Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অস্ট্রেলিয়ার নেটে চমক এক কুলদীপ

চেন্নাইয়ে মহড়া শুরু যুযুধান দুই শক্তির, উড়বে কি বিতর্কের আগুন

বছর দু’য়েক আগে দেখেছিলেন। আর এ বার কুলদীপের দাওয়াই হিসেবে এই চায়নাম্যানকে নেটে ডেকে নেন শ্রীরাম। জিয়াসই বলছিলেন, শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ চেন্নাই পৌঁছেছেন তিনি। এবং তার পরেই সোজা নেট প্র্যাকটিসে। ঠিক কী নির্দেশ ছিল জিয়াসের ওপর? খুব সোজা। যত রকম অস্ত্র আছে, সব ব্যবহার করো

যুযুধান: চেন্নাইয়ে প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন দুই অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ, ভারতের বিরাট কোহালি। প্রথম ম্যাচ রবিবার। ছবি: পিটিআই এবং এএফপি।

যুযুধান: চেন্নাইয়ে প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন দুই অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ, ভারতের বিরাট কোহালি। প্রথম ম্যাচ রবিবার। ছবি: পিটিআই এবং এএফপি।

কৌশিক দাশ
চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

চায়ন্যামান দিয়ে চায়ন্যামান কাঁটা ওপড়ানো।

লেগ স্পিনার দিয়ে লেগ স্পিনার সামলানো।

ভারতীয় স্পিন অস্ত্রকে ভোঁতা করার জন্য ভারতীয় স্পিনারদেরই হাতিয়ার বানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর অস্ট্রেলিয়ার এই গেমপ্ল্যানের পিছনে বড়সড় অবদান আছে এক ভারতীয়রই। তিনি শ্রীধরন শ্রীরাম।

যে লেগ স্পিনারকে অস্ট্রেলীয়রা বৃহস্পতিবারের নেটে ডেকে এনেছিল ব্যাটিং প্র্যাকটিস দেওয়ার জন্য তাঁর নাম অবশ্য বেশ পরিচিত। মুরুগন অশ্বিন। আইপিএলে স্টিভ স্মিথের রাইজিং পুণে দলের এক বছরের সতীর্থ ছিলেন। এই অশ্বিনকে নিয়ে আসার পিছনে অবশ্য শ্রীরামের পাশাপাশি স্মিথের অবদানও আছে। শুক্রবার অবশ্য মুরুগন অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে ভারতের নেটে এসে বোলিং করে গেলেন। কিন্তু শ্রীরাম যে নতুন এক অস্ত্রকে তুলে এনেছেন অস্ট্রেলীয় নেটে, সে কথা শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত জানা ছিল না ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের।

আরও পড়ুন: ধবনের জায়গায় ওপেন করতে পারেন রাহানে

জিয়াস কেকে। চেন্নাইয়ের স্থানীয় বোলারও নয়। কেরল থেকে তাঁকে উড়িয়ে এনেছেন শ্রীরাম। এর্নাকুলামে স্থানীয় ক্রিকেটটা খেলেন এই বাঁ হাতি চায়নাম্যান বোলার। কিন্তু কী ভাবে তাঁকে আবিষ্কার করলেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিন পরামর্শদাতা? বুধবার টানা ঘণ্টা তিনেক প্র্যাকটিসের পরে জিয়াস আলাদা করে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘শ্রীরাম স্যার আমাকে ২০১৫ সালে দেখেছিলেন। উনি তখন দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে প্লেয়ার স্কাউট করছিলেন। কেরলে গিয়ে আমার বোলিং দেখেন। তখনই আমাকে ওঁর পছন্দ হয়ে যায়। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস টিমে ডেকে নেন।’’

বছর দু’য়েক আগে দেখেছিলেন। আর এ বার কুলদীপের দাওয়াই হিসেবে এই চায়নাম্যানকে নেটে ডেকে নেন শ্রীরাম। জিয়াসই বলছিলেন, শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ চেন্নাই পৌঁছেছেন তিনি। এবং তার পরেই সোজা নেট প্র্যাকটিসে। ঠিক কী নির্দেশ ছিল জিয়াসের ওপর? খুব সোজা। যত রকম অস্ত্র আছে, সব ব্যবহার করো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের ওপর। জিয়াসের কথায়, ‘‘শ্রীরাম স্যার আমাকে ডেলিভারির মাঝে এসে বলছিলেন, এ বার ফ্লিপার মারো। এ বার উল্টোটা দাও। যত পারো বোলিংয়ে বৈচিত্র আনো। আমি কম করে ১২-১৪ ওভার টানা বল করে গিয়েছি নেটে।’’ আপনি কি জানেন কুলদীপ যাদবকে খেলার কায়দা রপ্ত করার জন্য অস্ট্রেলিয়া ডেকে এনেছে আপনাকে? হেসে ফেলেন জিয়াস। ‘‘আমি জানি সেটা। কুলদীপের বোলিং আমি দেখেছি। শ্রীরাম স্যার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের বলেছেন, এই ছেলেটা কুলদীপের মতো বল করে। ওকে ঠিকমতো খেলো। অস্ট্রেলিয়ার সব ব্যাটসম্যানই আমাকে খুব মনযোগ দিয়ে নেটে খেলেছে।’’

চায়নাম্যান খেলা বিদেশিদের কতটা রপ্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে? সবাই যে খুব ভাল খেলেছে, তা বলছেন না জিয়াস। বার চারেক অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের আউটও করেছেন তিনি। যার মধ্যে আছে বোর্ড প্রেসি়ডেন্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে জেতানোর নায়ক মার্কাস স্টয়নিসও। তবে এক জন ব্যাটসম্যানকে বেশ মনে ধরেছে বছর পঁচিশেক বয়সের এই চায়নাম্যানের। যাঁকে চায়নাম্যানের সামনে অসহায় মনে হয়নি। কে ওই ব্যাটসম্যান? ‘‘জেমস ফকনার,’’ বলে দিলেন জিয়াস, ‘‘আমাকে খুব ভাল বুঝে যাচ্ছিল। ফ্লিপার হোক বা উল্টোটা, ঠিক পিক করে টং টং মেরে দিচ্ছিল।’’

রিস্ট স্পিনারদের বুঝতে পারা যে কতটা কঠিন, সেটা বলছিলেন রোহিত শর্মাও। শুক্রবার নেট প্র্যাকটিসে নামার আগে রোহিত বলে গেলেন, ‘‘রিস্ট স্পিনার দলে থাকা মানে সব সময় একটা বাড়তি সুবিধে। যে কোনও সময় উইকেট তুলে নিতে পারে ওরা। আমরা নেটেও কুলদীপ বা চহালের বল মাঝে মাঝে ঠিক করে ধরতে পারি না।’’

এই ধরানোর কাজটাই এখন করছেন শ্রীরাম। কুলদীপের জন্য জিয়াস হলে যুজবেন্দ্র চহালের জন্য অন্য এক অশ্বিন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দলে তো অ্যাডাম জাম্পার মতো রিস্ট স্পিনারও আছে। তা হলে মুরুগানের কী প্রয়োজন? জানা যাচ্ছে, শ্রীরাম এবং স্মিথ মনে করেন, চহাল একটু জোরের ওপর লেগ স্পিনটা করান, যা জাম্পার থেকে পাওয়া যায় না। কিন্তু মুরুগনকে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছেন, তাঁর বোলিং স্টাইলটা অনেকটাই চহালের মতো। তাই চেন্নাইয়ের এই স্পিনারকে নিয়ে আসা নেট প্র্যাকটিসে। কিন্তু এক দিনের মধ্যে হঠাৎ শিবির বদল? সন্ধ্যায় প্র্যাকটিস শেষে মুরুগন বলে গেলেন, ‘‘টিএনসিএ থেকে আমাদের বলে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে এসে বল করতে। আজ অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন হয়নি। তাই ভারতের নেটে ছিলাম।’’

অস্ট্রেলিয়া যে লেগ স্পিনের পাঠ এক দিন আগেই নিয়ে ফেলেছে। শুক্রবার ছিল চায়নাম্যানের ক্লাস। শনিবার অস্ট্রেলিয়া নেটে আসবেন জিয়াস। ওদিকে আবার ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চের জায়গায় উড়িয়ে আনা হচ্ছে পিটার হ্যান্ডসকম্বকে।

সিরিজের ফল যাই হোক না কেন, অস্ট্রেলিয়া কিন্তু ভাল হোমওয়ার্ক করেই মাঠে নামছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE