ট্রফি নিয়ে অ্যাটলেটিকো কলকাতার উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
শব্দগুলো প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে বার বার। শপিংমলের আনাচ কানাচ থেকে। অথচ মঞ্চ থেকে হিউম হুঙ্কার দিয়েছিলেন এক বারই, ‘উই ডিড ইট’। পাঁচতলা শপিংমল ফিরিয়ে দিল তার কয়েক হাজার গুণ, ‘উই ডিড ইট’।
কখনও হাততালি, কখনও মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। সঙ্গে কান ফাটানো চিৎকার ‘এটিকে এটিকে’। আর সেই চিৎকারেই গলা মিলিয়ে দিলেন দলের হয়ে উইনিং শট নেওয়া জুয়েল রাজা। মাইক্রোফোনে শুধু ছুড়ে দিলেন, ‘জিতল কে?’ পুরো শপিংমল কাঁপিয়ে উত্তর এল ‘এটিকে এটিকে’। ডিসেম্বরের হালকা শীতে দুগ্গাপুজোর শহুরে আমেজ যেন ফিরে এল, ‘আসছে বছর আবার হবে।’ সমর্থকরাই তুলে দিলেন সেই দাবি।
এয়ারপোর্টে বাক্সবন্দি হয়েই নেমেছিল ট্রফি। ফুটবলারদেরও মুখে তখন কুলুপ। বেরিয়েই সোজা বিলাসবহুল বাস। তা এসে থামল সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের নামী শপিংমলে। প্রায় হাজার পাঁচেক সমর্থকের সামনেই খোলা হল সেই ট্রফি। শপিংমল তখন যেন ফুটবল গ্যালারি। পোস্টিগা, নাতোরা কেরল থেকে ফিরে গিয়েছেন দেশে। বিজয় উৎসবে সামিল হতে পারলেন না। কিন্তু যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই অ্যাটলেটিকোর থিম সং-এর ছন্দে পা মেলালেন। সব থেকে বেশি নাচতে দেখা গেল জাভি লারাকে। তাঁর সঙ্গে কখনও পা মেলালেন প্রবীর দাস তো কখনও হিউম। পুরো দল মঞ্চ দাপাল গানের তালে। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, উৎসব পারেখ, হর্ষ নেওটিয়াদের মতো দাপুটে ব্যবসায়ীরাও এই ফাঁকে কি পা মিলিয়ে নিলেন? ভিড়ের চাপে তা আর ধরা পড়ল না।
আরও খবর: ফাইনালে কেরল বনাম এটিকে-র ধুন্ধুমার লড়াইয়ের মুহূর্ত
মঞ্চটা তৈরি হচ্ছিল অ্যাটলেটিকো ফাইনালে পৌঁছনোর পর থেকেই। কেরল ব্লাস্টার্স উঠতেই যেন উৎসবের আমেজ। অনেকগুলো ‘আবার’ জন্ম নিয়েছিল। আবার আইএসএল ফাইনাল। আবার কলকাতা-কেরল। আবারও সেই সৌরভ-সচিন। যদিও ভেন্যু বলছিল, এগিয়ে কেরল। কোচির মাঠে ফাইনাল। মাঠের ১১ জনের পাশাপাশি অ্যাটলেটিকো কলকাতাকে লড়তে হচ্ছিল ভর্তি গ্যালারির বিরুদ্ধেও। তাই লড়াইটা সহজ ছিল না। ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। আর সেখানেই বাজিমাত টিম কলকাতার।
টাইব্রেকারে শেষ শটটা জুয়েল রাজা গোলে পাঠাতেই মাঠ আর রিজার্ভ বেঞ্চে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙে। গ্যালারিতে তখন আনন্দে আত্মহারা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও সিএবিতে বিশেষ বৈঠক থাকায় এ দিনের উৎসবে হাজির ছিলেন না সৌরভ। রাতের পার্টিতে যোগ দিতে পারেন বলে শোনা গেল।
এয়ারপোর্টের বাইরে সেই চেনা দৃশ্য হয়তো এ দিন ছিল না। ছিল না চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য কাতারে কাতারে সমর্থকদের জমায়েত। হয়তো শখানেক সমর্থক পতাকা হাতে গলা ফাটাচ্ছিলেন। বোর্ডে ‘ফ্লাইট লেট’ ফুটে উঠতেই কিছুটা হতাশা। প্রিয় ফুটবলারদের কাছ থেকে দেখে নিতে আরও একটু বিলম্ব। তাতে কী? চ্যাম্পিয়নদের জন্য এইটুকু তো করাই যায়। কিন্তু ওইটুকুই। এয়ারপোর্ট থেকে ছিল না কোনও বাইক মিছিল। ছিল না রাস্তার ধারের কোনও জমায়েত। হুটার বাজিয়ে ছুটে চলা অ্যাটলেটিকোর বাস দেখে চলমান গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করছিলেন অনেকেই। শেষ বার আই লিগ জিতে যখন শহরে ফিরেছিল মোহনবাগান, সেই দৃশ্য দেখা গেল না। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ফুটবলাররা সোজা উঠে গেলেন বাসে। সেখান থেকে সোজা পার্কসার্কাসের মলে। আসল উৎসব অপেক্ষা করেছিল সেখানেই।
আরও খবর: হিউম মিস করার পরও চারটে শট বাকি ছিল: মলিনা
উৎসব শেষে শপিংমলের রেস্তোরাঁয় পাস্তা বানাতে নেমে পড়েছিলেন বোরহা ফার্নান্ডেজ। সকলেই তা প্রায় কবজি ডুবিয়ে খেলেন। তার আগেই অবশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়েই দলের অন্যতম মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ঘোষণা করে দিয়েছেন, পরের বছরও কোচ থাকছেন মলিনা। বললেন, ‘‘এর মধ্যেই আমরা কোচের সঙ্গে আলোচনায় বসব।’’ সঙ্গে জুড়লেন, ‘‘যে ভাবে আপনারা এই তিন বছর আমাদের পাশে থেকেছেন পরবর্তী সময়েও থাকবেন।’’
ময়দানের খবর অবশ্য বলছে মঙ্গলবারই মলিনার সঙ্গে আলোচনায় বসছে অ্যাটলেটিকো টিম ম্যানেজমেন্ট। তার পরই দেশে উড়ে যাবেন তিনি। সোমবারই দলের প্রায় সব বিদেশিদেরই দেশে ফিরে যাওয়ার কথা।
পরের বছর হয়তো অনেকটাই বদলে যাবে দল। বদলে যাবে চেনা নামগুলোও। উঠে আসবে নতুন নাম। এক বছর ফুটবলাররা ডুবে যাবে অন্য জগতে। তবুও উৎসবের মঞ্চ থেকেই হিউম যেন সেই বার্তাটাও দিয়ে গেলেন। যেন বলে গেলেন, ‘উই উইল ডু ইট’। ‘আসছে বছর আবার হবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy