Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

কোচ-ক্যাপ্টেন বেসুরে বাজলে কী হয় অতীতেও দেখেছে টিম ইন্ডিয়া

১৯৯০ থে‌কে ২০১৭। কোচ বনাম অধিনায়কের এমন দ্বৈরথের কথা যেমন ক্রিকেট ইতিহাসে রয়েছে, তেমন রয়েছে সাফল্য, ব্যর্থতার খতিয়ানও। শুধু সৌরভ-গ্রেগ বা কুম্বলে কোহালি নয়, এই তালিকায় রয়েছেন বিষেণ সিংহ বেদী থেকে আব্বাস আলি বেগ, সন্দীপ পাটিল, মদন লাল, কপিল দেবের মতো তারকারাও।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ১৯:৩৯
Share: Save:

মাঠে দাঁড়িয়ে মুখোমুখি দু’জন। গ্রেগ চ্যাপেল এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশে দ্রাবিড়। মাঠের বাইরে থেকে শুধু দু’জনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পড়া যাচ্ছিল। কোনও শব্দ-বাক্য শোনা না গেলেও, উত্তেজনার মাত্রাটা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হচ্ছিল না। সৌরভ তখন অধিনায়ক হিসাবে সদ্য বাদ গিয়েছেন। প্রথম এগারোতেও প্রায় সুযোগ পাচ্ছেন না। সেই সময়ের ওই মুখোমুখি ‘যুদ্ধ’র ছবিটা এখনও মনে আছে।

আরও খবর: ‘জনপ্রিয়’ শুধু বিরাট নন, সোশ্যাল মিডিয়া দু’ভাগ কুম্বলে-কোহালিতে

ক্রিকেট ইতিহাসে কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের এমন সম্মুখ সমরের উদাহরণ অনেক রয়েছে। শুধু খেলোয়াড় নয়, কোচ-ক্যাপ্টেন দ্বৈরথও কোনও নতুন ঘটনা নয় এ দেশে। সেই দ্বন্দ্বের সেরা মুখ এত দিন ছিলেন সৌরভ-গ্রেগ। এ বার হইচই ফেলে দিল অন্য এক জুটি, অনিল কুম্বলে-বিরাট কোহালি। তবে, প্রথম জুটির ‘কীর্তি’ মাঠে তো বটেই, ধরা পড়েছিল ময়দানের বাইরেও। ইডেন থেকে বেরিয়ে চ্যাপেলের সেই ‘মিডল ফিঙ্গার’ দেখানোর ছবি মনে আছে? সেটা তো আজও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরে। সঙ্গে ই-মেল ফাঁসের ঘটনা। ভারতীয় ক্রিকেটে এত বড় বিতর্ক এর আগে শোনা যায়নি। আর সঙ্গে একগুচ্ছ ব্যর্থতা তো ছিলই।

সেখানে কোহালি-কুম্বলে লড়াইটা ভীষনই নৈঃশব্দ্য-মাখা। প্রকাশ্যে বাক-বিতন্ডা তো দূরের কথা, দু’জনের মধ্যে বাক্যালাপই নাকি বন্ধ ছিল! কুম্বলে পদত্যাগ করার পর প্রথম সামনে আসে, গত ছ’মাস ধরে কথা বন্ধ ছিল কোচ-অধিনায়কের মধ্যে। তাই, বাইরে থেকে বোঝা যায়নি দু’জনের গোলমাল! কিন্তু, ‘ঠান্ডা মাথা’র সেই ঝামেলার জেরে সরে যেতে হয় কুম্বলেকে।

ভারতীয় ক্রিকেটের দুই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়েই লেখা থাকবে কোচ বনাম অধিনায়কের এই মনস্তাত্বিক যুদ্ধের কথা। থাকবে বিতর্কের কথাও।

১৯৯০ থে‌কে ২০১৭। কোচ বনাম অধিনায়কের এমন দ্বৈরথের কথা যেমন ক্রিকেট ইতিহাসে রয়েছে, তেমন রয়েছে সাফল্য, ব্যর্থতার খতিয়ানও। শুধু সৌরভ-গ্রেগ বা কুম্বলে কোহালি নয়, এই তালিকায় রয়েছেন বিষেণ সিংহ বেদী থেকে আব্বাস আলি বেগ, সন্দীপ পাটিল, মদন লাল, কপিল দেবের মতো তারকারাও।

২০০৫-এ ভারতীয় দলে কোচের দায়িত্ব নিয়ে আসেন চ্যাপেল। তখন সেই জায়গা থেকে সদ্য সরেছেন জন রাইট। কোচ-ক্যাপ্টেন জুটির অসাধারণ এক নজির রেখে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তার পরেই যেন সব গোলমাল হয়ে গেল! নয়া জুটির কল্যাণে দু’বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে লেখা হতে থাকল এক অন্ধকার অধ্যায়। যেখানে কোচ এবং অধিনায়ক একে অপরের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন! বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন প্রকাশ্যে।

অথচ, ভারতীয় দলের সব থেকে খারাপ সময়ে দায়িত্ব পেয়েছিলেন জন রাইট। ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্ধকার জগত থেকে আলোয় ফিরিয়ে আনার সময় সেটা। গড়াপেটার অভিযোগে তত দিনে অভিযুক্ত হয়েছেন আজহারউদ্দিন, অজয় জাডেজা, মনোজ প্রভাকরেরা। সৌরভ-রাইট জুটির হাত ধরেই ২০০১-এ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়। ১৯৮৩-তে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০০৩-এ ফের বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছয় ভারত। আবার জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল সেই ভারতীয় দল। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স হয়েই থাকতে হয়। তবে, সাফল্য তো ছিল!

রাইট রেখে গিয়েছিলেন কোচ-অধিনায়ক বোঝাপড়ার এক বড় নজির। রাইট পরবর্তী সময়ে চ্যাপেলের নির্বাচন নিয়ে লড়াই কম হয়নি। তাঁর জমানাতে সৌরভকে সরিয়ে রাহুল দ্রাবিরকে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়। তাঁর সময়েই ২০০৭-এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে ভারতের হার। শুধু তাই নয়, গ্রুপ স্টেজ থেকেই দল ছিটকে গিয়েছিল।

তবে, কুম্বলে-কোহালি জুটির দখলে অবশ্য রয়েছে সাফল্য! ঘরের মাঠে টানা টেস্ট সিরিজ জয় তো রয়েইছে, সঙ্গে রয়েছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছনো। ঘরের মাঠে ১৯টি টেস্ট ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডও রয়েছে এই জুটির দখলে।

সফল হওয়ার তালিকায় থাকবে গ্যারি কার্স্টেন-ধোনি জুটিও। ওই দু’জনের হাত ধরে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল এই প্রজন্ম। সফল হয়েছিল সচিন তেন্ডুলকরের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। ২০০৮-এ গ্যারি দায়িত্ব নেন। তিনি এমন এক জন কোচ ছিলেন, যিনি কখনও প্রচারের আলোয় নিজেকে নিয়ে আসেননি। তাঁর সময়ে ভারত ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে ২-০তে হারিয়েছিল। তাঁর হাত ধরেই শ্রীলঙ্কায় দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়। ৪০ বছর পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট এবং ওডিআই সিরিজ জয়। ধোনি-কার্স্টেন জুটিতেই ২০০৯-এ টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম শীর্ষে ওঠা আর টিকে থাকা ২০১১ পর্যন্ত। আর ২৮ বছর পর ভারতে ফের বিশ্বকাপ উৎসব নিয়ে এসেছিল এই জুটিই।

সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসেব দিয়ে হয়তো সবটা বিচার করা যায় না। কিন্তু মাঠ এবং তার বাইরে অধিনায়ক-কোচের বোঝাপড়ার উপর সাফল্যের হিসেব নির্ভর করে। পাশাপাশি, বিতর্কও কিন্তু রেখে যায় ব্যর্থতার খতিয়ান। ভারতীয় ক্রিকেটে যা চলে আসছে বহু দিন ধরে। কুম্বলে-কোহালি জুটি তাই নতুন কোনও নজির গড়ল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE