Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Meher Muhammad Khaleel

‘এসে দেখুন, পাকিস্তান অনেক বদলে গিয়েছে’

খালিলের কথায়, ‘‘ওঁদের কাছ থেকে যে সম্মান পেয়েছি, তা যে কখনও ভোলা সম্ভব নয়!’’ তাঁর আরও সংযোজন, “ওঁদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার পর জানতে পারি, আমাকে না নিয়ে ওঁরা পাকিস্তান ছাড়তে রাজি হননি।’’

মেহের মহম্মদ খালিল। ছবি: এএফপি।

মেহের মহম্মদ খালিল। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৭ ১৭:৫৫
Share: Save:

সে দিনের সকালটা আজও মনে আছে তাঁর। ৩ মার্চ, ২০০৯। আর পাঁচটা দিনের মতো লাহৌর শহরে সব স্বাভাবিক ছিল।

সেই সময় শ্রীলঙ্কা টিম পাক সফরে এসেছে। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে যাওয়া টিম শ্রীলঙ্কাকে বাসে চাপিয়ে তিনি গদ্দাফি স্টেডিয়াম নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করেই সেই বাসকে লক্ষ্য করে চলতে থাকে এলোপাথাড়ি গুলি। পথ চলতি মানুষের এলোমেলো দৌড়, ক্রিকেটারদের উৎকণ্ঠা— এক মুহূর্তের জন্য ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন বাসচালক মেহের মহম্মদ খালিল।

আরও পড়ুন: ভারতীয় দলের লাগাতার সাফল্যের মূল কারণ জানালেন রোহিত শর্মা

প্রায় সাড়ে আট বছর পরে ফের শ্রীলঙ্কাকে নিজের দেশে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খালিল বলেন, ‘‘আপনারা পাকিস্তানে এসে খেলুন। এখানকার পরিস্থিতি এখন অনেক বদলে গিয়েছে। আমি আবার আপনাদের বাসে করে মাঠে নিয়ে যাব। ঘোরাব।” আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বটে, কিন্তু ক্রিকেটারদের ‘ভয়’ সম্পর্কেও অবগত খালিল। তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানে এসে খেলো— কথাটা বলা অনেক সহজ। কিন্তু যাঁরা ওই মুহূর্তে ছিলেন, তাঁরা জানেন ভয় কাটানো কতটা কঠিন! এত সহজে সেটা ভোলা যায় না।”

আরও পড়ুন: কুম্বলের ৪৭তম জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক তাঁর কিছু অনন্য নজির

ঘটনার আট বছর পেরিয়ে গেলেও সেই দিনের ঘটনা দগদগে রয়েছে মেহেরের মনে। তাঁর কথায়, “প্রথমে আমার মনে হয়েছিল, শ্রীলঙ্কা দলকে সংবর্ধনা দিতেই হয়তো আতশবাজি জ্বালানো হয়েছে। মুহূর্তেই আমার ধারণা বদলে যায়।’’ তিনি লুকিং গ্লাসে দেখেছিলেন, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারেরা সিটের তলায় ঢুকে নিজেদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তার পরেই নজর পড়ে রাস্তার ধারে, ‘‘দেখি এক জন বাসটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। পিছন থেকে শ্রীলঙ্কান প্লেয়ারদের আওয়াজ শুনতে পাই, তারা বলছে গো! গো! গো!’’ তার পরেই মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খালিল। তাঁর কথায়, ‘‘তখনই ঠিক করি, যাই হয়ে যাক, বাস আমি থামাব না। দ্বিতীয় গিয়ারে আট সিলিন্ডারের বাসকে গতি বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু মাথায় ছিল, কোনও না কোনও ভাবে আমাকে ওখান থেকে বেরতেই হবে।”

পরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা খালিলকে ধন্যবাদ জানান। খালিলের কথায়, ‘‘ওঁদের কাছ থেকে যে সম্মান পেয়েছি, তা যে কখনও ভোলা সম্ভব নয়!’’ তাঁর আরও সংযোজন, “ওঁদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার পর জানতে পারি, আমাকে না নিয়ে ওঁরা পাকিস্তান ছাড়তে রাজি হননি।’’ এর পর মুরলীধরন, সঙ্গাকারা, মেন্ডিস, সামারাবীরা, মাহেলা— প্রত্যেকেই তাঁর জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের কাছে যা অর্থ ছিল সবই একটা খামে ভরে আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন।”

পরে অবশ্য বিশেষ অতিথি হয়ে ১০ দিনের সফরে শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলেন খালিল। সেখানে শ্রীলঙ্কা দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন খালিল। তবে শ্রীলঙ্কা সফর তাঁর জীবনে যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে তা-ও এ দিন মনে করিয়ে দেন খালিল। তিনি বলেন, “শ্রীলঙ্কায় কোনও মলে যখন আমি কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম বা অনুষ্ঠানে আমায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তখন ওখানকার মানুষের যে ভালবাসা এবং সম্মান আমি পেয়েছি তা এক কথায় অতুলনীয়। প্রত্যেকেই হিরো! হিরো! হিরো! করছিল আমায় দেখে।’’ খালিলের এই সাহসিকতার জন্য দু’দেশের সরকারের পক্ষ থেকেও আর্থিক ভাবে সাহায্য করা হয় তাঁকে। আর্থিক সাহায্য করে পিসিবি এবং লাহৌরের বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীও। পরে তিনটি বাসও কেনেন খালিল। কিন্তু, রক্ষণাবেক্ষনের সমস্যার কারণে দু’টি বাস বিক্রি করে দিতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE