Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সেই ভুবনই ‘ঈশ্বর’, সঙ্গে মিলল শিখর-ঝড়

টেস্ট সিরিজে ১-২ হারতে হলেও তিন টেস্টে ভারতীয় বোলাররা ৬০ উইকেট তুলে প্রমাণ করে দিয়েছিল এই ভারতীয় বোলিং দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানে।

৪০ বলে ৪৭ রান করে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার শিখর ধবন। ভারত সিরিজ জিতল ২-১। ছবি: এএফপি।

৪০ বলে ৪৭ রান করে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার শিখর ধবন। ভারত সিরিজ জিতল ২-১। ছবি: এএফপি।

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল আমাদের বোলিং শক্তির গভীরতা নিয়ে।

টেস্ট সিরিজে ১-২ হারতে হলেও তিন টেস্টে ভারতীয় বোলাররা ৬০ উইকেট তুলে প্রমাণ করে দিয়েছিল এই ভারতীয় বোলিং দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানে। একদিনের সিরিজেও দুই রিস্টস্পিনারের ভেলকি ও বিরাট কোহালির ব্যাটিং বিক্রমে সিরিজ ৫-১ জিতেছিল ভারত।

শনিবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ জয়ের নেপথ্যেও কিন্তু সেই বোলাররা। পাওয়ার প্লে এবং ডেথ ওভারে এমন আঁটসাঁট বল করল ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা-রা যে তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একদিনের পরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ফিরছে ভারত। একদিনের সিরিজে রিস্টস্পিনারের পরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের নায়ক আমার চোখে ভুবনেশ্বর কুমার (২-২৪)। এ দিন ম্যাচে ওর করা চব্বিশটি বলের মধ্যে দশটাই ‘ডট বল’।

সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচে ভারতের করা ১৭২-৭-এর জবাবে এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটা হেরে বসল প্রথম ছয় ওভারেই। পাওয়ার প্লে-র ওই ছয় ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ২৫-১। কোনও ওভারবাউন্ডারি নেই। বাউন্ডারি মোটে দু’টো। কিন্তু এই জায়গা থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকা পাল্টা লড়াই শুরু করেছিল ক্রিশ্চিয়ান ইয়ঙ্কার (২৪ বলে ৪৯ রান)-এর ব্যাটে ভর করে। শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে দরকার ছিল ৬ বলে ১৯ রান। কিন্তু ভুবনেশ্বর শেষ ওভারে বল করতে এসে ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সেই ইয়ঙ্কার-এর উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের সাত রান আগেই থামিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট-এর একটা ভাল সিদ্ধান্ত হল, এ দিন, যশপ্রীত বুমরা-কে খেলানো। কারণ, হার্দিক পাণ্ড্য বা শার্দূল ঠাকুরকে মেরে দেওয়া গেলেও ভুবনেশ্বর কুমার ও বুমরাকে পাওয়ার প্লে বা স্লগ ওভারে মেরে বাইরে পাঠানো সহজ নয়। এই সময় ভুবি আর বুমরা বেশ চাপে রাখতে জানে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে। ম্যাচেও ঠিক তাই হতে দেখলাম।

যে তিন নাম এ বার ভারতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ‘প্রোটিয়া’ শিবিরে ত্রাসের সঞ্চার করেছে, সেই বিরাট কোহালি, যুজবেন্দ্র চহাল ও কুলদীপ যাদব না থাকায় শুরুতেই অনেকটা চাপমুক্ত হয়ে গিয়েছিল জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলার-রা। কিন্তু ম্যাচে তার পরিচয় পাওয়া গেল না।

ভারত সিরিজ জিতলেও এ দিন বুঝলাম, এই ভারতীয় দলের ম্যাচ জিততে গেলে বিরাট কোহালিকে দরকার। বিরাট প্লাস ভারত আর বিরাট মাইনাস ভারত-এর তফাৎ অনেকটাই। কারণ, রোহিত শর্মা বিদেশের মাটিতে কবে সফল হবে তা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। এ বারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে একটি একদিনের ম্যাচে শতরান ছাড়া আর বলার মতো কোনও পারফরম্যান্স নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার জোরে বোলার জুনিয়র ডালা কিন্তু রোহিতের দুর্বলতাগুলো বেশ ভাল মতো বুঝে নিয়েছে। এ দিনও রোহিত এলবিডব্লিউ হল ওর বলেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় রোহিত শর্মার এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণ হল, ও কখনও বলের কাছে গিয়ে খেলে না। ফলে উপমহাদেশের পিচে যেখানে বল বেশি নড়াচড়া করে না, সেখানে রোহিত সফল হবে। কিন্তু বিদেশে গেলেই সমস্যায় পড়ে যাবে। ও কোনও দিনই পিচ বা বোলার দেখে খেলে না। নিজের মতো খেলতে চায়।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০০ প্লাস রান হল প্রথমে ব্যাট করে জেতার জন্য একটা ভাল রান। কিন্তু রোহিতের ব্যর্থতার জন্য এ দিন ভারত ১৭২-৭ করেই থেমে গিয়েছে। তবে ভারতীয় ইনিংসে বলার মতো খেলল সুরেশ রায়না (২৭ বলে ৪৩)। ওর জন্যই ভারতের ইনিংস এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। কিন্তু উইকেটে গিয়ে সেট হয়ে যাওয়ার পর ওর উচিত ছিল শেষ পর্যন্ত ব্যাট করা। কিন্তু সেটা ও পারেনি। আর এখানেই বোঝা যায়, তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে রোজ বিরাট কোহালি কী বিশাল দায়িত্বটা পালন করে যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ১৭২-৭ (ধবন ৪০ বলে ৪৭ , জুনিয়র ডালা ৩-৩৫),
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬৫-৬ (ডুমিনি ৪১ বলে ৫৫, ক্রিশ্চিয়ান ইয়ঙ্কার ২৪ বলে ৪৯, ভুবনেশ্বর ২-২৪)। ভারত জয়ী ৭ রানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE