গোলের পর এফসি পুনে সিটি’র উল্লাস।
এফসি পুনে সিটির কাছে কলকাতায় ১-৪ হেরে সেই যে বেলাইন হয়েছিল গতবারের চ্যাম্পিয়নদের অভিযান, তার ব্যতিক্রম হল না পুনেতেও। বালেওয়াড়িতে আগে কখনও পুনেকে হারাতে পারেনি এটিকে। এ বারও পারল না। উল্টে এই ০-৩-এ হার কাজটা আরও কঠিন করে তুলল টেডি শেরিংহ্যামের। পুনে কিন্তু এ বার ধীরে অথচ নিশ্চিত ভাবেই এগিয়ে চলেছে সেমিফাইনালের দিকে, চতুর্থ হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে।
ব্রাজিলীয় মার্সেলিনিও আর উরুগুয়ের এমিলিয়ানো আলফারো, এ বারের পুনে সিটির সবচেয়ে বিপজ্জনক জুটি। শেরিংহ্যামের কলকাতা তাঁদের দু’জনের দিকে বেশি নজর দিতে গিয়েই নতুন তিন তারকার সামনে সুযোগ করে দিল গোল করে নায়ক হওয়ার।
প্রথম গোল আদিল খানের। এটি এ বারের মরসুমে তাঁর চতুর্থ গোল। মার্সেলিনিওর কর্নারে আদিলের হেড, নিখুঁত নিশানায়। গোললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এটিকে ডিফেন্ডার বলে মাথা লাগিয়েও বল বাইরে পাঠাতে পারেননি। কেন তাঁকে বিনা বাধায় হেড করতে দেওয়া হল, এটিকে-কোচ নিশ্চয়ই প্রশ্ন তুলবেন ম্যাচ শেষে।
আরও পড়ুন: বাগানেই ফিরতে চাই, সমর্থকদের আদরে চোখ ছলছল সনির
দ্বিতীয় গোলের সময় আর এক ব্রাজিলীয় দিয়েগো কার্লোসকে আটকানোর চেষ্টাই হল না এটিকে-র ডিফেন্ডারদের তরফে। মাঝমাঠ থেকে বল ধরে এগোলেন ম্যাচের নায়ক দিয়েগো, দু’জনকে কাটিয়ে নিলেন, বক্সের মাথায় পৌঁছে আরও দুজনের মাঝখান থেকে ডানপায়ে শট নিলেন। বল এটিকের গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদারের সামনে পড়ে তাঁর বাড়ানো হাতের নাগাল এড়িয়ে জালে জড়াল। ব্যক্তিগত গোলের দুরন্ত নজির।
তৃতীয় গোলের সময়ও এটিকের রক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। বড় বক্সের বাইরে থেকে, প্রায় ২২-২৩ গজ দূরত্বে ছিলেন রোহিত কুমার। জোরালো ড্রপ শট নিয়েছিলেন ডান পায়ে যা আটকানোর সুযোগই ছিল না দেবজিতের কাছে। নিজেদের বক্সের ওপর বিপক্ষের ফুটবলারদের এ ভাবে বিনা বাধায় শট নিতে দেওয়া নিশ্চিত ভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয় কোনও দলের কাছেই। কেন গতবারের চ্যাম্পিয়নরা এ বার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন, তা বোঝা সহজ এমন পারফরম্যান্সের পর।
এটিকে’র বক্সে পুনে সিটি’র হামলা।
পুনের সেই সমস্যা নেই। তাদের কোচ রানকো পোপোভিচ চার ম্যাচের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন। এই ম্যাচ ছিল চতুর্থ। কিন্তু তিনি গ্যালারিতে থাকলেও তাঁর দল তাঁকে নিরাশ করেনি একেবারেই। বিশেষত, ঘরের মাঠে পুনে ততটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে না, প্রচলিত এই কথাটাও মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে তাঁর দল। তিনি নির্বাসিত থাকার সময় চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেল পুনে। কলকাতা বলের দখল রাখতে চেয়েছিল নিজেদের পায়ে, পুনে বিন্দুমাত্র ভাবেনি। যখন তাঁদের পায়ে বল এসেছে, সেরা খেলাটাই খেলেছে স্বচ্ছন্দ্যে। অ্যাটাকিং থার্ডে পৌঁছে ইচ্ছেমতো শট নিয়েছে যা বারবারই সমস্যা তৈরি করেছিল এটিকে-র জন্য।
আরও পড়ুন: ‘মাস্ট উইন ম্যাচ’ বলছেন কাটসুমি
প্রথম গোলের পর তেড়েফুঁড়ে উঠে এসেছিল এটিকে, ঠিকই। অন্তত দু’বার গোলের খুব কাছাকাছিও পৌঁছেছিল পরপর দু-মিনিটে। ৩৬ মিনিটে টমাসের প্রচেষ্টা গোললাইন থেকে জুয়েল রাজা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পরের মিনিটেই বিশাল কাইথ আটকে দিয়েছিলেন জেকুইনিয়ার শট। জয়েশ রানের থেকে বল পেয়ে জেকুইনিয়া শট রেখেছিলেন দূরের পোস্টে। কিন্তু পুনের গোলরক্ষক কাইথ ছিলেন নিজের দক্ষতার শীর্ষে। শুধু ওই দু’বারই নয়, বিরতির ঠিক আগে টেলরের ফ্রি কিকও বাঁচিয়েছিলেন কাইথ।
সুযোগ অবশ্য আরও পেয়েছিল পুনে, প্রথম গোলের আগেই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলফারোর মিস, ১৯ মিনিটে। দিয়েগো বাঁকানো সেন্টার রেখেছিলেন বক্সে, আলফারো শরীর ছুড়ে হেড দিয়েছিলেন যা রাখতে পারেননি তিনকাঠিতে। বিরতির পর এটিকের প্রবীর দাসের কাছেও সুযোগ এসেছিল সমতা ফেরানোর। কিন্তু বক্সের মধ্যে থেকেই তাঁর দুর্বল হেড সোজা চলে গিয়েছিল কাইথের হাতে।
১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে খেলতে নেমেছিল পুনে, তৃতীয় স্থানেই থাকল ১১ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে। তাদের সামনে শুধু বেঙ্গালুরু এফসি এবং চেন্নাইয়িন এফসি। এটিকে ১০ ম্যাচে ১২ নিয়ে অষ্টম। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাকি আট ম্যাচে যত বেশি সম্ভব জিততে হবে শেরিংহ্যামের দলকে। কাজটা কঠিনতর হচ্ছে ক্রমশ!
ছবি: আইএসএল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy