নাদিয়া নিঘাত। —নিজস্ব চিত্র।
নিত্যসঙ্গী সন্ত্রাস-রক্ত-গুলি। বাতাসে ভেসে বেড়ায় আতঙ্ক। তার মধ্যেই স্বপ্ন দেখেন তিনি। বল পায়ে ফুল ফোটান মাঠে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পায়েও সেই স্বপ্নটা ছড়িয়ে দেন বছর একুশের নাদিয়া নিঘাত।
শ্রীনগরের রামবাগে একটি ফুটবল অ্যাকাডেমি চালান নাদিয়া নিঘাত। সেখানে তাঁর কাছে ফুটবলের পাঠ নেয় ৩০ জন খুদে। তাদের মধ্যে তিন জন মেয়ে। ফুটবলার হিসেবেও ১০টি জাতীয় এবং রাজ্যস্তরের পুরস্কার পেয়েছেন নাদিয়া। জম্মু-কাশ্মীরের অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৬ এবং সিনিয়র দলেরও প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। নাদিয়ার এই সাফল্য স্বপ্ন বুনে দিচ্ছে উপত্যকার অন্য মেয়েদের চোখেও। স্বপ্ন কিছু একটা করে দেখানোর।
কিন্তু এই জায়গায় পৌঁছতে নাদিয়াকে লড়তে হয়েছে বহু লড়াই। পেরোতে হয়েছে অনেক ঘাম, রক্ত, সমালোচনা। নাদিয়ার কথায়, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের বেশির ভাগ মানুষ, এমনকী মহিলারাও মনে করেন মেয়েদের খেলা নিয়ে বেশি মাতামাতি করার কোনও মানেই হয় না।’’
কিন্তু এই সবে দমে যাওয়ার মেয়ে নন নাদিয়া। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন এই মানসিকতার বিরুদ্ধেও। জানিয়েছেন, নিজের খেলাকে ক্ষুরধার করার জন্য সমস্ত সমালোচনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি অনুশীলন করেছেন ছেলেদের সঙ্গে। নাদিয়া বলেন, ‘‘আমি বড় হয়েছি একটি রক্ষণশীল পরিবারে। বেশির ভাগ বন্ধু ছিল ছেলেরা। অমর সিংহ কলেজ অ্যাকাডেমিতে যখন ফুটবল খেলতে যায়, তখন সেখানে ৪৭ জন ছেলের মধ্যে আমিই ছিলাম এক মাত্র মেয়ে।’’
আরও পড়ুন: চিট ফান্ডে ২০ কোটি ঢেলে পস্তাচ্ছেন দ্রাবিড়, শরণাপন্ন পুলিশের
কিন্তু ফুটবলের প্রতি এই ভালোবাসা জন্মালো কী ভাবে? নাদিয়া জানান, স্কুলের বন্ধুরা ফুটবল নিয়ে আলোচনা করত। শুনতে শুনতে খেলাটার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলা শুরু করি। নাদিয়ার কথায়, ‘‘গোলকিপার হিসেবেই খেলা শুরু করেছিলাম।’’
নাদিয়া ভোলেননি তাঁর পাড়ার প্রাক্তন ফুটবল কোচকেও। তাঁর কাছ থেকেই প্রথম ফুটবলের পাঠ নিতে শুরু করেন তিনি। প্রাক্তন ওই ফুটবল কোচই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন পাড়ার মেয়েদের এবং স্কুলের ছেলেদের নিয়ে একটি দল গঠন করে খেলার জন্য। নাদিয়া বলেন, ‘‘ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা এবং খেলার জন্য আমাকে বহু সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে।’’
কিন্তু প্রথম ছ’-সাত মাস খেলার পরে নাদিয়া বুঝতে পারেন অন্য মেয়েদের চেয়ে তিনি ফুটবলটা বেশি ভাল খেলেন। কোচও তাঁকে আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণ দিতেন। কোচ যখন থাকতেন না, তখন অন্য মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতেন নাদিয়াই।
জম্মু-কাশ্মীরের ফুটবলার এবং ফুটবল কোচ হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে পেরে খুবই খুশি নাদিয়া। দেশের ফুটবলের উন্নতির জন্য আরও উপরে উঠতে চান তিনি। চান কাশ্মীরের ছেলে-মেয়েদের জন্য গড়া হোক ক্রীড়া স্কুল।
চাইবেনই তো। সন্ত্রাস জর্জরিত উপত্যকায় নাদিয়া যে ফুটবলের ফেরিওয়ালা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy