Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দু’বার ব্যাটিং, আগ্রাসনকেই অস্ত্র করতে চান কোহালি

ভারত অধিনায়ককে দেখে মনেই হচ্ছিল না, দলের সতীর্থ বোলাররা তাঁকে বল করছেন। মনে হচ্ছিল যেন প্রতিপক্ষের ভার্নন ফিল্যান্ডার, মর্নি মর্কেল-দের জবাব দিতে নেমেছেন।

লক্ষ্য: নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হচ্ছেন বিরাট কোহালি। ফাইল চিত্র

লক্ষ্য: নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হচ্ছেন বিরাট কোহালি। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
সেঞ্চুরিয়ন শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৪
Share: Save:

সেঞ্চুরিয়নে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার দু’দিন আগেই যেন শুরু হয়ে গেল বিরাট কোহালির ‘টেস্ট’। শুক্রবার মহড়াতেই এমন তীব্রতা দেখাতে শুরু করলেন তিনি যে, গুলিয়ে যাচ্ছিল প্র্যাক্টিস দেখছি না টেস্ট ম্যাচ চলছে!

ম্যাচের মধ্যে তাঁর আগ্রাসী ভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত ক্রিকেট বিশ্ব। লাইভ কভারেজের মাধ্যমে তার সাক্ষী থাকতে পারেন দেশ-বিদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। বৃহস্পতিবার সেঞ্চুরিয়নের মাঠে ম্যাচ ছিল না। ছিল নিছকই প্র্যাক্টিস। কোনও লাইভ কভারেজও ছিল না। তাই ক্রিকেট ভক্তরা দেখতে পারলেন না, দ্বিতীয় টেস্টের মহড়াতেই কেমন ফুটছিলেন বিরাট কোহালি।

ভারত অধিনায়ককে দেখে মনেই হচ্ছিল না, দলের সতীর্থ বোলাররা তাঁকে বল করছেন। মনে হচ্ছিল যেন প্রতিপক্ষের ভার্নন ফিল্যান্ডার, মর্নি মর্কেল-দের জবাব দিতে নেমেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, সিরিজে ০-১ পিছিয়ে থাকা এবং বিদেশের মাটিতে এসে লজ্জিত হয়ে প্রথম টেস্টে পরাজয় তাঁর ক্রিকেট গর্বে আঘাত করেছে। কখনও নিজের সঙ্গে কথা বলছেন, কখনও বোলারকে চেঁচিয়ে বলছেন ‘কাম অন, হিট মি’, কখনও আবার ম্যাচের মতো রান নিতে ছুটছেন অদৃশ্য পার্টনারের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় টেস্টে ধবনের জায়গায় রাহুল, ফিরতে পারেন ইশান্ত-রাহানে

প্রথম বার ব্যাট করতে গিয়ে কয়েক বার অফস্টাম্পের বাইরে পরাস্ত হলেন। চেঁচিয়ে নিজেকে ভর্ৎসনা করলেন তাঁর জন্য। স্থানীয় এক পেসারের বল আচমকা লাফিয়ে বুকের নীচে লাগল। রাগে তখন ব্যাট দিয়ে আঘাত করলেন বলে। যতটা না বোলারের উপর উষ্মা প্রদর্শন, তার চেয়ে বেশি নিজে ঠিক মতো খেলতে না পারায় নিজের উপরেই ক্ষোভ বর্ষণ।

পাশের নেটে ‘থ্রোডাউন’ অর্থাৎ বল ছু়ড়ে ছুড়ে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করাচ্ছেন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। সেখানে ঢুকে দেখলেন মুখের উপর লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যম। ক্যামেরা তাঁর মুখের উপরেই তাক করা। কোনও দিনই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোহালির ‘লাভ স্টোরি’ লেখা হয়নি। সেঞ্চুরিয়নেও তার কোনও হেরফের ঘটল না। সংবাদমাধ্যমকে মুখের উপর থেকে ক্যামেরা নিয়ে সরে যেতে বলে দিলেন কোহালি। বেরিয়ে এসেও গজগজ করতে থাকলেন, মুখের উপর এসে ব্যাটিংয়ের ভিডিও তুলবে কেন?

অতিথি: ভারতীয় হাইকমিশনারের পার্টিতে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। ছবি: টুইটার

দেখেশুনে মনে হচ্ছিল, নেটে ব্যাটিং করে যেন তিনি তৃপ্ত নন। বারবার মাথা নাড়ছিলেন দাঁড়িয়ে। এক বার হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। শাস্ত্রী তাঁকে হাত নেড়ে নেড়ে কিছু বোঝালেন। কোহালি ঘাড় নেড়ে আবার সেখান থেকে চলে গেলেন। আবার গিয়ে দাঁড়ালেন থ্রোডাউনের নেটে। সেখানে তখন কে এল রাহুল প্র্যাক্টিস করছেন। কিছুক্ষণ তা দেখার পরেই আবার ফিরে গেলেন ছোট্ট তাঁবুর মধ্যে। তার পরেই দেখা গেল তিনি আবার প্যাড পরতে শুরু করেছেন।

শাস্ত্রীর দিকে তাকিয়ে এর পর বলে উঠলেন, আমি আবার নেটে ঢুকতে চাই। শাস্ত্রী ঘাড় নাড়লেন তৎক্ষণাৎ। দ্বিতীয় বার নেটে যাওয়া কোহালিকে দেখে অভ্যস্ত ক্রিকেট বিশ্ব। ভয়ঙ্কর কাউন্টার অ্যাটাক করা শুরু করলেন তিনি এ বার বোলারদের। শর্ট পিচ্‌ড পেলেই সপাটে পুল-হুক মারতে থাকলেন। যেমন টাইমিং, তেমনই ব্যাট-বলের সংযোগের আওয়াজ, তেমনই শটের ফিনিশিং। শাস্ত্রী পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে বাহবা দিতে থাকলেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বোলিং কোচ বি. অরুণ। তিনি তখন পাশের নেটে ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবদের নিয়ে পড়ে ছিলেন। কিন্তু প্র্যাক্টিসেই কোহালি এমন ঝড় তুলেছেন তখন যে, তিনিও সে দিকে তাকিয়ে। একেবারে কোণার নেট থেকে দেখছেন সঞ্জয় বাঙ্গার-ও। মহড়াতেই তখন যেন এসে পড়েছে ম্যাচের উত্তেজনা আর নাটক।

দু’দফা মিলিয়ে অন্তত দেড় ঘণ্টা ব্যাটিং অনুশীলনই করলেন কোহালি। যা দেখে সেঞ্চুরিয়নের টি-টোয়েন্টি টিমের এক কর্তাও মুগ্ধ। তিনি বলে ফেললেন, ‘‘আমাদের দেশে অনেক ফ্যান আছে কোহালির। নিউল্যান্ডসে যে এত লোক এসেছিল খেলা দেখতে, অনেকে বিরাটের ব্যাটিংও দেখার ইচ্ছা নিয়ে এসেছিল। সেঞ্চুরিয়নেও অনেকে আসবে ওর ব্যাটিং দেখতে। এই প্র্যাক্টিসটা দেখতে পেলেই ওরা খুশি হয়ে যেত।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ওই যে প্র্যাক্টিস বোলাররা ওকে বল করছে, সবাই কোহালির ফ্যান। দেখুন, কী রকম মুগ্ধ হয়ে ওর ব্যাটিং গিলছে। শেষ হলেই ওর সঙ্গে ছবি তুলতে চাইবে।’’

একটু পরে টি-টোয়েন্টি কর্তার কথাই ঠিক হল। প্র্যাক্টিস শেষ হয়েছে আর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সব তরুণ বোলার ভারত অধিনায়কের সঙ্গে ছবি তুলে রাখতে ছুটেছেন। কোহালি সকলকে খুশি করে তবেই মাঠ ছাড়লেন। প্র্যাক্টিস এরিনা থেকে ড্রেসিংরুম পর্যন্ত রাস্তায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাওয়ার সময় মনে হল, ভিতরে ভিতরে সত্যিই ফুটছেন তিনি। প্রথম টেস্ট হারের পরে কোনও কোনও মহলে একটা হাওয়া উঠেছে যে, এই টিমের দ্বারা বিদেশে জেতা হবে না। পন্ডিতদের এই পর্যবেক্ষণে সব চেয়ে বিরক্ত, ক্ষুব্ধ থাকার কথা তাঁর। দলবদ্ধ ভাবে এর যোগ্য জবাব না দেওয়া পর্যন্ত মনে হয় না শান্তি পাবেন। দল হিসেবে তাঁরা ঠিক করে ফেলেছেন, উইকেট নিয়ে কোনও অভিযোগ করবেন না। একাধিক ক্রিকেটারকে বলতে শোনা যাচ্ছে, দু’টো দলই একই পিচে খেলছে। অভিযোগের প্রশ্নই নেই। সেই কারণে এক দিনে ১৮ উইকেট পড়ার পরেও নিউল্যান্ডসে হারের পরে কোহালি বলে আসেন, ‘‘পিচটা আমার দারুণ লেগেছে। এই ধরনের পিচ হলে লোকে আরও বেশি করে টেস্ট ক্রিকেট দেখতে আসবে।’’

শোনা গেল, বুধবার জোহানেসবার্গে পৌঁছে ব্যাটিং ইউনিটের বৈঠকে খুব ইতিবাচক কথাবার্তা হয়েছে। সকলে মিলে ঠিক করেছেন, ফিল্যান্ডারদের বেশি মাথায় চড়তে না দিয়ে ছন্দ নষ্ট করারও চেষ্টা করতে হবে। প্র্যাক্টিসে কোহালির ব্যাটিং দেখে মনে হল, তিনি কাউন্টার অ্যাটাক করতেও তৈরি থাকবেন। দু’টো ব্যাট হাতে ধরে ড্রেসিংরুমে ঢুকে যাওয়া কোহালির কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, ব্যাটেই যা জবাব দেওয়ার দিতে চান। প্রতিপক্ষকে এবং নিজের দেশের সমালোচকদের।

রাতে ভারতীয় হাইকমিশনারের দেওয়া পার্টিতে আমন্ত্রিত ছিল দল। সেখানে সবাই গেলেন। কিন্তু আতিথেয়তার মধ্যেও কেউ ভুললেন না যে, সেঞ্চুরিয়নের মাঠেও দক্ষিণ আফ্রিকা রেড কার্পেট নয়, সবুজ গালিচা পেতে অভ্যর্থনা জানাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE