Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

ডিকার বাঁ পায়ের ধাক্কায় উড়ে গেল ইস্টবেঙ্গল

শুরুতেই গোল। ৩৫ মিনিটে আবার। ডিকার বাঁ পায়ের জোড়া গোলে মোহনবাগানের ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দেওয়া। পর পর দু’বার। আই লিগে পিছিয়ে পড়া মোহনবাগান হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পেয়ে গেল এখান থেকেই।

গোলের পর ডিকার উচ্ছ্বাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

গোলের পর ডিকার উচ্ছ্বাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ১৭:০৯
Share: Save:

আই লিগ ২০১৭-১৮, ফিরতি ডার্বি

ইস্টবেঙ্গল ০

মোহনবাগান ২ (ডিকা)

তখনও গুছিয়ে বসতে পারেনি যুবভারতীর গ্যালারি। দু'মিনিটের মধ্যেই বদলে গেল দু’প্রান্তের পরিবেশ। উৎসবে মাতল মোহনবাগান। ইস্টবঙ্গলে নেমে এল অসময়ের অমাবস্যা।

প্রায় ৪৩ হাজারের গ্যালারি শুরুতেও অসমান ছিল। শেষেও একই রকম থেকে গেল। মোহনবাগানের ভিকট্রি ল্যাপে যখন রবিবাসরীয় বিকেলে পার্টির মেজাজে গোটা সবুজ-মেরুন গ্যালারি, তখন বাগান কর্তাদের জবাব দিয়ে গেলেন ডিকা। তার জোড়া গোলেই আই লিগের ফিরতি ডার্বিও নিজেদের দখলেই রেখে দিল মোহনবাগান।

হোম ম্যাচ। ভাঙা মোহনবাগান। চলে এসেছেন ডুডু। এত হিসেব-নিকেশের পর গ্যালারি ভরিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। যখন ডার্বির দুপুরে প্রায় অনেকটাই ফাঁকা গ্যালারি দিয়ে শুরু হল মোহনবাগানের ম্যাচ, ঠিক তখনই জমজমাট ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি। কিন্তু সময়ের কাঁটা ঘুরতেই বদলে গেল যুবভারতীর আবহাওয়া। লাল-হলুদ উচ্ছ্বাসের হাওয়া চলে গেল সবুজ-মেরুনের দখলে। ফাঁকা গ্যালারি ভরতে শুরু করল তখন থেকেই।

আরও পড়ুন
অনেক হতাশা পেরিয়ে চেনা ছন্দে কলকাতার ডার্বি

যেখানে শুরু করেছিল, সেখানেই শেষ করল মোহনবাগান। দ্বিতীয়ার্ধে শুধু গোলের চেষ্টা-- কিন্তু গোল হল না। একাধিক নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট মোহনবাগানের। যা থেকে গোল হলে ইস্টবেঙ্গল লজ্জা কী দিয়ে ঢাকত, সেটাই প্রশ্ন।

ম্যাচ শেষে সমর্থকদের দেওয়া সনির মুখোশ পরেও পোজ দিলেন ডিকা।

এই ডার্বি শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধের ৩৫ মিনিটেই। রেফারির স্টপ ওয়াচে তখন ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড। নিখিল কদমের একটা মাপা সেন্টার বক্সের মধ্যে হেড করে নামিয়ে দিয়েছিলেন আক্রম। আর সেই বলেই ডিকার বাঁ পায়ের শট সোজা চলে গেল গোলে। দিপান্দা ডিকার বাঁ পায়েই লেখা হল ২০১৮-র আই লিগের ফিরতি ডার্বি। ৩৪ মিনিটে আবার সেই ডিকা। এ বার বল রেখেছিলেন রেনিয়ের ফার্নান্ডেজ। ডিকার সামনে তখন দাঁড়িয়ে ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডল।

কিন্তু তাতে কী? ডিকার মধ্যে তখন যেন বিরাজ করছেন স্বয়ং ফুটবলের দেবতা। অবাক অর্ণব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন আবারও সেই ডিকার বাঁ পায়ের শট চলে গেল তাঁদের গোলে। ঠিক কী ভেবেছিলেন অর্ণব, বোঝা গেল না। গোল হজমের পর এমন ভাব করলেন, যেন গোলটা কেন দিলেন রেফারি বা ডিকা কেন গোলে বলটা পাঠালেন!

গোল বাতিল হওয়ার পর হতাশ প্লাজা।

খালিদ জামিলের ইস্টবেঙ্গলে কর্তাদের অনেক নিয়ম, সঙ্গে খারাপ ব্যবহার। সাংবাদিকদের দু’ঘণ্টা রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে খালিদের দীর্ঘ ক্লাস আরও কত কিছু। কিন্তু, আসল জিনিসটাই উধাও। এ দিন যে ভাবে ভাঙাচোরা দল নিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে মাত দিলেন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। এর পর অতি বড় সমর্থকও এই ইস্টবেঙ্গল নিয়ে আর স্বপ্ন দেখার সাহস করবেন না।তাও ২৭ মিনিটে গোল কাটসুমির কর্নার থেকে গোল করে ফেলেছিলেন প্লাজা। কিন্তু বাতিল হয় সেই গোল। কারণ, কাটসুমির কর্নার মাঠের বাইরে থেকে বক্সে ঢুকেছিল।

মোহনবাগান দ্বিতীয়ার্ধে অত গোল মিস না করলে পাঁচ গোলের লজ্জা আবার ফিরতে পারত কলকাতা ফুটবলে। এ বার হয়তো ৫-০ই হত। ইস্টবেঙ্গল গোল করতে পারে পুরো ম্যাচে তেমনটা একবারও মনে হয়নি। একা নিখিল কদমই নাড়িয়ে দিয়ে গেল পুরো ইস্টবেঙ্গলকে। গোলের রাস্তা তৈরি করলেন, গোলের সামনে পৌঁছে গেলেন, গোলের বল বাড়ালেন। শেষ মুহূর্তে নিখিলের শট পোস্টেও লাগল। পুরো ম্যাচে বার বার চোখে পড়ল এই মিডফিল্ডারকে।

গোলের পর ডিকাকে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস।

ইস্টবেঙ্গলের একটাই অজুহাত থাকতে পারে। সেটা, প্রথম গোল হজমের তিন মিনিটের মধ্যে চোট পেয়ে আল আমনার বেরিয়ে যাওয়া। তাঁর জায়গায় বাজিকে নামিয়ে বাজি জেতা হল না খালিদের। দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকা ডুডুকে পুরো ম্যাচে খুঁজে পাওয়া গেল না। পাওয়ার কথাও ছিল না। কিন্তু যাঁদের উপর ভরসা রাখার কথা ছিল, তাঁরাই বা কী করলেন। তিনটি পরিবর্তন করেও ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে ফিরতে পারল না।

ম্যাচ শেষে সমর্থকরদের কাছে পৌঁছে গেলেন ডিকা। এই ডিকাকেই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন কর্তারা! জবাবটা তাই তিনি মাঠেই দিলেন। যে সমর্থকরা এক দিন আগেই সনির পায়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন এ দিন তাঁরাই ডিকার জন্য গলা ফাটালেন। সমর্থকদের থেকে পাওয়া সনির মুখোশও পরলেন ডিকা। জায়গাটাও কি নিয়ে নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু এই ম্যাচের উপরই নির্ভর করছিল দুই কোচের ভাগ্য। শঙ্করলাল তো পাশ করে গেলেন ডিস্টিংশন নিয়ে। এ বার খালিদের কী হবে?

হতাশায় মুখ ঢেকেছেন ইস্টবেঙ্গলের সুরাবউদ্দিন।

ইস্টবেঙ্গল: লুই ব্যারেটো, লালরাম চুলোভা, অর্ণব মণ্ডল (কেভিন লোবো), এডুয়ার্দো, সালাম রঞ্জন, আল আমনা (বাজি), মহম্মদ রফিক, কাটসুমি ইউসা, প্রকাশ সরকার (সুরাবউদ্দিন), ডুডু ওমাগবেমি, উইলিস প্লাজা।

মোহনবাগান: শিলটন পাল, কিংসলে, কিংশুক দেবনাথ (রানা ঘরামি), রিকি, অরিজিৎ বাগুই, ওয়াটন, নিখিল কদম, রেনিয়ের ফার্নান্ডেজ (শিলটন ডিসিলভা), শেখ ফৈয়াজ, আক্রম (আজহারউদ্দিন), দীপান্দা ডিকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE