Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বর্ধিত টাকার সঙ্গে চুক্তিতে বোনাসও চাইছেন ধোনিরা

অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারদের মতো এখনই সিরিজ বয়কটের শিঙা ফোঁকাফুঁকি শুরু হয়নি। কিন্তু চুক্তির অর্থ নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মতভেদের চোরাস্রোত বইতে শুরু করে দিয়েছে।

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০৩:৪৮
Share: Save:

অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারদের মতো এখনই সিরিজ বয়কটের শিঙা ফোঁকাফুঁকি শুরু হয়নি। কিন্তু চুক্তির অর্থ নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মতভেদের চোরাস্রোত বইতে শুরু করে দিয়েছে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে প্রস্তুতির মধ্যেই তাঁদের বার্ষিক চুক্তির অর্থ নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে কথা চলছে বিরাট কোহালিদের। রবিবার আইপিএল ফাইনালের দিনেই হায়দরাবাদে আবার বৈঠক হল। কিন্তু কথাবার্তা চললেও দু’পক্ষ এখনও এক জায়গায় আসতে পারেনি।

যতদূর ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, খুব বন্ধুত্বপূর্ণ কথাবার্তা হচ্ছে, জোর দিয়ে সেটাও বলা যাবে না। ক্রিকেটারেরা মনে করছেন, তাঁদের প্রাপ্য অনুযায়ী টাকা তাঁরা বোর্ড থেকে পাচ্ছেন না। তাঁদের এই বক্তব্য সোজাসাপ্টা ভাবে তাঁরা বোর্ড কর্তাদের জানিয়েও দিয়েছেন। এ বছরেই সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষকরা এসে ক্রিকেটারদের চুক্তির অর্থ বাড়িয়েছিলেন। সর্বোচ্চ ‘এ’ গ্রেডে থাকা ধোনি, কোহালিদের বার্ষিক ‘রিটেনার ফি’ এখন বাড়িয়ে এক কোটি থেকে দু’কোটি টাকা করা হয়েছে। ‘বি’ গ্রেডে থাকা ক্রিকেটারেরা পঞ্চাশ লক্ষের জায়গায় পাচ্ছেন এক কোটি। ‘সি’ গ্রেড পাচ্ছে ২৫ লক্ষের জায়গায় ৫০ লক্ষ।

কিন্তু বিশেষ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটারেরা মনে করছেন, বর্ধিত টাকাটাও তাঁদের প্রাপ্যের তুলনায় অনেকই কম। জাতীয় দলের ক্রিকেটারেরা বোর্ডকে সাফ বলে দিয়েছেন, দু’কোটির এই ‘রিটেনার ফি’ তাঁরা গ্রহণ করতে পারছেন না। রবিবার রাতেও জানা গেল, ক্রিকেটারেরা তাঁদের পূর্ব সিদ্ধান্তে অনড়। দু’কোটির চুক্তি তাঁরা কিছুতেই গ্রহণ করবেন না।

আরও পড়ুন: শেষ ওভার নিজে এসে চেয়ে নেন জনসন

রবিবার হায়দরাবাদে আইপিএল ফাইনালের দিন বোর্ডের পদাধিকারী এবং সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক হল এ নিয়ে। ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ভারতীয় দলের হেড কোচ অনিল কুম্বলে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন কুম্বলে। জানা গিয়েছে, সেই প্রেজেন্টেশনে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের ‘রিটেনার ফি’ সম্পর্কে আলোকপাত করে দেখানো হয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেটারেরা অনেকই কম টাকা পাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ বা ডেভিড ওয়ার্নার, ইংল্যান্ডের জো রুটের চুক্তির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, এঁরা ভারতীয় মুদ্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা ‘রিটেনার ফি’ পাচ্ছেন তাঁদের বোর্ড থেকে। বিরাট কোহালি বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো সেরা ভারতীয় তারকাদের ২ কোটি ‘রিটেনার ফি’-র চেয়ে যা প্রায় চার গুণ বেশি।

ধোনি বা কোহালি এর পরেও যে বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেটার, তার পিছনে তাঁদের বোর্ডের কোনও ভূমিকা নেই। ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন বা স্পনসরশিপ থেকে রোজগার করা অর্থের জোরেই তাঁরা ধনীতম খেলোয়াড়দের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন। কুম্বলের প্রেজেন্টেশনে বলা হয়েছে, অন্তত স্মিথ বা রুটের সমান অর্থ পাওয়া উচিত ভারতের সেরা তারকাদের। শতকরা কত হারে টাকা বাড়ানো উচিত প্রত্যেকটি গ্রেডের এবং ঘরোয়া ক্রিকেটারদের, সেটাও প্রেজেন্টেশনে বলেছেন কুম্বলে।

এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় ক্রিকেটারেরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, অন্যান্য বোর্ড তাদের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়। যেমন পারফরম্যান্স বোনাসের ব্যবস্থা আছে। বড় কোনও সিরিজ বা টুর্নামেন্ট জিতলেই সেই বোনাস পান স্টিভ স্মিথ বা জো রুট-রা। ভারতীয় ক্রিকেটারদের চুক্তিতে কোনও বোনাসের উল্লেখ নেই। কোনও বড় টুর্নামেন্ট বা সিরিজ জিতলে বোর্ড কিছু পুরস্কার অর্থ ঘোষণা করা হয়। ক্রিকেটারেরা চান, বোনাসের বিষয়টিও লিখিত ভাবে চুক্তিতে উল্লেখ করা থাকুক।

দেশের মাঠে জিতলে এক রকম বোনাস থাকুক, বিদেশে জিতলে বেশি বোনাস। সেই দাবিও জানানো হয়েছে। সর্বোচ্চ মানের আইসিসি ইভেন্ট অর্থাৎ বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো টুর্নামেন্ট জিতলে সর্বোচ্চ বোনাস দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত বলেও কুম্বলের মাধ্যমে জানিয়েছেন ক্রিকেটারেরা। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে মোটা অর্থের ‘ক্যাপ্টেন বোনাস’ দেয়। ভারতে ধোনি বা কোহালি কখনও যা পাননি।

সেটা এখনই চালু না হলেও ফর্ম্যাট অনুযায়ী চুক্তির ওপর জোর দিচ্ছেন ক্রিকেটারেরা। একটি লাল বলের চুক্তি। অন্যটি সাদা বলের চুক্তি। চেতেশ্বর পূজারা টেস্টেই শুধু খেলেন। সাদা বলের সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলেন না। তেমনই ধোনি এখন শুধুই সীমিত ওভারে খেলেন। আবার কোহালি বা অশ্বিন দু’ধরনের ক্রিকেটই খেলেন। তাই ফর্ম্যাট অনুযায়ী চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

অনেক দেশের ক্রিকেট বোর্ড শুধু ক্রিকেটারদেরই দৈনিক ভাতা দেয় না, তাঁদের স্ত্রী বা পরিবার সফরসঙ্গী হলে তাঁদেরও দৈনিক ভাতা দেয়। ভারতীয় বোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট সংস্থা হলেও ধোনিদের পরিবারের সদস্যদের জন্য দৈনিক ভাতা কখনও চালু করেনি। উল্টে পরিবারের হোটেল খরচ কেন বেড়ে গিয়েছে, তা নিয়ে অতীতে কয়েক বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যা ইঙ্গিত, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর চুক্তি নিয়ে এসপার-ওসপার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Grade-A players Senior Cricketers BCCI Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE