কোয়ার্টার ফাইনালের পর সেমিফাইনাল এবং ফাইনালও কলকাতায়। ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের দু’দিন আগে ম্যাচের কেন্দ্র বদল হয়ে যাচ্ছে, এমন ঘটনা আগে কখনও দেখা গিয়েছে? এমন নজিরবিহীন ঘটনার সঙ্গেই জড়িয়ে গেল কলকাতা।
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই যুবভারতীতে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচ জিতেছে ব্রাজিল। তিন বছর আগে বড়দের বিশ্বকাপে হারের বদলা নিয়ে ছোটরা হারিয়েছে জার্মানিকে। হলুদের স্রোতে ভেসেছে গোটা স্টেডিয়াম। কে জানত, আবারও ব্রাজিলকে দেখার সৌভাগ্য আসবে কলকাতার সামনে!
রবিবার কোয়ার্টার ফাইনালের ব্রাজিল-জার্মানি ধুন্ধুমার ও নাটকীয় ম্যাচের পর বাংলা যখন শনিবারের ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে, তখনই নাটকীয়ভাবে নতুন একটা ম্যাচ পেয়ে গেল কলকাতা। দেশের অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ছ’টি শহরের কোথাও যা হয়নি, তা হচ্ছে কলকাতায়। কোয়ার্টার ফাইনালের পর সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল।
আরও পড়ুন: ব্রাজিল শিবিরে যেন ‘ঘরে’ ফেরার আনন্দ
এ দিন যুবভারতীতে দাঁড়িয়ে ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত বলছিলেন, ‘‘ফিফা কর্তারা স্বীকার করেছেন, বাংলার মতো দেশের কোনও রাজ্যেই এভাবে বিশ্বকাপকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়নি। এ ভাবে কোনও রাজ্য সরকার টুনার্মেন্ট সফল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েনি। এখানে সেমিফাইনাল করতে পেরে আমরা খুশি।’’ দুপুর থেকেই ইঙ্গিত আসতে থাকে যে, ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ম্যাচ সরে আসতে পারে কলকাতায়। আর তখন থেকেই সাম্বা ঝড় বনাম টুনার্মেন্টের কালোঘোড়ার যুদ্ধ দেখার জন্য টিকিটের খোঁজে নেমে পড়েন শহরের ফুটবলপ্রেমীরা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাচ সংগঠন করার সবুজ-সঙ্কেত পাওয়ার পরই ফিফার তরফে জানানো হয়, সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকে টিকিট অনলাইনে বুকিং করা যাবে। সেটা জানার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট বুকিংয়ের আবেদন জমা পড়ে ঝড়ের গতিতে। রাত সাড়ে ন’টায় দেখা যায় টিকিটের জন্য আবেদন ছাড়িয়েছে পঁচাত্তর হাজার। সবাই নেট খুলে বসে আছেন টিকিট কেনার আশায়। সাড়ে ৬৬ হাজার দর্শকাসন রয়েছে স্টেডিয়ামে। দামের টিকিট ছাড়া হচ্ছে ৩৫ হাজার। কিন্তু অনলাইনে যাঁরা টিকিট বুকিং করবেন, তাঁরা কবে সেই টিকিট হাতে পাবেন, তা নিয়েই রয়েছে ধোঁয়াশা।
গত শনিবারই ছিল এই অবস্থা, সকাল থেকে নাটকের পর বাতিল গুয়াহাটি।
জানা গিয়েছে, টিকিট ছেপে এবং লোগো লাগাতে মঙ্গলবার রাত হয়ে যাবে। বিশ্বকাপের ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘এখনই বলা সম্ভব নয়, কখন টিকিট হাতে পাওয়া যাবে। টিকিটের কাগজ নানা জায়গা থেকে আসবে। তারপর ছাপা হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে বলা যাবে না টিকিট কখন এবং কোথা থেকে দেওয়া যাবে।’’ যা পরিস্থিতি, ম্যাচের দিন অর্থাৎ বুধবার (২৫ অক্টোবরেই ম্যাচ হবে) ভোর থেকে টিকিট পাওয়া যেতে পারে বুকিংয়ের স্লিপ দেখিয়ে। ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ম্যাচ আবার বিকেল পাঁচটায়। ফলে ভোগান্তি বাড়তেই পারে দর্শকদের।
চেষ্টা চলছে, কলকাতার তিন প্রধানের তাঁবু ও মিলন মেলা থেকে টিকিট দেওয়ার। সমস্যা মেটাতে সব টিকিটের একই দাম রাখা হয়েছে—একশো টাকা। কিন্তু তার পরেও সমস্যা রয়েছে। গুয়াহাটি স্টেডিয়ামে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ফিফার পক্ষ থেকে সব ক্রেতাকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছে করলে টাকা ফেরত নিতে পারেন।
কী ভাবে টিকিট?
•• অনলাইনেই টিকিট কিনতে হবে। সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকেই খোলা হয়েছে অনলাইন কাউন্টার।
কী পরিস্থিতি অনলাইনে?
•• সঙ্গে সঙ্গেই চাহিদা তুঙ্গে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই লম্বা ওয়েটিং লিস্ট তৈরি হয়।
পাওয়া যাচ্ছে কি?
•• অনেকেই অভিযোগ করতে থাকেন, টিকিটের টাকা দিতে গেলেই অনলাইন প্রক্রিয়া আটকে যাচ্ছে। যার ফলে শেষ পর্বে গিয়ে টিকিট কেনা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
কত দাম টিকিটের?
•• ফিফা জানিয়েছে, কলকাতার এই সেমিফাইনালের জন্য সব টিকিটেরই দাম ১০০ টাকা। এর আগে টিকিটের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৮০০ টাকা। সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৬০ টাকা।
গুয়াহাটির টিকিটের কী হবে?
•• ফিফা জানিয়েছে, গুয়াহাটিতে যাঁরা টিকিট কেটেছিলেন, চাইলে দাম ফেরত নিতে পারেন। আবার কেউ যদি যুবভারতীতে এসে সেমিফাইনাল দেখতে চান, গুয়াহাটিতে কাটা টিকিটেই তা পারবেন।
কীভাবে তা সম্ভব?
•• গুয়াহাটিতে টিকিট কাটা দর্শকরা পরিচয়পত্র এবং অনলাইন টিকিটের প্রমাণপত্র কাউন্টারে দেখালেই যুবভারতীতে ঢুকতে পারবেন।
ধোঁয়াশা কোথায়?
•• অনলাইনে টিকিট বুকিং হয়। তার পর প্রমাণপত্র দেখিয়ে নির্দিষ্ট কিছু কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে হয়। অল্প সময় হাতে থাকায় এই প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
কিন্তু কেউ যদি খেলা দেখতে আসেন? বিশ্বকাপ ডিরেক্টর বললেন, ‘‘কোনও দর্শক গুয়াহাটির টিকিট নিয়ে এলে সেটা দেখিয়ে কাউন্টার থেকে নতুন টিকিট নিয়ে খেলা দেখতে পারবেন।’’ ক’জন আসবে বলে মনে করেন? জয় বললেন, ‘‘এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ফিফা খোঁজ নিচ্ছে। জানতে চেয়েছি কত বিমান আসবে কলকাতায়। কত বুকিং হয়েছে। সেটা হাতে পেলেই বোঝা যাবে কত জন আসছে।’’ ব্রাজিল বনাম জার্মানির পর এ বার ব্রাজিল বনাম ইংল্যান্ড। পর-পর দু’টি দারুণ ম্যাচ দেখার বরাত কলকাতার ভাগ্যে। টিকিট নিয়ে ধোঁয়াশা যতই থাকুক, ডার্বির শহর ফের যুবভারতীমুখী। বিকেল থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে সেই আর্তি— টিকিট কোথায় পাওয়া যাবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy