সচিনের মনে হচ্ছে, রুট সম্ভবত ধরে ফেলেছেন কী করে ভারতীয় রহস্য স্পিনারকে খেলতে হবে।
বিরাট কোহালিদের বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজের আগে জো রুটের হাতেই মোক্ষম অস্ত্র এসে গিয়ে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে সচিন তেন্ডুলকরের। কী সেই অস্ত্র? না, চায়নাম্যান স্পিনার কুলদীপ যাদবকে কী করে খেলতে হবে।
ইংল্যান্ডে শুরুর দিকে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে সিরিজে কুলদীপকে একেবারেই কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানেরা। কিন্তু শেষ দু’টি ওয়ান ডে ম্যাচে রুট এবং অইন মর্গ্যান ভাল ভাবেই কুলদীপকে খেলে দিয়েছেন। যা দেখে সচিনের মনে হচ্ছে, রুট সম্ভবত ধরে ফেলেছেন কী করে ভারতীয় রহস্য স্পিনারকে খেলতে হবে। আর এই পরিবর্তন প্রভাব ফেলতেই পারে ১ অগস্ট থেকে শুরু টেস্ট সিরিজে।
লম্বা বিশ্লেষণ সহকারে সচিন বলছেন, ‘‘টিভি-তে আমি যা দেখেছি, রুট কিন্তু কুলদীপকে হাত দেখেই পড়ে নিতে পারছিল। এ ব্যাপারে ও সফল হয়েছিল, বলতেই হবে। কুলদীপের কব্জির মোচড়ে বোলিং অ্যাকশন বুঝতে পারা মোটেও সহজ কাজ নয়।’’ বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সচিন। তিনি নিজে সব চেয়ে ভাল বোলারের হাত দেখে খেলতে পারতেন। বলে চলেন, ‘‘ওর বল পিচে পড়ার পর কী রকম আচরণ করবে, বিশ্বের অনেক ব্যাটসম্যানই বুঝতে পারে না। কিন্তু রুট খুব দেরিতে কুলদীপকে খেলছিল। সেটা ও করতে পারছিল কারণ ও কুলদীপের কব্জি দেখে আগে থেকেই ধরতে পারছিল, কী ধরনের বল আসতে চলেছে।’’
রুটের এই কুলদীপের রহস্য উন্মোচন করে ফেলা কি ভারতের জন্য অশনি সঙ্কেত? প্রশ্ন করায় সচিন অবশ্য এই উদ্বেগের সঙ্গে সহমত হচ্ছেন না। বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমার মনে হয় না ইংল্যান্ডের অন্য ব্যাটসম্যানরা এখনও খুব ভাল ভাবে কুলদীপকে ধরতে পারছে। ইংল্যান্ডে আবহাওয়া এ বার অন্য রকম। কড়া রোদে পিচ শুকনো হয়ে যাচ্ছে। এ রকম আবহাওয়ায় কুলদীপ নিশ্চিত ভাবেই শাসন করার ক্ষমতা রাখে।’’ সচিন যোগ করছেন, ‘‘যদি ওয়ান ডে সিরিজের মতো পিচ শুকনো থাকে, তা হলে কিন্তু ভারতের ভালই আশা থাকছে। কিন্তু যদি সবুজ পিচ হয়, তা হলে ইংল্যান্ডের পেসাররা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।’’
সচিন অবশ্য মেনে নিচ্ছেন যে, ভুবনেশ্বর কুমারকে প্রথম তিনটি টেস্টে না পাওয়াটা বড় ধাক্কা। একই সঙ্গে যশপ্রীত বুমরাকেও প্রথম টেস্টে পাওয়া যাচ্ছে না। ‘‘ভুবির চোটটা সত্যিই খুব বড় একটা ধাক্কা,’’ বলছেন সচিন, ‘‘আমি ইংল্যান্ড সিরিজে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে ও ভাল খেলে গিয়েছে। ইংল্যান্ডে ভুবির সুইং বোলিং ভারতের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারত।’’ ২০১৪-তে ইংল্যান্ড সফরে শুধু বল হাতেই নয়, দারুণ খেলেছিলেন ব্যাটসম্যান ভুবনেশ্বরও। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে সচিনের মন্তব্য, ‘‘ভুবি বেশ ভাল ব্যাটসম্যান। সেটা ও চার বছর আগে ইংল্যান্ডে এসেও দেখিয়ে দিয়েছিল। ইনিংসের শেষের দিকে অন্যদের নিয়ে গড়ে তোলা ভুবির পার্টনারশিপগুলো ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেক সময়।’’ তার পরেই অবশ্য সচিন দ্রুত যোগ করছেন যে, ভুবিকে ছাড়াও ভারতের হাতে শক্তিশালী পেস বোলিং বিভাগই থাকছে। ‘‘পেস বিভাগে এর পরেও উমেশ, ইশান্ত, শামি, শার্দূলরা আছে। যথেষ্ট দক্ষ পেস বোলিং,’’ বলছেন তিনি। বুমরাকে নিয়ে জিজ্ঞেস করায় সচিন বলেন, ‘‘ওয়ান ডে সিরিজে বুমরার অভাব অনেকটাই বোঝা গিয়েছে। শেষের দিকের ওভারগুলোতে ওর ইয়র্কার পাওয়া যাচ্ছিল না। বুমরা চ্যাম্পিয়ন বোলার। টেস্ট ক্রিকেটেও দারুণ শুরু করেছে। আশা করছি, দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই ও খেলার মতো অবস্থায় চলে আসবে।’’
ক্রিকেটে সেঞ্চুরি অব সেঞ্চুরিজের মালিক অবশ্য মানতে নারাজ যে, ভুবি বা বুমরার অনুপস্থিতি ভারতের মনোবলকে দুমড়ে রাখবে। বিশেষ করে বিরাট কোহালি যখন আছেন, কোনও ভাবেই সেটা ঘটবে না বলে মনে হচ্ছে সচিনের। ‘‘আমার ক্রিকেট জীবনের একটা উদাহরণ দিতে পারি। ১৯৯৭-তে টরন্টোয় সহারা কাপে আমাদের দলে জাভাগল শ্রীনাথ, বেঙ্কটেশ প্রসাদ, অনিল কুম্বলে ছিল না। তবু আমরা পাকিস্তানকে সেই সিরিজে ৪-১ হারিয়েছিলাম। সেই কারণে আমার মনে হয়, কয়েক জনে নেই বলে ভারতকে দুর্বল বলাটা ঠিক হবে না। সেটা অন্য যারা খেলবে, তাদের দক্ষতাকে অসম্মান করাও হবে,’’ ব্যাখ্যা সচিনের। চার বছর আগে সব চেয়ে বেশি কথা উঠেছিল বিরাট কোহালির খারাপ ফর্ম নিয়ে। সচিন মনে করেন, অতীতের সিরিজের সঙ্গে এ বারের কোনও সম্পর্ক নেই। ‘‘২০১৪-তে কী হয়েছিল, তা দিয়ে এ বারের সিরিজকে দেখতে গেলে ভুল হবে। বিরাট এই সিরিজে ভালই খেলবে,’’ বলে দিচ্ছেন সচিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy