Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
U-17 World Cup

এই বিশ্বকাপ থেকে কী পেল ভারত

বিশ্বকাপ ভারতকে দিয়েছে অনেক কিছু। দিয়েছে একধাঁক তরতাজা প্রতিভা। যাদের নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা যায়। এ ভাবেই ক্রমশ এই দলগুলোকে তৈরি করেছে সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।

ভারত বনাম আমেরিকা ম্যাচের একটি অংশ। ছবি: এএফপি।

ভারত বনাম আমেরিকা ম্যাচের একটি অংশ। ছবি: এএফপি।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ১২:৫৫
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকে ঘিরে যে ক্রেজ দেখেছে ভারতীয় ফুটবল সেটা জাতীয় দলের ক্ষেত্রে তেমনভাবে কখনওই দেখা যায়নি। ভারতীয় ফুটবলের সবটাই ছিল ক্লাব কেন্দ্রীক। কিন্তু এই বিশ্বকাপ দেখাল জাতীয় দলকে ঘিরেও এই পাগলামো দেখানো যেতে পারে তাও আবার দিল্লির মতো নানা ইভেন্টে ঠাসা শহরে। প্রথম ম্যাচ থেকে শেষ পর্যন্ত যেমন ভারতের খেলার উন্নতি ঘটেছে তেমনই উন্নতি হয়েছে মানুষের ফুটবল প্রেমের। যে কারণে প্রথম ম্যাচে যেখানে ৪৬ হাজারের কিছু বেশি দর্শক এসেছিল দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সেখানে শেষদিন ভারতের জন্য গলা ফাটাতে ছিল ৫২ হাজারের উপর মানুষ। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।

সব ম্যাচ হেরে গিয়েছে মাতোসের ছেলেরা ছিটকে গিয়েছে বিশ্বকাপ থেকেও কিন্তু দিল্লির গ্যালারি প্রমাণ করেছে লড়াই শুধু ওই মাঠের মধ্যের ১১ জনের ছিল না বরং ছিল আপামর ভারতবাসীর। তাই যখন হেরে হতাশায় চোখে জল সকলের তখনও ভারতের জন্য গলা ফাটিয়ে গিয়েছে গ্যালারি। মাথা নীচু করে মাঠ ছাড়া রহিম, অনিকেত, অমরজিতদের বুকে টেনে নিয়েছে ওরাই। সঙ্গে সেলফির আবদারও ছিল। ওদের সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস দিয়েছে দিল্লির জনতা। ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌর ভারত ছিটকে যাওয়ার পর বলেছেন, ‘‘তোমরা আমাদের গর্বিত করেছ। তোমরা সবার হৃদয় জিতে নিয়েছ। তোমরাই ভবিষ্যতের আশা।’’ এ ভাবে গোটা দেশ পাশে থেকে এই ভারতীয় দলের।

আরও পড়ুন: হেরে স্টিভনকে খোঁচা দিলেন কোচ মাতোস

আরও পড়ুন: হারের জ্বালা থেকে ভারতীয় দলকে মুক্তি দিল ৫২ হাজারের গ্যালারি

এটা তো গেল সব থেকে বড় পাওয়া এই ভারতীয় দলের। আর খেলার মাঠে নেমে যেটা দেখাল ওই ছেলেরা সেটা তো সারাজীবনের সম্পদ হয়ে থাকল ভারতীয় ফুটবলের জন্য। ওরা বোঝালো অনেকটা এগিয়ে থাকা ইউএসএ, কলম্বিয়া, ঘানার মতো দলের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে সমানে সমানে লড়াই করা যায়। এই মানসিকতাটা তৈরি হয়ে গেল ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের।

ভারতের খেলার একটি মুহূর্ত। ছবি: এআইএফএফ।

এই বিশ্বকাপ ভারতকে দিয়েছে আরও অনেক কিছু। দিয়েছে একধাঁক তরতাজা প্রতিভা। যাদের নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা যায়। এ ভাবেই ক্রমশ এই দলগুলোকে তৈরি করেছে সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। তার মধ্যে থেকেও যদি বেছে নিতে হয় তা হলে বলতে হবে এই বিশ্বকাপ থেকে ভারতের প্রাপ্তি গোলকিপার ধীরাজ ও ডিফেন্ডার বরিস। ভারতের প্রাপ্তি ঠান্ডা মাথার এক অধিনায়ক অমরজিৎ। ভারতের প্রাপ্তি রহিম আলি, অনিকেত যাদবের মতো গোলের জন্য ছটফট করা দুই স্ট্রাইকার। পেয়েছে সঞ্জীব স্টালিন, সুরেশের মতো এই ছোট্ট বেলাতেই চূড়ান্ত পেশাদার ভারতীয় দলের মুখপাত্র হয়ে ওঠার মতো কয়েকজন। যারা সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাষায় জবাব দিয়ে যেতে পারে। বিদেশ ফেরৎ গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু দারুণ খুশি ধীরাজকে নিয়ে। বলেন, ‘‘দারুণ লড়াই দিয়েছে ছেলেরা। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’’

হারের মুখ হয়তো দেখতে হয়েছে কিন্তু অপ্রাপ্তি ওই টুকুই। বাকি সবটাই তো পাওয়া। আর সব কিছুকে ছাপিয়ে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলা মণিপুরের গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা জিকসনের গোল। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে লাফিয়ে যে হেডটা করেছিল জিকসন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতের প্রথম গোল হিসেবে লেখা হয়ে থাকবে। লেখা থাকবে ৯ অক্টোবর ২০১৭র ঠিক রাত ৯.৪০-এ ভারতীয় ফুটবলকে গোল উপহার দিয়েছিল এই মিডিও। এ ভাবে ভারতীয় ফুটবল দল কবে স্বপ্ন দেখিয়েছে? যেটা দেখিয়ে গেল মাতোসের ছেলেরা। বুঝিয়ে গেল ভারতীয় ফুটবল নিয়ে আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতেই পারি। বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে পারি ভারতীয় ফুটবলকে। শুধু ফেডারেশনকে ভাবতে হবে ভবিষ্যতের এই তারকারা যেন হারিয়ে না যায়। তার জন্য চাই পরিকল্পনা যা ইতিমধ্যেই করতে শুরু করেছে প্রফুল পটেল অ্যান্ড কম্পানী। আই লিগে হয়তো আবার দেখা যাবে এই একঝাঁক ফুটবলারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

U-17 World Cup FIFA India ভারত
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE