Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ব মঞ্চেও আইপিএল আলোড়ন

ভারতীয় ক্রিকেটের সোনার রাজহাঁস বলা হয় আইপিএল-কে। এই টুর্নামেন্টে বিনিয়োগকারীরা যে ভাবে অর্থ ঢালছেন, তা দেখার পর এটাকে আর অত্যুক্তি বলা যাবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০৫:৩৪
Share: Save:

ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসেই শুধু বিপ্লব ঘটিয়ে থেমে থাকছে না আইপিএল। বিশ্ব মানচিত্রেও জায়গা করে নিতে শুরু করেছে ভারতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যার নামকরণ হতেই পারে কৌন বনেগা ক্রোড়পতি টুর্নামেন্ট।

এমনই আকাশছোঁয়া অর্থে আইপিএলের স্পনসরশিপ কেনা হয়েছে এ বার, যা সারা বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় সব খেলার লিগ বা ইভেন্টের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার যোগ্য। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমনকী, খুবই জনপ্রিয় এবং বিশ্বের সেরা লিগকে পিছনেও ফেলে দিচ্ছে আইপিএল।

ভারতীয় ক্রিকেটের সোনার রাজহাঁস বলা হয় আইপিএল-কে। এই টুর্নামেন্টে বিনিয়োগকারীরা যে ভাবে অর্থ ঢালছেন, তা দেখার পর এটাকে আর অত্যুক্তি বলা যাবে না। এ বারেই চিনা মোবাইল সংস্থা ‘ভিভো’ আইপিএলের টাইটেল স্পনসরশিপ কিনেছে। তারা পাঁচ বছরের জন্য দিচ্ছে ২১৯৯ কোটি। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা।

ভারতে অনেক দিন ধরেই সব চেয়ে ধনী খেলা ক্রিকেট। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা এই খেলার তারকাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি আয় করেন। বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ড বিরাট কোহালিদের দেশের বোর্ড। কয়েক বছর আগেও ফোর্বসের বিশ্বব্যাপী ধনীতম খেলোয়াড়দের তালিকায় ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এখন প্রথম একশো জনের মধ্যে আছেন কোহালি।

আরও পড়ুন: আমেরিকার জাতীয় ক্রিকেট দলে তেলঙ্গনার মেয়ে সিন্ধুজা

কিন্তু তাতেও এ বারের আইপিএল স্পনসরশিপের অর্থ দেখে অনেকের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা হয়েছে। তার কারণ হচ্ছে, গত বারের চেয়ে প্রায় ৪৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে স্পনসরশিপ অর্থে। যা খেলার ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিশ্বের সব চেয়ে ধনী লিগ ধরা হয় এনবিএ-কে। বাস্কেটবলের বহুল জনপ্রিয় এই লিগেও স্পনসরশিপ অর্থে এমন বৃদ্ধি দেখা যায়নি। ২০১৫ সালেই খেলার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক একটি সংস্থা এনবিএ-র সঙ্গে নতুন করে আট বছরের জন্য চুক্তি করেছিল। সেখানে স্পনসরশিপ অর্থ আইপিএলের চেয়ে বেশি হলেও (উপরের চার্টে দেখুন) শেষ বারের চেয়ে বৃদ্ধির হার ছিল ২৪৫ শতাংশ বেশি। এ বারে আইপিএলে স্পনসরশিপ অর্থের বৃদ্ধির হার তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

এনবিএ: একটি ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা এই চুক্তি করেছে জনপ্রিয় বাস্কেটবল লিগের সঙ্গে। যেখানে মাইকেল জর্ডান, কোবে ব্রায়ান্টের মতো তারকারা খেলেছেন। বিশ্ব জুড়ে যাঁদের ভক্তরা রয়েছেন।

অলিম্পিক্স: চার বছরের ব্যবধানে হলেও অলিম্পিক্সে স্পনসর অর্থের পরিমাণ আকাশছোঁয়া। লন্ডন অলিম্পিক্সে প্রথম আর্থিক বিপ্লব ঘটে। কেউ খোলসা না করলেও অলিম্পিক্সের প্রধান স্পনসর অন্তত ৬৫০ কোটি টাকা খরচ করে।

এনএফএল: ন্যাশনাল ফুটবল লিগ বা এনএফএল হচ্ছে আমেরিকান ফুটবলের পেশাদার লিগ। যা মার্কিন মুলুকে খুবই জনপ্রিয়। তবে এনএফএল চলছে অনেক বছর ধরে। আইপিএলের বয়স দশ।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে সব চেয়ে আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় এই লিগ। যে টুর্নামেন্ট এ বারেও জিতল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদ। আইপিএল কিন্তু প্রায় ধরে ফেলেছে প্রধান স্পনসরের অর্থের দিক থেকে।

আইপিএল: এ বারের টাইটেল স্পনসরশিপ অর্থ সব রেকর্ডই ভেঙে দিচ্ছে। পাঁচ বছরের জন্য চিনা মোবাইল সংস্থা ‘ভিভো’ দিয়েছে ২১৯৯ কোটি। যার ফলে বিশ্বের সেরা অনেক লিগের পাশে এখন কোহালিরা

ইপিএল: ওয়েন রুনিদের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এখন টাইটেল স্পনসরশিপের রেওয়াজ বন্ধ হওয়ার দিকে। শেষ বার বার্কলে-র দেওয়া অর্থকে ছাড়িয়ে গিয়েছে এ বারের আইপিএল স্পনসরশিপ।

লা লিগা : লিও মেসিদের স্প্যানিশ লিগের চেয়েও এগিয়ে থাকছে আইপিএল। তবে ইপিএল বা লা লিগার টিভি স্বত্ব থেকে আয় অনেক বেশি। সহ-স্পনসরের সংখ্যাও বেশি। সব মিলিয়ে আয়ে অবশ্যই এগিয়ে লা লিগা

বাস্কেটবল লিগের থেকে পিছিয়ে থাকলেও টাইটেল স্পনসরশিপের অর্থের দিক থেকে ওয়েন রুনিদের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বা লিও মেসিদের লা লিগাকে টেক্কা দিতে শুরু করে দিয়েছে আইপিএল। শুধুমাত্র প্রধান স্পনসরশিপের অর্থ দেখলে আইপিএল এখন বিদেশি অনেক লিগের চেয়েও এগিয়ে। যদিও রুনি বা মেসিদের লিগে এখন টাইটেল স্পনসরের ধারণাটাই উঠে যাচ্ছে। একাধিক স্পনসরের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। এতে আরও বেশি করে অর্থ ঢুকছে ইপিএল বা লা লিগার কোষাগারে। টিভি স্বত্বের দিক থেকে আইপিএল আকাশছোঁয়া চুক্তি করলেও ইপিএল বা লা লিগা এখনও অনেক এগিয়ে।

তবে মাত্র দশ বছরের মধ্যে আইপিএল যে বৃদ্ধির লক্ষণ দেখাচ্ছে, তাতে বিশ্বের সেরা লিগগুলোর সঙ্গে অবশ্যই পাল্লা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইপিএল বা লা লিগার মতো আইপিএলের দলগুলিকে বহুল লাভজনক সংস্থায় পরিণত করার সময় আসছে। ইপিএলে সব চেয়ে লাভজনক ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রধান স্পনসরশিপ অর্থের পরিমাণ বছরে পাঁচশো কোটি টাকার আশেপাশে। যা ফুটবল দুনিয়ায় একটি ক্লাবের জন্য রেকর্ড। আইপিএলের বার্ষিক টাইটেল স্পনসরশিপ চুক্তির চেয়েও যা বেশি। এ রকম আকাশছোঁয়া দাম এখনও তৈরি হয়নি আইপিএল ক্লাবগুলির।

অলিম্পিক্সের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল লন্ডন। চার বছরে এক বার ইউসেইন বোল্টদের দৌড় দেখার সুযোগ আসত আর তা দেখার জন্য ক্রীড়াপ্রেমীরা মুখিয়ে থাকতেন। টোকিও অলিম্পিক্সের জন্য যেমন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থার হাতে ২৫টিরও বেশি স্পনসর রয়েছে। নানা বিভাগও রয়েছে স্পনসরশিপের। সর্বোচ্চ বিভাগ হচ্ছে ওয়ার্ল্ডওয়াইড পার্টনার্‌স। এ রকম পার্টনার অলিম্পিক সংস্থার হাতে ১৩টি আছে। সর্বোচ্চ সাড়ে ছ’শো কোটি টাকা বার্ষিক চুক্তি হতে পারে এই সব সংস্থার সঙ্গে অলিম্পিক কমিটির

তেমনই রমরমা ফুটবলেরও। পরের ফুটবল বিশ্বকাপ হবে রাশিয়ায়। সেখানে ফিফা আনছে ৩৪টি স্পনসর। তার মধ্যে কিছু স্পসনরের জায়গা এখনও ফাঁকা রয়েছে। ফিফার লক্ষ্য, রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে রেকর্ড অর্থ তুলে আগের বারের ঘাটতি মেটানো। ঘটনা হচ্ছে, ক্রিকেট কখনওই ফুটবল বিশ্বকাপ বা অলিম্পিক্সের সঙ্গে তুলনীয় নয়। কোহালিদের খেলার বিশ্বায়নই ঘটেনি মেসি বা রোনাল্ডো বা বোল্টদের খেলার মতো। ক্রিকেট খেলে মেরেকেটে পনেরোটি দেশ। তার মধ্যেও আইপিএল হচ্ছে একটি দেশের একটি ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। কিন্তু ভারতের এই টি-টোয়েন্টি শিশুই এখন বিশ্বের বড় বড় খেলার দৈত্যদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দিয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE