Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পরিণত এই হার্দিক এখন ম্যাচউইনার

বছর দু’য়েক বাদে বিশ্বকাপ। কারও সঙ্গে তুলনা না করেই এখন থেকে বলে দেওয়া যায়, ভারত কিন্তু একজন ম্যাচ উইনার অলরাউন্ডার পেয়ে গিয়েছে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি হার্দিক কিন্তু বোলিংয়েও ম্যাচ জেতাবে। বিশেষ করে বিদেশে।

হার্দিক পাণ্ড্য।

হার্দিক পাণ্ড্য।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৯
Share: Save:

ইনদওরে হার্দিক পাণ্ড্যর ব্যাটিং দেখতে দেখতে একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম। ভারত কিন্তু এক জন সত্যিকারের ম্যাচউইনার পেয়ে গিয়েছে। যে শুধু বিগ হিট নিতেই জানে না, প্রয়োজনে ম্যাচ ধরতে জানে। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে জানে। এবং আরও বেশি করে জানে ম্যাচ জেতাতে। বিগ হিট নেওয়ার ক্ষমতার পাশাপাশি ওর মানসিকতার প্রশংসাও করতে হবে। ইনদওরে যে ভাবে ম্যাচ জেতাল, তাতে ওর পরিণতবোধ নিয়েও প্রশ্ন তোলার কোনও জায়গা থাকছে না।

হার্দিককে দেখে আমার একটা তুলনার কথা মনে আসছে। ও যেন গাড়ির সেই স্টেপনি। হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে চালাতে চাকা ফেটে গেল। আপনি তখন স্টেপনি বার করে লাগিয়ে নিন, ব্যস, গাড়ি চলতে থাকবে। বিরাট কোহালিও একই ভাবে হার্দিককে ব্যবহার করতে পারে। যখন প্রয়োজন হবে, তখনই ওকে দায়িত্ব দিতে পারে টিমকে তোলার। সেটা বল হাতে হোক কী ব্যাট।

রবিবার চার নম্বরে হার্দিককে নামতে দেখে অনেকেই হয়তো অবাক হয়েছেন। সেই দলে আমি নেই। বরং আমি বলব, হার্দিক ব্যর্থ হলেও টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল। বিরাটরা নিশ্চয়ই দেখতে চেয়েছিল, ওই অবস্থা থেকে প্রায় তিনশো রান তাড়া করে ম্যাচ জেতাতে পারে কি না হার্দিক। বিরাটরা নিশ্চয়ই খুশি হবে দেখে যে, ছেলেটা সত্যিকারের ম্যাচ উইনারই হয়ে উঠছে। যার ভাণ্ডারে শট নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে রয়েছে ইস্পাতকঠিন মানসিকতাও।

হার্দিকের মানসিকতার কথায় আসি। ওর উত্থানের পিছনে কিন্তু আইপিএলের বড় ভূমিকা আছে। আর আছে সচিন তেন্ডুলকরের। যে ওকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য পছন্দ করেছিল। অচেনা, অজানা একটা ছেলে। যে সচিনের সান্নিধ্য পাচ্ছে, যে ড্রেসিংরুমে দেখছে রিকি পন্টিংকে, দেখছে রোহিত শর্মার মতো টিম ইন্ডিয়ার তারকাকে— যে কোনও তরুণ ক্রিকেটারকে উদ্দীপিত করার এর চেয়ে ভাল ওষুধ আর কী হতে পারে। আমি নিশ্চিত, এ রকম একটা তারকা সমৃদ্ধ ড্রেসিংরুমে থাকতে পারাটাই কিন্তু হার্দিককে নিজের ওপর বিশ্বাস আনতে শিখিয়েছে। ‘আই বিলিভ আই ক্যান’— এই মানসিকতাটা তখন থেকেই ওর মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। রবিবার যেমন দেখলাম, অস্ট্রেলীয়রা ওকে স্লেজ করার খুব চেষ্টা করছে। কিন্তু একবারের জন্যও ছেলেটা মাথা গরম করেনি।

এর সঙ্গে রয়েছে ক্রিকেটীয় দক্ষতাও। চেন্নাইয়ে দেখেছিলাম, এ বার ইনদওরেও হার্দিকের ব্যাটিংটা মন দিয়ে দেখে কয়েকটা ব্যাপার বুঝলাম। এক, ও যখন বিগ হিট করে, তখন বলের খুব কাছে এসে মারে। দুই, পয়েন্ট অব কনট্যাক্ট-এর সময় ব্যাটের মুখটা একেবারে সোজা থাকে। যেটা বড় ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্মণ। আড়াআড়ি শট প্রায় খেলেই না। ফলে ওর বিগ হিটে বেশিরভাগই ছয় হয়। মিসহিট খুবই কম হয়। ইনদওরে দেখলাম, শুরুর দিকে ও ব্যাটের মুখটা খুলে থার্ডম্যান অঞ্চলে বল ঠেলে এক-দুই রান নিচ্ছিল। তার পরে বিগ হিটে যায়। এটাই তো পরিণতবোধের লক্ষ্মণ।

বছর দু’য়েক বাদে বিশ্বকাপ। কারও সঙ্গে তুলনা না করেই এখন থেকে বলে দেওয়া যায়, ভারত কিন্তু একজন ম্যাচ উইনার অলরাউন্ডার পেয়ে গিয়েছে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি হার্দিক কিন্তু বোলিংয়েও ম্যাচ জেতাবে। বিশেষ করে বিদেশে। সামনের বছর যে দু’টো বিদেশ সফর আছে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডে কিন্তু বোলার হার্দিকও ম্যাচ জেতাবে বলে আমার মনে হয়।

বিরাট কোহালির টিম যে রান তাড়া করায় অপ্রতিরোধ্য, সেটা আরও একবার বোঝা গেল। ভারতের এই টিমটায় সব জায়গায় খেলার মতো লোক আছে। চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে এখন দলে পরীক্ষা চলছে। কখনও কে এল রাহুল, কখনও মণীশ পাণ্ডে, কখনও কেদার যাদবকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখা হচ্ছে। হার্দিক এ দিন বুঝিয়ে দিল, ওকেও এই জায়গার জন্য ভাবা যেতেই পারে।

ভারতীয় ক্রিকেটে একই সঙ্গে তিন ফর্ম্যাটে এ রকম অভিষেক কারও হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। টেস্টে সেঞ্চুরি, ওয়ান ডে-তে ম্যাচ জেতানো ইনিংস, টি-টোয়েন্টিতে ধ্বংসাত্মক। হার্দিক কিন্তু সত্যিকারের সম্পদ হতে চলেছে ভারতের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE