Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মিনার্ভার মঞ্চে আজ মোহনবাগানের ‘পালা’

শীতের কুয়াশা আর পুণ্যার্থীদের জ্বালানো উনুনের ধোঁয়ায় সকাল সা়ড়ে আটটাতেও দেখা যায় না অল্প দূরের গাছপালা। সবই ধোঁয়া ধোঁয়া।

ক্লাস: মোহনবাগানের অনুশীলনে কোচের ভূমিকায় সনি নর্দে। মঙ্গলবার মোহনবাগান মাঠে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ক্লাস: মোহনবাগানের অনুশীলনে কোচের ভূমিকায় সনি নর্দে। মঙ্গলবার মোহনবাগান মাঠে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

গঙ্গাসাগর মেলার তাঁবু বাবুঘাটের পাশ দিয়ে চলে এসেছে মোহনবাগান মাঠের র‌্যাম্পার্ট পর্যন্ত ।

শীতের কুয়াশা আর পুণ্যার্থীদের জ্বালানো উনুনের ধোঁয়ায় সকাল সা়ড়ে আটটাতেও দেখা যায় না অল্প দূরের গাছপালা। সবই ধোঁয়া ধোঁয়া।

আর কী আশ্চর্য! মোহনবাগানের অনুশীলনে খণ্ডচিত্রের সঙ্গে মিলে যায় যেন প্রকৃতির এই আবহ। অনেক চেষ্টা করেও বোঝা যায় না, সঞ্জয় সেন-হীন টিমের স্ট্র্যাটেজি তৈরির দায়িত্বে আসলে কে? কোচিংয়ের সহজ পাঠটা এখন কে পড়াচ্ছেন সবুজ-মেরুনে? বরং মনে হয়, লিগ টেবলের পাঁচ নম্বরে থাকা ক্লাবে এখন চলছে সব অর্থেই ‘কোচিং সমবায়’।

দৃশ্য এক: শিল্টন পাল-সহ পুরো টিম দাঁড়িয়ে মাঠের মধ্যিখানে। সনি নর্দে সেখানে দাঁড়িয়ে হাত-পা নেড়ে বোঝাচ্ছেন কী ভাবে পাস বাড়াতে হবে, উইং প্লে কী ভাবে করা উচিত! সেখানে অন্যদের সঙ্গে ‘শিক্ষার্থী’ চিফ কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও!

দৃশ্য দুই: হাঁটুর ব্যথায় খোঁড়াতে থাকা আনসুমানা ক্রোমা বা দিপান্দা ডিকার সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন চিফ কোচ শঙ্করলাল। অন্য দিকে গোলকিপার কোচ অর্পণ দে রক্ষণের ফুটবলারদের বোঝাচ্ছেন, কী ভাবে বিপক্ষের গোল আটকাতে হবে।

দৃশ্য তিন: টিম যখন বল ছাড়া শ্যাডো অনুশীলন করছে, তখন মাঠের পাশে ফিজিওর কাছে ট্রেনিং নিচ্ছিলেন ডিকা-ক্রোমা-শিল্টনরা। দেখা গেল সেখানে বিভিন্ন কর্তা দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করছেন, কে কে খেলতে পারবে!

পৌষ সংক্রান্তির আগে পিঠে- পায়েস-পাটিসাপটার মতো সুস্বাদু অনেক উপকরণই হাজির মঙ্গলবার সকালের মোহনবাগানে। কিন্তু মিষ্টিটাই যে নেই সেখানে!

এ বারের আই লিগের কালো ঘোড়া মিনার্ভা পঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন কার্যত অনুশীলনই তো হল না মোহনবাগানে! শুধুই নির্দেশ, আলোচনা আর আশঙ্কার চোরাস্রোত। ঘণ্টাখানেকের সূচিতে হয়তো মিনিট পনেরো বল নিয়ে দৌড়োদৌড়ি হল। এবং কী আশ্চর্য, সেখান থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে শঙ্করলালের গলায় উদ্বেগ, ‘‘আই লিগে যে টিমগুলো খেলছে তাদের মধ্যে সবথেকে ধারাবাহিক এবং শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কাল খেলতে নামব আমরা।’’ সঙ্গে সংযোজন, ‘‘আত্মবিশ্বাস ফেরাতে হবে। অনেক চেষ্টা করেও আগে যা ফেরানো যায়নি। আইজল ম্যাচ জেতার পর সেটা কিছুটা ফিরেছে। আসলে সপ্তাহের প্রতিদিন তো আর রবিবার হয় না।’’ কোচিং ডিগ্রি নেওয়ার সময় কোচেদের শেখানো হয়, কী ভাবে সামলাতে হবে মিডিয়া এবং ক্লাব কর্তাদের। চার বছর ধরে পালতোলা নৌকার সওয়ারি বুদ্ধিমান শঙ্কর সেটা রপ্ত করেছেন। টিম নির্বাচন নিয়ে শুধু নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সবার সঙ্গে সেটা ভাগ করে নেওয়ার মন্ত্র তাই তাঁর কোচিং ম্যানুয়ালে হাজির। অনুশীলনে হয়তো তারই প্রতিফলন। যা ছিল না ডাকাবুকো সঞ্জয়ের জমানায়।

প্রথম জাতীয় লিগ জয়ী জেসিটি ভারতীয় ফুটবল থেকে মুছে গিয়েছে বহু দিন। সোনালি গমের রাজ্য থেকে হঠাৎই সেই শূন্যস্থান পুরণ করতে হাজির যেন মিনার্ভা পঞ্জাব। গত বারের চ্যাম্পিয়ন আইজলের মতোই এ বারের আই লিগ আকাশে তাঁরা হাজির উজ্জ্বল ধ্রুবতারার মতো। সেখানে ‘মিলে সুর তুমহারা’র মতো টিম গেমের জয়গান। কোচ খগেন সিংহ এক সময় খেলেছেন বাসুদেব মণ্ডল, দুলাল বিশ্বাসদের বিরুদ্ধে। এয়ার ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে হারিয়েছেন মোহনবাগানকে। সবুজ-মেরুন লনে দাঁড়িয়ে সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরার সময় তাঁর আক্ষেপ, ‘‘রেনেডি সিংহ, তুলুঙ্গাদের মতো কলকাতায় খেলার ইচ্ছে থাকলেও খেলা হয়নি। হলে হয়তো সবাই চিনত এক ডাকে।’’ আই লিগে নিজেকে চেনানোর সেই বারুদ বুকে নিয়ে শহরে হাজির তিনি। বলছিলেন, ‘‘কোনও একজন বিদেশির উপর নির্ভরশীল নই আমরা। টিম গেমই আমাদের সম্পদ।’’ পঞ্জাবে গিয়ে মিনার্ভাকে হারাতে পারেনি মোহনবাগান। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১ গোলে। সবুজ-মেরুনের গোলটি যিনি করেছিলেন সেই সনি-ই নেই এই ম্যাচে। সেটা যে তাদের সুবিধা করে দেবে, অকপটেই জানাচ্ছেন খগেন। ‘‘মাথায় রাখছি জিতলে ইস্টবেঙ্গলকে টপকে লিগ শীর্ষে চলে যাব। ফুটবল হল মাইন্ড গেম। সেটা খেলতে চাই।’’ বলার সময় শান্ত গলায় আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। সেটা থাকবেই বা না কেন? টিমে যে রয়েছেন দুই সফল স্ট্রাইকার ‘ভুটানের রোনাল্ডো’ চেঞ্চো গেলশেন আর আইভরি কোস্টের লাগো ডোগবো। ছয় পঞ্জাবী টাট্টু ঘোড়ার সঙ্গে দুই বঙ্গসন্তান শৌভিক দাশ আর রাহুল দাশও। শৌভিক তো আবার এ বছরের শুরুতে ছিলেন মোহনবাগানেই। কলকাতা লিগে খেলার সুযোগ না পেয়ে চলে গিয়েছেন পঞ্জাবে। তাঁর চোখেও দেখিয়ে দেওয়ার আগুন সতীর্থদের মতোই। সেই আগুনে কি জল ঢালে নেভাতে পারবেন কিংসলে-কিংশুকরা?

মিনার্ভা মঞ্চের ‘বাগান’ পালায় কিন্তু আজ খেতাব-যুদ্ধে টিকে থাকারই অগ্নিপরীক্ষা গঙ্গাপাড়ের ক্লাবের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minerva Mohun Bagan Football I League
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE