে ছক্কা হাঁকড়ে উপস্থিত অতিথিদের মনোরঞ্জন করে গেলেন দু’জনে। ধোনি যেমন বললেন, ‘‘ইংল্যান্ড ক্রিকেট খেলার জন্য দারুণ একটা জায়গা। কিন্তু এখানকার কিছু নিজস্ব চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’’ অনেক বার ইংল্যান্ডে খেলতে এসেছেন মনে করিয়ে দিয়ে আরও বললেন, ‘‘এখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছি। আবার কঠিনতম সিরিজের মধ্যে দিয়েও গিয়েছি। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড নিয়ে প্রচুর স্মৃতিই আছে আমার।’’ তবে সব চেয়ে হাসির রোল উঠল যখন তিনি বললেন, ‘‘ইংল্যান্ডে সব চেয়ে উপভোগ করি বাস জার্নিগুলো। ফ্লাইট ধরার জন্য ছুটতে হয় না। এটা কিন্তু একটা বিরাট শান্তির ব্যাপার।’’

অনুষ্ঠান জমে উঠল যখন ফারুখ বলতে শুরু করলেন ধোনিকে নিয়ে এবং তাঁর কথায় এসে পড়ল ক্যাপ্টেন কুলের বিখ্যাত হেলিকপ্টার শট। হঠাৎই ঘরভর্তি লোকের সামনে ফারুখ আবদার করে বসেন, ‘‘এম এস, এখানে অনেকে আছে, যারা সব সময় মাঠে যেতে পারে না। তাদের জন্য এখানেই হেলিকপ্টার শটটা একটু খেলে দেখাও তুমি।’’

আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর অফকাটার ফিরিয়ে আনতে মরিয়া মুস্তাফিজুর

উপস্থিত জনতার হাততালি আর সমস্বর সমর্থনে সেই আবদার আরও জোরাল হয়ে ওঠে। ইঞ্জিনিয়ার মঙ্গলবার সকালে ফোনে আনন্দবাজার-কে বললেন, ‘‘আমি খুবই চেপে ধরেছিলাম যে, শটটা খেলে দেখাতেই হবে। শুনে ধোনিও হাসতে শুরু করে দিল।’’

এজবাস্টনে বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যদি ধোনি হেলিকপ্টার শট খেলেন? তিনি তো মাঠে বসেই দেখে নিতে পারবেন। ইঞ্জিনিয়ার থামিয়ে দিলেন, ‘‘সেমিফাইনালটা দেখতে বার্মিংহামে যেতে পারছি না। তবে টিভি-তে দেখব। একটাও বল মিস করব না।’’

পরিবার নিয়ে শিখর ধবন, অজিঙ্ক রাহানে। ছবি: টুইটার

নিজের ক্রিকেট জীবনে এ রকম দুঃসাহসিক সব শট খেলতে পছন্দ করতেন তিনি। সেই আমলে বিশ্ব একাদশে ফার্স্ট চয়েস উইকেটকিপার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। দারুণ রিফ্লেক্সের পাশাপাশি ঝোড়ো ব্যাটিংও সেই নির্বাচনের পিছনে বড় কারণ ছিল। তাই কি ধোনির হেলিকপ্টার শটের প্রতি এমন অনুরাগ? জিজ্ঞেস করায় ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ‘‘একদমই তাই। বরাবরই আমার দারুণ লাগে ধোনিকে। উইকেটকিপার যে ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের ম্যাচউইনার হতে পারে, এই ভাবনাকে ও অভাবনীয় স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। আজকের ক্রিকেটে এটাই তো উইকেকিপারের ট্রেন্ড।’’

অনুষ্ঠানে আর কী বললেন তিনি ধোনিকে? দ্রুত জবাব এল, ‘‘বলেছি, তুমি একদম কোনও কথা কানে নেবে না। দারুণ ফিট আছ, দারুণ কিপ করছ, দারুণ ব্যাট করছ। খেলা চালিয়ে যাও।’’ সত্যিই কি তিনি মনে করেন ধোনি ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে পারেন? ‘‘অবশ্যই মনে করি। বিশ্বাস করি যে, ধোনিকে আমি ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতেও ইংল্যান্ডে আসতে দেখব,’’ বলে দিচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার। ধোনির টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করলেন তিনি। বললেন, ‘‘ধোনির মনে হয়েছে, সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে ওর বেশি সফল হওয়ার সুযোগ আছে। হোয়াই নট? এই ফর্ম্যাট বেশি উত্তেজক, টাকা বেশি, অনেক বেশি জনপ্রিয়। আমি তো মনে করি, ধোনি একদম ঠিক করেছে। এতে ওর কেরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন:অধিনায়ক হচ্ছি, অনুষ্কাকে বলেই কান্না

এর পরে আরও চাঁচাছোলা ভাষায় বলে উঠলেন, ‘‘এখনও কী দারুণ ফিট। কী দুর্ধর্ষ রানিং বিটুইন দ্য উইকেট্‌স। দুর্দান্ত সব শট খেলছে। শুধু কতগুলো লোক ক্যাঁচরম্যাচর শুরু করেছে বলে ওকে সরে যেতে হবে নাকি? আমি ওকে বলেছি, একদম সরবে না। খেলে যাও।’’

ইঞ্জিনিয়ার এবং ধোনির সুসম্পর্ক অনেক দিনের। ক্রিকেট জীবনের শুরুতে ইঞ্জিনিয়ারের ক্লাসও করেছেন ধোনি। এখনও দেখা হলেই ধোনি পরামর্শ চান। ভারতীয় দূতাবাসের পার্টিতেও দু’জনের ক্রিকেট নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। যদিও ইঞ্জিনিয়ার নিজে এ সব পরামর্শ নিয়ে মুখ খুলতে চান না। ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে কয়েকটি কথা বলে থাকতে পারি কোনও ক্রিকেটারকে। সেগুলো আমি ঠিক মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে চাই না,’’ বলে দিচ্ছেন তিনি।

তবে জানাতে কোনও দ্বিধা নেই যে, এই ভারতীয় দল সর্বকালের অন্যতম সেরা এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে যাবে। ‘‘আমার মনে হয় ভারত-ইংল্যান্ড ফাইনাল হবে। তবে এটাও বলতে চাই যে, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানও সহজে লড়াই ছাড়বে না।’’ দূতাবাসের অনুষ্ঠানে ভারত অধিনায়ক কোহালিও বলেন, ‘‘সকলে মনে করছে ভারত, ইংল্যান্ড ফাইনাল হবে। তার জন্য দু’টো দলকেই ভাল খেলে আরও একটা হার্ডল পেরতে হবে।’’ কোহালিকে প্রশ্ন করা হয়, সেমিফাইনালে সামনে বাংলাদেশ। কী মনে হচ্ছে? ভারত অধিনায়ক বলে দেন, ‘‘আমরা যে কাউকে খেলতে প্রস্তুত। যদি আর একটা হার্ডল পেরিয়ে ফাইনালে যেতে পারি, তা হলেই খুশি আমরা।’’

২০১৩-তে ইংল্যান্ডেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতছিল ভারত। সেই দলের সদস্য ছিলেন কোহালি। অধিনায়ক ছিলেন ধোনি। দূতাবাসের অনুষ্ঠানেও পূর্বসূরি অধিনায়কের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে খামতি থাকল না কোহালির। বলে দিলেন, ‘‘এম এস দারুণ ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের চ্যাম্পিয়ন করেছিল। আমি নিজের ছোটখাটো যোগ্যতায় টিমটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। খুবই সম্মানিত বোধ করব যদি এম এসের সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারি।’’

যত সময় যাচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা আকর্ষণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ধোনি-কোহালি সম্পর্কের রসায়ন। অধিনায়ক ও তাঁর উত্তরাধিকারীর মধ্যে এত সখ্যতা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে কস্মিনকালে ছিল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE