Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শ্র্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আজ জিতলেই সেমিফাইনালে বিরাটরা

কেমন লাগবে প্রিয় সতীর্থের বিরুদ্ধে দ্বৈরথে নামতে? সকালে শ্রীলঙ্কার নেট প্র্যাকটিস হয়ে যাওয়ার পরে সিংহলিজ দোভাষীর মাধ্যমে জিজ্ঞেস করা গেল মালিঙ্গাকে।

গুরু-শিষ্য: ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচকে মালিঙ্গা বনাম বুমরারদ্বৈরথ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

গুরু-শিষ্য: ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচকে মালিঙ্গা বনাম বুমরারদ্বৈরথ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০৪:৫৩
Share: Save:

প্রায় দশ বছরের তফাত তাঁদের বয়সের। লাসিথ মালিঙ্গা ৩৩। যশপ্রীত বুমরা ২৩। এক জন শ্রীলঙ্কার ‘স্লিঙ্গা মালিঙ্গা’। অন্য জনকে বলা হয় ‘ভারতীয় মালিঙ্গা’। দু’জনে সতীর্থও। আইপিএলে খেলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ম্যাচে প্রতিপক্ষ। ওভালের ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচকে দুই পেস তারকার দ্বৈরথ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। মালিঙ্গা বনাম বুমরা।

কেমন লাগবে প্রিয় সতীর্থের বিরুদ্ধে দ্বৈরথে নামতে? সকালে শ্রীলঙ্কার নেট প্র্যাকটিস হয়ে যাওয়ার পরে সিংহলিজ দোভাষীর মাধ্যমে জিজ্ঞেস করা গেল মালিঙ্গাকে। ‘‘ক্রিকেট ভক্তরা তাঁদের মতো করে ম্যাচটাকে দেখতেই পারে। আমি কিন্তু এটাকে আর একটা ম্যাচ হিসেবে দেখছি,’’ বলতে শুরু করলেন শ্রীলঙ্কার সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় বোলার, ‘‘মনে করছি, খুব ভাল একটা দলের সঙ্গে আমাদের খেলতে হবে। সেরাটা দিতে হবে। কোনও ব্যক্তিগত লড়াই হিসেবে দেখতে চাই না কালকের ম্যাচকে।’’

লন্ডনের ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যেও ঘামে জবজবে ভিজে রয়েছে প্র্যাকটিস জার্সি। দীর্ঘক্ষণ শুধু নিজে বোলিংই করলেন না, বল ছুড়ে থ্রোডাউনও দিচ্ছিলেন দলের ব্যাটসম্যানদের। বুমরাকে নিয়ে এমনিতে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। বার বার তাঁর প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশে এশিয়া কাপ খেলতে এসেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অনুজের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন। এখানেও হয়তো শুভেচ্ছার হাত বাড়িয়ে দেবেন।

আরও পড়ুন: কার্ফু তুলে বিরাটদের বলা হল, লন্ডন উপভোগ করো

কিন্তু বৃহস্পতিবারের মরণ-বাঁচন ম্যাচের কথা ভেবে বুমরাকে নিয়ে ব্যক্তিগত আবেগ সরিয়ে রাখতে চাইছেন মালিঙ্গা। বলে দিলেন, ‘‘এটা আর একটা ম্যাচ। ক্রিকেটে প্রত্যেকটা ম্যাচই ব্যাট আর বলের মধ্যে লড়াই। এটাও সে রকমই। এর বাইরে আলাদা করে কিছু ভাবছি না।’’ বুমরার জন্যও আলাদা করে কিছু বলবেন না? জিজ্ঞেস করা গেল সিংহলিজ দোভাষীর মাধ্যমে। মালিঙ্গার জবাব, ‘‘বুমরা খুব ভাল বোলার। আরও অনেক সাফল্য পেতে পারে। গ্রেট বোলার হয়ে উঠছে ও। কিন্তু আমি আমাদের দল নিয়েই ভাবছি এখন।’’

একে তো ভারত দুর্দান্ত শুরু করেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে বিরাট কোহালি-রা বাকিদের জন্যও আতঙ্কের বার্তা দিয়ে রাখতে পেরেছেন যে, টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ভারত। অন্য দিকে, শ্রীলঙ্কা শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার দিয়ে। মরণ-বাঁচন ম্যাচের আগে মালিঙ্গার কোনও বুমরা-প্রীতি দেখানোর অবস্থা নেই। বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা নিজেদের দল নিয়েই ভাবছি। নিজেদের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে চলেছি। বুমরা দারুণ বোলার কিন্তু এই মুহূর্তে প্রতিপক্ষের কোনও নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে নিয়ে ভাবতে চাই না আমরা।’’

স্লো ওভার রেটের জন্য দুই ম্যাচ নির্বাসিত হয়েছেন দলের অন্যতম ব্যাটিং অস্ত্র উপুল থরঙ্গা। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না। দলে ফিরছেন আসল অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। তাঁকে আড়াল করে অন্য কাউকে টস করতে পাঠানোর ভাবনা সম্ভবত দিনের আলো দেখছে না। শ্রীলঙ্কা শিবির থেকে জানা গেল, ম্যাথিউজই টস করতে যাবেন বলে ঠিক হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্র্যাকটিসে ক্রিকেটভক্তদের জন্য সেরা ছবি অবশ্য দেখা গেল যখন মালিঙ্গার কাছাকাছি এলেন তাঁদের বোলিং কোচ। অ্যালান ডোনাল্ড। দুই সেরা বোলারের যুগলবন্দিই ভারতের বিরুদ্ধে তুরুপের তাস শ্রীলঙ্কার। কোচ ডোনাল্ডের পরামর্শ, স্লিঙ্গা মালিঙ্গার ইয়র্কার।

তবে শ্রীলঙ্কার সেরা অলরাউন্ডার বল করতে পারবেন না। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন। ম্যাথিউজ নতুন বাণী শোনালেন যে, ভারতের ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংও এখন ভযঙ্কর। ‘‘ভারতের ব্যাটিং বরাবরই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখত। কিন্তু এ বারে ওদের বোলিংটাও দারুণ। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ এখন ভারতের,’’ বললেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক।

সচরাচর এমন প্রশংসা ভারতীয় বোলিংয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে না। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের জন্য আবার কোনও প্রশংসাই বরাদ্দ থাকছে না হালফিলে। ওভাল যে কাউন্টির মাঠ, সেই সারের হয়ে খেলছেন কুমার সঙ্গকারা। এখানেই আছেন। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ব্যাটসম্যান পরামর্শ দিয়েছেন, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে তরুণ এই শ্রীলঙ্কা দলকে। ম্যাথিউজকে তা নিয়ে জিজ্ঞেস করায় সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘কুমারের পরামর্শ আমরা প্রায়ই নিই। ওকে আমি তো দেশের হয়ে ফের খেলার জন্যও বলি। একদম ঠিক বলেছে। আমাদের লক্ষ্য ইতিবাচক ও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা।’’

কিন্তু ম্যাচের আগের দিনই শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের যে রকম নুইয়ে পড়া শরীরী ভাষা দেখা গেল, কী করে তিনি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে দলকে নেতৃত্ব দেবেন, তা খতিয়ে দেখার জন্য ওভাল থেকে ৩০ মিনিটের দূরত্বে ২২১বি, বেকার স্ট্রিটে ঢুঁ মারা যেতে পারে বরং। যদি কোনও শার্লক হোমস পাইপ মুখে আজও সেখানে অফিস খুলে বসেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE