ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে একটা জবরদস্ত শিক্ষা দিয়ে গেল পাকিস্তান। সেটা হল যদি আপনি কোনও কিছু পেতে মরিয়া হন, আর তা অর্জন করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, একাগ্রতা এবং মনোবল অটুট থাকে, তা হলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয় আপনার কাছে।
দু’সপ্তাহ আগে এই পাকিস্তানকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে চূর্ণ হতে দেখেছি ভারতের কাছে। তখন ওদের পারফরম্যান্সটা লাগছিল একদিনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের আট নম্বর র্যাঙ্কিংয়ের মতো। সেখান থেকে ফাইনালে যাওয়াটা পাকিস্তানের কাছে সহজ কাজ তো ছিলই না। উল্টে তা ছিল সমস্যায় পরিপূর্ণ কঠিন একটা কাজ। আর সেটা পাকিস্তান কী ভাবে উতরায় তা দেখাও ছিল একটা চমকপ্রদ ব্যাপার।
প্রথম ম্যাচের হার বাদ দিলে বাকি টুর্নামেন্টটা পাকিস্তান যে ভাবে খেলল তা দেখার পর বলতেই হচ্ছে এই পাকিস্তান টিম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য দল। ফাইনালের দিন সকালে কথা হচ্ছিল পাকিস্তান টিমের কোচ মিকি আর্থারের সঙ্গে। তখনই মিকি বলল, ভারতের কাছে হেরে ওর ছেলেরা খুব আহত। হারের জন্য হতাশা থাকেই। কিন্তু ওদের আবেগটা আঘাত পেয়েছিল। কারণ পাক ক্রিকেটারদের নাকি মনে হয়েছিল প্রথম হারের জন্য ওরা নিজেরাই দায়ী। ফাইনালের আগে তাই ছেলেদের কাছে মিকির বার্তা ছিল খুব স্পষ্ট, ‘যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল প্রথম ম্যাচে আমরা তার থেকে খারাপ হতে পারি না। শেষ পর্যন্ত কী হবে তা ভুলে যাও। মাঠে নেমে ভয়-ডরহীন ভাবে ক্রিকেটটা খেলে এসো। পরিস্থিতিটা উপভোগ করার সঙ্গে নিজের সেরাটা দাও।’
মিকির এই পরামর্শ দারুণ কাজ করেছে ফাইনালে। কোনঠাসা হয়ে পড়লে অকুতোভয় ব্যাপারটা এমনিতেই পাকিস্তান ক্রিকেটের একটা ট্রেডমার্ক। সেই ধারার প্রকৃত উদাহরণ হয়ে রইল ফখর জমান। একদম কোনঠাসা হয়ে পড়া অবস্থা থেকে টিমটাকে দারুণ ভাবে তুলে ধরল ও। প্রথম দশ ওভারে ওর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুধু নন স্ট্রাইক এন্ডে দাঁড়ানো আজহার আলি-কেই ছন্দে ফেরার আত্মবিশ্বাস জোগায়নি। পাক মিডল অর্ডারকেও প্রেরণা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: মিরওয়াইজ ফারুককে পাকিস্তানে যাওয়ার উপদেশ দিলেন গম্ভীর
বোলিংয়েও অনবদ্য পারফর্ম করল পাকিস্তান। বিশেষ করে হাসান আলি। টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে গেল ছেলেটা। পঞ্চাশ ওভারের টুর্নামেন্টে জিততে গেলে বোলারদের মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট তুলতে হয়। সেখানে টুর্নামেন্টে পাকিস্তানই একমাত্র টিম, যারা রিভার্স সুইং করে গেল প্রতি ম্যাচেই। হাসানের সঙ্গে জুনেইদ খান, আমিরও বল হাতে দারুণ খেলে গিয়েছে। মিডল এবং ডেথ ওভারে হাসান প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ত্রাস হয়ে উঠেছে।
এর সঙ্গে সরফরাজের অধিনায়কত্ব নিয়েও বলতে হবে। সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায় না ছেলেটা। ইমাদ ওয়াসিম এবং মহম্মদ হাফিজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বল হাতে ছন্দে ফিরেছিল। আর সরফরাজ আর আমির শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ফর্ম দেখিয়েছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপের মতোই শুরুতে পিছিয়ে গিয়েও কাপ জিতে চমক দেখাল পাকিস্তান। ভারতের চেয়েও এই ট্রফিটা পাকিস্তানের বেশি দরকার ছিল। অন্য দিকে ভারত গোটা টুর্নামেন্টেই ভাল খেলেছে। কিন্তু যে দিন জ্বলে উঠে ট্রফি নেওয়ার ম্যাচ এল সে দিন দ্বিতীয় সেরা হয়েই থেকে গেল ভারতীয়রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy