Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
পাহাড়ে লাকমলদের সামনে বিপর্যয়, ৩০ ওভার বাকি থাকতেই হার

‘বল নড়লে পা নড়ে না রোহিতদের’

ধর্মশালার মাঠে এই সময় সকালের দিকে হাওয়া দেয়। পিচে স্বল্প ঘাস আর আর্দ্রতা ছাড়া কোনও জুজু ছিল না। এই পরিস্থিতিতে রোহিতের দলের রণনীতি হতে পারত—প্রথম এক ঘণ্টা বোলারকে দাও।

হর্ষবিষাদ: আউট হয়ে ফিরছেন শিখর,রোহিত-রা। ছবি: পিটিআই

হর্ষবিষাদ: আউট হয়ে ফিরছেন শিখর,রোহিত-রা। ছবি: পিটিআই

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৪১
Share: Save:

যুগের সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে ক্রিকেটাররাও। রবিবার ধর্মশালায় শ্রীলঙ্কার-ভারত প্রথম একদিনের ম্যাচটা দেখে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া এটাই।

আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন টেকনিককে প্রাধান্য দিতাম। কিন্তু এখনকার বেশির ভাগ ক্রিকেটার যে টেকনিকের ধার-কাছ দিয়ে খুব একটা যেতে চায় না তা এ দিন শ্রীলঙ্কার কাছে ভারতের ৭ উইকেটে হার দেখে আরও ভাল বুঝতে পারলাম। তাও আবার ১৭৬ বল বাকি থাকতে।

সানি (সুনীল গাওস্কর), জিমি (মোহিন্দার অমরনাথ)-দের খুব কাছ থেকে দেখেছি। ওরা পাটা উইকেটে তো সাবলীল ভাবে খেলতই। আবার যে সব পিচে বল ‘মুভ’ করছে, সেই ধরনের পিচেও একই ছন্দে খেলে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়া বদলে গিয়েছে যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। একদিনের ক্রিকেটের সঙ্গে এখন জুড়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। আর তাতেই দফারফা হয়ে গিয়েছে ব্যাটসম্যানদের টেকনিক।

সানি, জিমি, ভিশিরা (গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ) টি-টোয়েন্টি খেলেনি। কিন্তু সচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণরা খেলেছে। এখন বিরাট কোহালি খেলছে। কিন্তু এরা টেকনিকে মরচে পড়তে দেয়নি। বল নড়লে এদের পা-ও নড়ে ঠিকঠাক। তাই পাটা পিচেও যেমন ওরা রান পেয়েছে, তেমনই পিচে বল নড়াচড়া করলেও ওদের খেলতে অসুবিধা হয় নি। পরিবেশ ও পিচ বুঝে খেলতে দেখেছি এই নামগুলোকে। কারণ, সানি, সচিন, দ্রাবিড়, বিরাটদের ঘরানা সব ধরনের পিচেই বল যেখানে পড়ছে সেখানে গিয়েই কেবল মারে না। যেখানে বল দিনের শুরু থেকেই নড়াচড়া করছে, সেখানে ওরা বলের জন্য অপেক্ষা করত। বল শরীরের কাছে আসার পর খেলত।

লাকমল-কে ঘিরে উল্লাস। ছবি: এএফপি

কিন্তু শিখর ধবন, রোহিত শর্মা, মণীশ পাণ্ডের সেই টেকনিক নেই। ওদের আবার বল নড়লে পা নড়ে না। ওরা যেখানে বল পড়ছে সেখানে গিয়েই মারতে শিখেছে। কিন্তু পিছিয়ে এসেও যে খেলা যায়, তা বোধহয় ওরা করতে চায় না। যদি জানত তা হলে ১৬ ওভারের মধ্যে ২৯ রানে সাত উইকেট চলে যাওয়া দেখতে হতো না রবিবার।

একে বিরাট কোহালি একদিনের সিরিজে নেই। তার উপর ভারতীয় টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতা। ফলে যে শ্রীলঙ্কাকে ওদের দেশে গিয়ে ভারত ৯-০ হারিয়ে এসেছিল সব ধরনের ক্রিকেটে, তাদের কাছেই হারতে হল একদম পর্যুদস্ত হয়ে। যারা শেষ বারোটি একদিনের ম্যাচ জেতেনি। তাদেরই সুরঙ্গা লাকমল (১০-৪-১৩-৪) এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ (৫-২-৮-১)-এর বলের হদিশ না পেয়ে পর্যুদস্ত হতে দেখলাম রোহিত শর্মার দলকে।

ধর্মশালার মাঠে এই সময় সকালের দিকে হাওয়া দেয়। পিচে স্বল্প ঘাস আর আর্দ্রতা ছাড়া কোনও জুজু ছিল না। এই পরিস্থিতিতে রোহিতের দলের রণনীতি হতে পারত—প্রথম এক ঘণ্টা বোলারকে দাও। বাকি সময়টা তোমার। কারণ নতুন বলের পালিশ উঠে গেলে, আর বোলার ক্লান্ত হয়ে পড়লে পাল্টা আক্রমণ করা যাবে। কিন্তু সেটা করতে গেলে ব্যাটসম্যানের টেকনিক পোক্ত হওয়া চাই। এদের কমতি সেই জায়গাতেই। তাই দু’ঘণ্টার মধ্যে ১১২ রানে শেষ হয়ে গেল ভারতীয় ইনিংস। ঘণ্টাখানেক খেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধর্মশালার ২২ গজও যে সহজ হয়ে আসছিল তা ধোনি (৬৫) এবং কুলদীপ যাদবের (১৯) ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।

আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্মের টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন মঞ্জরেকরের

আসলে কারণটা লুকিয়ে আছে সেই আগের ঘরানার শিক্ষায়। আগে টেস্ট ম্যাচ বেশি খেলা হতো। তাই ব্যাটসম্যানের মানসিকতাও থাকত ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকার। রোহিত-শিখর-মণীশ-দীনেশরা তিন-চার ঘণ্টায় একশো রান করার ক্রিকেট প্রজন্মের সদস্য। তাই এ দিন সেই রাস্তায় হাঁটতে দেখলাম না ওদের।

আরও অবাক হলাম, অজিঙ্ক রাহানে-কে দলে না দেখে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ওর ম্যাচ প্র্যাকটিস দরকার। আর দীনেশ কার্তিক-ই বা কেন চার নম্বরে ব্যাট করতে এল তা-ও বুঝতে পারলাম না। বয়সে ও প্রায় ধোনির সমসাময়িক। এই মুহূর্তে ওর কাছ থেকে আর কিছু পাওয়ার নেই। বরং নতুনদের সুযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।

দরজায় কড়া নাড়ছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। এ মাসের শেষের দিকেই দলবল নিয়ে বিরাট কোহালিরা উড়ে যাবে সে দেশে। তাই অনেকেই ধর্মশালায় এ দিন ভারতের পারফরম্যান্স দেখে দক্ষিণ আফ্রিকায় ডেল স্টেইন, মর্নি মর্কেলদের সামনে কী হবে তা নিয়ে আশঙ্কিত। আমি বলব, ডারবান বাদে দক্ষিণ আফ্রিকায় সে ভাবে সমস্যা না হওয়ারই কথা। কারণ বাকি জায়গাগুলোতে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হতে পারে বলেই আমার ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE