Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ম্যান ইউ ঐতিহ্য নিয়ে কটাক্ষ করে মোরিনহোর ১২ মিনিটের তোপ

ম্যানেজারের নাম? জোসে মোরিনহো! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেভিয়ার কাছে হেরে বিদায়ের পরে ফের সমালোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন মোরিনহো। তারই জবাব দিতে কাগজে লিখে আনা তথ্য পড়ে শোনান তিনি।

নিন্দুকদের তোপ জোসের। ফাইল চিত্র

নিন্দুকদের তোপ জোসের। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৪
Share: Save:

তথ্য লিখে আনা কাগজ দেখে টানা বারো মিনিটের বিবৃতি। যা সাংবাদিকদের পড়ে শোনাচ্ছেন বিখ্যাত ক্লাবের এক বিখ্যাত ম্যানেজার। তা নিয়েই তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে ফুটবল দুনিয়ায়।

ম্যানেজারের নাম? জোসে মোরিনহো! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেভিয়ার কাছে হেরে বিদায়ের পরে ফের সমালোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন মোরিনহো। তারই জবাব দিতে কাগজে লিখে আনা তথ্য পড়ে শোনান তিনি। শুক্রবার রাতের দিকে নাটকীয় সেই সাংবাদিক সম্মেলনে মোরিনহো লিখে আনা কাগজ দেখে বলা শুরু করেন, ‘‘ফুটবল ঐতিহ্যের অনেক কথা শুনছি। আমাকে কেউ বলতে পারেন, কবে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড শেষ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল?’’ ম্যান ইউ ম্যানেজারের সংযোজন, ‘‘যত দূর জানি, খুব বেশি বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ঘটনা ঘটেনি এই ক্লাবে। আর শেষ বার এই ট্রফি এসেছিল ২০০৮ সালে।’’

এর পর মরসুম ধরে ধরে ফল তুলে ধরে দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন তিনি। ‘‘২০১১-’১২ মরসুমে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ক্লাব। পরের বার শেষ ষোলো থেকে বিদায়, সে বার আমিই ছিলাম প্রতিপক্ষ বেঞ্চে। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরেছিল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। ২০১৪-তে কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ হয়ে গিয়েছিল যাত্রা। ২০১৫-তে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতেই পারেনি। আর ২০১৬-তে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ফিরে এলেও প্রথম রাউন্ডেই হেরে ইউরোপা লিগে যাওয়া এবং সেখানেও দ্বিতীয় নক-আউট ম্যাচেই হার। ২০১৭-তে আমার কোচিংয়ে ইউরোপা লিগ জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রত্যাবর্তন, গ্রুপ লিগে ১৮ পয়েন্টের মধ্যে ১৫ পয়েন্ট অর্জন করে শেষ ষোলোতে গিয়ে হার।’’ সাংবাদিকদের দিকে মুখ তুলে এর পর তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কী দাঁড়াল? না, গত সাত বছরে চার জন পৃথক ম্যানেজার নিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এক বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি, দু’বার গ্রুপ পর্বে বিদায় নিয়েছে এবং সেরা পারফরম্যান্স হল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনো। এই হচ্ছে ফুটবল ঐতিহ্য!’’ বলে চলেন তিনি, ‘‘গত সাত বছরে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে অনেক বেশি সফল একটা ক্লাবের কাছে হেরে আমরা বিদায় নিয়েছি। ওদের দলে অনেক ফুটবলার আছে, যারা আমার এই দলে সুযোগ পেতে পারে। আমি তাদের নাম করলে এজেন্টরা এখনই ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাই করছি না।’’

ম্যান ইউ ম্যানেজার দাবি করছেন, পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র চেয়ে অনেক দুর্বল দল তাঁর হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছেন পূর্বসূরিরা। ‘‘ম্যান ইউ-এর শেষ ইপিএল জয় ২০১২-’১৩ মরসুমে। তার পর চারটি মরসুমে তারা শেষ করেছে যথাক্রমে সপ্তম, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ হিসেবে। অর্থাৎ, গত চার বছরে সেরা পারফরম্যান্স ছিল চতুর্থ হওয়া। আর গত সাত বছরে সিটি-র সবচেয়ে খারাপ ফল চতুর্থ হওয়া। গত সাত বছরে ওরা ইপিএল জিতেছে দু’বার। এ বার জিতলে তৃতীয় বার হয়ে যাবে। এটাকে বলে ঐতিহ্য!’’ দ্রুত যোগ করেন, ‘‘আরও কাকে ঐতিহ্য বলে জানেন? ম্যাঞ্চেস্টার সিটি দলটার দিকে তাকান। ওটামেন্ডি, কেভিন দ্য ব্রুইন, ফার্নান্দিনহো, সিলভা, স্টার্লিং, আগুয়েরো— দেখুন কী ভাবে অতীতে ওরা ভাল ফুটবলারদের উপর গত কয়েক বছর ধরে লগ্নি করেছে। সেই তুলনায় ম্যান ইউনাইটেড ফুটবলার, যাদের গত বছরের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তারা কোথায় খেলছে দেখুন। কী ভাবে খেলছে, দেখুন।’’ মোরিনহোর ইঙ্গিত ওয়েন রুনি, বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টেইগার, ভিক্টর ভালদেস, হেরনিক মাখতারিয়ান, আডনান জানুজাই-দের দিকে। যাঁরা কেউ খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই।

এই মুহূর্তে তাঁর হাতে যে দল আছে, তা নিয়ে যে দারুণ কোনও স্বপ্ন না দেখাই ভাল, সেটাও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন তিনি। বলছেন, ‘‘মাতিচ এবং লুকাকু উচ্চ স্তরের ফুটবল খেলছে, এটা আমি বলতে পারি। কারা নিম্নমানের, তাদের নাম করতে পারব না।’’ এই দল নিয়ে পরের বছরেও ইপিএল জয়ের দৌড়ে থাকার কোনও নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারছেন না। শুনিয়ে রাখছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও খুব বেশি স্বপ্ন না দেখাই ভাল। ‘‘আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করি, কিন্তু বাস্তবটা হচ্ছে অন্য অনেক ক্লাব আছে, যারা জেতার জন্য তৈরি। তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমি বলছি না, ওদের ধরা সম্ভব নয়। আমার কোচিংয়ে ইন্টার মিলান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। সেই চেষ্টা আবার করব। কিন্তু বাস্তবটাও মাথায় রাখা দরকার।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হতে চাইল, শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। সেরা মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ফুটবলারদের বুঝতে হবে, উচ্চ প্রত্যাশার সঙ্গে কী ভাবে তাল মেলাতে হয়। আমি চাই না ভক্তদের প্রত্যাশা কম থাকুক। প্রত্যাশা যদি না থাকে, তা হলে আর কী হল!’’ সমালোচকদের পাল্টা জবাব দিতে তৈরি এই ১২ মিনিটের বিবৃতি তিনি শেষ করেন এই বলে যে, ‘‘আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না। টানেলের মধ্যে ঢুকে অদৃশ্য হয়ে যাব না। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে আমি ভীত নই।’’ ম্যান ইউ কর্তারা তাঁর এই বক্তব্য কী চোখে দেখেন, আগ্রহ নিয়ে তারই অপেক্ষায় ফুটবল মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE