তারকা: ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হরমনপ্রীত ঝড়। ১১৫ বলে করলেন ১৭১ নট আউট। ছবি: রয়টার্স
ডার্বিতে অস্ট্রেলিয়াকে বধ করে ভারতের মেয়েদের ফাইনালে যাওয়ার দিনে আমার মন জিতল দু’জন।
প্রথমজন, অবশ্যই অপরাজিত ১৭১ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে জয়ের রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হরমনপ্রীত কউর। দ্বিতীয় জন চাকদহের ঝুলন গোস্বামী। পঞ্জাবি কন্যা যদি স্বপ্নের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে আসে, তা হলে বঙ্গললনা ঝুলন বল হাতে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ল্যানিংকে স্বপ্নের ডেলিভারিতে আউট করে ওদের ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিল। এই দুই মেয়ের কাঁধে ভর করেই ৩৬ রানে জিতে বিশ্বকাপ ফাইনালে চলে গেল ভারত। যতদূর মনে পড়ছে ২০০৫-এর পর ভারতের মেয়েরা ফের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল। সে বার যাদের কাছে হেরে গিয়েছিল আমাদের মেয়েরা, এ বার সেই অস্ট্রেলিয়াকেই ছিটকে দিল। এর চেয়ে ভাল বদলা আর কী হতে পারে?
অনেকেই হরমনপ্রীতের ব্যাটিংয়ে বৃহস্পতিবার ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে কপিল দেবের ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন। কপিল যে রকম চাপের মুখে সে দিন অপরাজিত ১৭৫ করে ভারতকে একাই জিতিয়েছিল, এ দিন হরমনও সেটাই করেছে। সে দিনের মতো বৃহস্পতিবারও ভারত না জিতলে বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হয়ে যেত। কপিলের বিরুদ্ধে সে দিন ছিল জিম্বাবোয়ে। আর আজ হরমনপ্রীতদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। যারা গত বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরে ফিরেছিল।
আরও পড়ুন: হরমনপ্রীত ধামাকায় মুগ্ধ কোহালি থেকে সচিন
ভারতীয় ইনিংসের ৩৭তম ওভারে বল করতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার গার্ডনার। যাকে মেয়েদের ক্রিকেটে গ্রেম সোয়ান বলা হয়। গার্ডনারের লুপটা বেশ ভাল। কিন্তু পাওয়ার প্লে শুরুর সেই ওভারে হরমনপ্রীত এমন রুদ্রমূর্তি ধারণ করবে, তা বোধহয় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মেগ ল্যানিং কল্পনাও করেনি।
ফ্ল্যাশব্যাক: টানব্রিজে সেই বিধ্বংসী ১৭৫ করার পথে কপিল।
১, ৬, ৬, ৪, ৪, ২— গার্ডনারের সেই ওভারে উঠল ২৩ রান! এই ওভারটা দেখে আমার আবার যুবরাজ সিংহের কথা মনে পড়ছে। হরমনপ্রীতের হাই ব্যাকলিফট যুবরাজের মতোই। দু’জনেই ভাল স্ট্রোকমেকার। মেয়েটার আর একটা বড় গুণ হল ও কিন্তু হিসেবি ব্যাটিং করে গিয়েছে গোটা ইনিংসে। ভারতের ইনিংসে ১০ ওভারের মধ্যেই স্কোরবোর্ডে ৩৫-২। ফিরে গিয়েছিল দুই ওপেনার স্মৃতি মানধানা ও পুনম রাউত। হরমনপ্রীত এই সময় বুদ্ধি করে ব্যাটিং করল। উল্টো দিকে মিতালি রাজ (৩৬) সোজা ব্যাটে খেলে ভারতের ইনিংসটাকে দাঁড় করিয়ে দেয়। যার ফলে ৪২ ওভারে ভারতের ইনিংস শেষ হয় ২৮১-৪।
এ দিন হরমনপ্রীতের ১১৫ বলে ১৭১ রানের ইনিংস বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দু’টো বিষয় খুব চোখ টানছে। এক, মেয়েটার সাহস। দুই ওর ইনভলভমেন্ট। এ বার মেয়েদের বিশ্বকাপে ১৪টি সেঞ্চুরি হয়েছে। এই সব সেঞ্চুরিকে বৃহস্পতিবার ম্লান করে দিল হরমনপ্রীতের ১৭১। ম্যাচের মাঝখানে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েছিল। সে সময় মনে হচ্ছিল আর বোধ হয় পারবে না। কিন্তু সাহস, দম, ও তীব্র শক্তি দিয়ে যুঝে গেল হরমনপ্রীত! ওর রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, শরীরের ভাষাও দেখার মতো। ব্যক্তিগত ৯৮ রানের মাথায় দাঁড়িয়ে যে ভাবে ওর পার্টনার দীপ্তি শর্মাকে দু’রান নেওয়ার জন্য ‘ভাগ জোরসে’ বলে তাড়া দিল, সেটা একমাত্র সম্ভব টিমের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকলে।
বোলিং দিয়ে ভারতকে কোণঠাসা করতে দুই পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দশ ওভার ওদের পরিকল্পনা ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু হরমনপ্রীতই অস্ট্রেলিয়ার যাবতীয় পরিকল্পনা নষ্ট করে দেয়। মোদ্দা কথা, স্পিন দিয়ে ভারতকে মারতে গিয়েই ভুল করেছে অস্ট্রেলিয়া।
হরমনপ্রীতের এই স্বপ্নের ইনিংস কপিলের ওই ইনিংসের মতোই কালেভদ্রে দু’-একবার আসে। আমি ঝুলনকেও গুরুত্ব দেব। কারণ এই অস্ট্রেলিয়া টিমে সবচেয়ে জোরে বল মারে ওদের অধিনায়ক ল্যানিং। ঝুলন ওকে ম্যাচের সেরা বলটাই করল। ছোট্ট একটা আউট সুইং। আর তাতেই আউট ল্যানিং। ম্যাচেরও টার্নিং পয়েন্ট ওটা। কারণ অস্ট্রেলিয়া ওখান থেকেই ম্যাচে হারিয়ে যায়।
২৩ জুলাই লর্ডসে ফাইনাল। বিপক্ষ ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে এ ভাবে হারানোর পরে যে আত্মবিশ্বাস পেল, তাতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফেভারিট ঝুলনরাই। রবিবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে মিতালি রাজের দল যদি বিশ্বকাপটা জিতে নেয়, তা হলে তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy