Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

যত কাণ্ড সেই পিচকে ঘিরেই

টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই যে ভাবে কয়েকটি বল বেমক্কা লাফিয়েছে, তাতে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেঞ্চুরিয়নের মতো অসমান বাউন্স এখানে নেই। বল এখনও খুব নিচু হয়ে যাচ্ছে না।

বিধ্বংসী: পাঁচ উইকেট নিয়ে একাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলে দেওয়ার পরে যশপ্রীত বুমরাকে অভিনন্দন বিরাট কোহালির। এপি

বিধ্বংসী: পাঁচ উইকেট নিয়ে একাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলে দেওয়ার পরে যশপ্রীত বুমরাকে অভিনন্দন বিরাট কোহালির। এপি

সুমিত ঘোষ
জোহানেসবার্গ শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেট মহল দেখার অপেক্ষায়, শুক্রবার দারুণ ব্যাট করে তৃতীয় টেস্ট জেতার মতো পরিস্থিতি বিরাট কোহালি-রা গড়ে তুলতে পারেন কি না। আর বিশ্বের ক্রিকেটমহলের কাছে সব চেয়ে বড় কৌতূহল হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ওয়ান্ডারার্সের বাইশ গজ। সত্যিই কি তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযুক্ত? এমন প্রশ্ন উঠে পড়েছে।

টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই যে ভাবে কয়েকটি বল বেমক্কা লাফিয়েছে, তাতে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেঞ্চুরিয়নের মতো অসমান বাউন্স এখানে নেই। বল এখনও খুব নিচু হয়ে যাচ্ছে না। কিন্তু ওয়ান্ডারার্সের উইকেটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বড় বড় ফাটল তৈরি হয়ে যায়। যত খেলা এগোবে, যদি কড়া রোদ্দুর উঠতে থাকে তা হলে এই ফাটলগুলো বড় হতে থাকবে। আর ততই বিপজ্জনক হবে ব্যাটিং করা। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই ফাটল এত বড় ভূমিকা নিতে শুরু করলে সেটাকে আন্তর্জাতিক স্তরের উইকেট বলা হবে কেন?

এখানকার উইকেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফাটলে বল পড়লে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। বিদ্যুৎ গতিতে ছুটতে পারে, অপ্রত্যাশিত ভাবে বাঁক নিতে পারে, বাড়তি বাউন্স নিয়ে ছোবল মারতে আসতে পারে। বৃহস্পতিবার টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই ফাটলের খেল্ অনেক বার ব্যাটসম্যানদের বেসামাল করে দিয়েছে। হাসিম আমলার পাঁজরে লাগল। তাঁকে শুশ্রূষা নিতে হল, সম্ভবত পেনকিলারও খেতে হল। ভার্নন ফিল্যান্ডারের আঙুলে লাগল। মর্নি মর্কেলের একাধিক বার লাগল। ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে পার্থিব পটেল-কে দিয়ে ওপেন করিয়েছে। পার্থিব ব্যাট করার সময়েও একটা বল ফাটলে পড়ে আশ্চর্যজনক ভাবে লাফিয়ে তাঁর গ্লাভস ছুঁয়ে স্লিপের উপর দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দ্বিতীয় দিনেই যদি পিচের এই অবস্থা হয়, চতুর্থ বা পঞ্চম দিন পর্যন্ত খেলা গড়ালে কী হাল হতে পারে!

ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় সুনীল গাওস্কর তীব্র সমালোচনা করলেন ওয়ান্ডারার্সের বাইশ গজের। বলেছেন, ঘূর্ণি বানালে যদি খারাপ উইকেট হয়, তা হলে এটাই বা কী করে ভাল পিচ হল? এই পিচেও তো অপ্রত্যাশিত বাউন্স রয়েছে। মাঝেমধ্যে বিপজ্জনক ভাবে বল লাফাচ্ছে। আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে, কয়েকটা বল একই সঙ্গে এক্সপ্রেস গতিতে ছুটে লাফানোর সঙ্গে সঙ্গে এলোমেলো বাঁকও নিচ্ছে।

সেঞ্চুরিয়নে মাইকেল হোল্ডিং প্রশ্ন তুলেছিলেন পিচ নিয়ে। বলেছিলেন, দেখতে চান আইসিসি সেঞ্চুরিয়নের পিচকে ‘পুওর’ রেটিং দেয় কি না। এখানে একই কথা বলেছেন গাওস্কর যে, আইসিসি এই পিচকে কী রেটিং দেয়, সেটা তিনি দেখার অপেক্ষায় আছেন। গত কাল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-ও টুইট করেন পিচ নিয়ে। সৌরভ লেখেন, তাঁর নিউজিল্যান্ড সফরের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যেখানে আড়াই-তিন দিনে খেলা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এমনই বিপজ্জনক ঘাসের পিচ ছিল সেখানে। সৌরভও দাবি তুলেছেন, আইসিসি-র উচিত ওয়ান্ডারার্সের পিচ নিয়ে হস্তক্ষেপ করা। ক্রিকেটে একটা সাধারণ মত প্রচলিত আছে যে, উপমহাদেশের ঘূর্ণি পিচ মানেই তা আইসিসি-র খাতায় ‘পুওর’ আখ্যা পাবে। অথচ, বিদেশের মাঠে সবুজে ভরা বিপজ্জনক পিচ হলে তা নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট জমা পড়ে না। ২০১০-১১ মরসুমে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত যখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসে, ডারবানে এ রকমই পিচ হয়েছিল। তিন দিনে শেষ হয়ে যাওয়া টেস্ট জিতেছিল ভারতই। যদিও সেই পিচ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডকে কোনও কথা শুনতে হয়নি আইসিসি-র থেকে। মাইকেল হোল্ডিং নিজে নির্মম এক ফাস্ট বোলার ছিলেন। ব্যাটসম্যানদের প্রতি কখনও দয়ামায়া দেখিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। তিনিও মানছেন, অসমান বাউন্স বা ফাটলওয়ালা পিচ নিয়েও কড়া হওয়া উচিত ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার। ঘূর্ণি যদি খারাপ উইকেট আখ্যা পায়, তা হলে বিপজ্জনক কোনও ফাস্ট পিচ নিয়েই বা কেন কড়া হবে না আইসিসি? পাল্টা প্রশ্ন উঠে পড়েছে ওয়ান্ডারার্সে।

আর মাঠের লড়াইয়ের মতোই পিচ নিয়ে তরজা পৌঁছে গিয়েছে কমেন্ট্রি বক্সেও। গাওস্কর যেমন দাবি তুলেছেন,আইসিসি-র উচিত পিচ নিয়ে হস্তক্ষেপ করা, তেমনই আবার কেপলার ওয়েসেলস তাঁর দেশের বাইশ গজকে সমর্থন করতে এগিয়ে এসেছেন। ওয়ান্ডারার্সের পিচ কি খুব বেশি মাত্রায় পেস বোলারদের পক্ষে? জিজ্ঞেস করায় ওয়েসেলস বলে গেলেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকায় এলে এটুকু তো আশা করাই হবে। এখানকার পিচে তো বল বেশি জোরে যায়, বল বেশি লাফায়।’’

ওয়েসেলস যতই তাঁর দেশের পিচের পক্ষে সওয়াল করুন, এই টেস্ট শেষে বাইশ গজ নিয়ে তুলকালাম হলে অবাক হওয়ার নেই। ওয়েসেলসের দেশের হাসিম আমলা-ই যে দিনের শেষে বলে গেলেন, ‘‘আমি এ রকম কঠিন পিচ কখনও দেখিনি।’’ শন পোলকও বাইশ গজের সমালোচনা করেছেন। এ বার আইসিসি কী করে, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE