Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বিস্ময় গোলের নায়ক কলকাতায়

বিজয়নের শুভেচ্ছা নাওরেমকে

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে বুধবার দুপুরেই কলকাতায় পৌঁছেছে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ। সন্ধ্যায় গঙ্গাপাড়ের টিম হোটেলে রিকভারি সেশন শেষ হওয়ার পরেই বিজয়নের ফোন, ‘‘আমি আই এম বিজয়ন বলছি।

মুগ্ধ: নাওরেমের গোল দেখে অভিভূত বিজয়নও।

মুগ্ধ: নাওরেমের গোল দেখে অভিভূত বিজয়নও।

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৯
Share: Save:

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে বুধবার দুপুরেই কলকাতায় পৌঁছেছে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ। সন্ধ্যায় গঙ্গাপাড়ের টিম হোটেলে রিকভারি সেশন শেষ হওয়ার পরেই বিজয়নের ফোন, ‘‘আমি আই এম বিজয়ন বলছি। আমাকে হয়তো তুমি চিনবে না। একটা সময় আমিও একটুআধটু ফুটবল খেলেছি। টিভিতে তোমার অসাধারণ গোলটা দেখেছি মঙ্গলবার। তোমার জন্য গর্বিত। তোমার মতো গোল আমি কখনও করতে পারিনি।’’

বিজয়নের ফোনে বিস্মিত নাওরেম ক্ষণিকের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল, ‘‘বিজয়ন স্যার, আপনার নাম শুনেছি। ভাবতেই পারিনি, আপনি ফোন করে অভিনন্দন জানাবেন। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।’’ তার পরেই বিজয়নের কাছে নাওরেমের প্রশ্ন, ‘‘কী ভাবে আরও উন্নতি করব?’’ উত্তরসূরিকে জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়কের পরামর্শ, ‘‘তোমাকে নিয়ে এখন নিশ্চয়ই প্রচুর মাতামাতি হবে। কিন্তু উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলে হবে না। তোমার পথ চলা সবে শুরু হয়েছে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে কিন্তু চলবে না।’’ তার পরেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তোমার বাড়ি কোথায়? বাড়িতে কে কে আছেন? কোনও সমস্যা হলে বিনা সঙ্কোচে যোগাযোগ করবে।’’ কেমন লাগল নাওরেমের সঙ্গে কথা বলে? উচ্ছ্বসিত বিজয়ন আনন্দবাজার-কে বললেন, ‘‘খুব ভাল ছেলে। কোনও অহঙ্কার নেই। অনেক দূর যাবে।’’

বিজয়নের ফোনের মতোই চমকপ্রদ নাওরেমের উত্থানের কাহিনি। ফুটবলজীবন শুরু করেছিল গোলরক্ষক হিসেবে। তার পর স্ট্রাইকার। আর এখন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান উইঙ্গার।

মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে থোউবাল জেলার কেইরাক গ্রামে জন্ম নাওরেমের। শৈশবে গোলপোস্টের নীচে কিছুটা বাধ্য হয়েই দাঁড়াত। কারণ, গোলকিপিং করলেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্তকে দলে নিত গ্রামের দাদারা। একদিন হঠাৎ করেই নাওরেমের সামনে ফরয়োর্ড পজিশনে খেলার সুযোগ চলে এল। আর প্রথম ম্যাচেই গোল করে নায়ক। সে দিন থেকেই শুরু হয়েছিল জাতীয় দলে সুনীল ছেত্রীর পাশে খেলার স্বপ্ন দেখা। কিন্তু বাধা দেন বাবা।

কেইরাক গ্রামেই ছোটখাটো ব্যবসা করে কোনও মতে সংসার চালান তিনি। চাইতেন ছেলে লেখাপড়া করে সরকারি চাকরিতে যোগ দিক। নাওরেমের লেখাপড়ায় মন ছিল না। তার একটাই লক্ষ্য— ফুটবলার হওয়া। তাই বাবাকে না জানিয়েই মিনার্ভা এফসি অ্যাকাডেমির ট্রায়ালে নামার জন্য চণ্ডীগড়ের পাড়ি দিয়েছিল। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে বুধবার কলকাতায় পৌঁছে ভারতীয় ফুটবলের বিস্ময় বালক নিজেই শোনাল সেই কাহিনি, ‘‘আমাদের গ্রামের এক দাদা মিনার্ভা অ্যাকাডেমিতে ছিল। ও আমাকে মিনার্ভা এফসি-র কর্ণধার রঞ্জিত বাজাজের ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। রঞ্জিত স্যার আমাকে বলেছিলেন, ট্রায়ালে পছন্দ হলে নেবেন।’’

স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে প্রথম দিনই নজর কেড়ে নিয়েছিল নাওরেম। বছরখানেকের মধ্যেই জাতীয় দলে ডাক পায়। কিন্তু ফের ধাক্কা খায় তার স্বপ্ন। প্রচণ্ড গতির জন্য তৎকালীন কোচ নিকোলাই অ্যাডাম উইঙ্গার হিসেবে খেলার পরামর্শ দেন নাওরেমকে। প্রথম কয়েক দিন খুব মন খারাপ হয়েছিল তার। যদিও কাউকে তা বুঝতে দেয়নি। এমনকী, জাতীয় দলে নাওরেমের রুমমেটও জানতে পারেনি। ভারতীয় ফুটবলের নতুন তারকার কথায়, ‘‘আমি নিজেকে বোঝাতাম। বলতাম, ফুটবলার হিসেবেই তোমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তাই মন দিয়ে প্র্যাকটিস করো। চেষ্টা করো উইঙ্গার হিসেবে খেলেই গোল করার।’’

দিল্লির অম্বেডকর স্টেডিয়ামের মাঠে লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে মঙ্গলবার উইং দিয়েই কাট করে ভিতরে ঢুকে পাঁচ জনকে কাটিয়ে গোল করে নাওরেম। এই বিস্ময় গোলের পরেই মেসির সঙ্গে তার তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা শুনে হেসে ফেলল বছর সতেরোর তারকা। নাওরেমের কথায়, ‘‘মেসির সঙ্গে আমার গোলের তুলনা হওয়ায় আমি গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE