Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সেই আঁধার চলছে, উনিশে ব্রাত্য বাংলা

রবিবার বৈঠক হলেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এ দিন দল ঘোষণা করলে দেখা গেল বাংলার কোনও ক্রিকেটারের স্থান হয়নি সেই দলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১০
Share: Save:

কলকাতায় হল অনূর্ধ্ব উনিশের নির্বাচনী বৈঠক। কে জানত বঙ্গ ক্রিকেটে করুণ চিত্র হয়ে থাকবে নিজেদের শহরে হওয়া সেই বৈঠক।

রবিবার বৈঠক হলেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এ দিন দল ঘোষণা করলে দেখা গেল বাংলার কোনও ক্রিকেটারের স্থান হয়নি সেই দলে। তা হলে কি বাংলায় অনূর্ধ্ব উনিশ স্তরে যোগ্য কোনও ক্রিকেটারই নেই?

এই প্রশ্ন উঠে পড়লেও ঘরোয়া ক্রিকেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহলের কাছে ঘটনাটি বিস্ময়করই দেখাবে। কারণ, শেষ বারেও দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব উনিশ কোচবিহার ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেই টিমের অনেকের নাকি বয়সসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ। বয়স অনুযায়ী যাঁরা সেই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবেন, তাঁদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে বাংলার অনেকে যোগ্য বলে বিবেচিত হননি। তবু বলতেই হবে, বাংলার ক্রিকেটের দারুণ কিছু সম্ভাবনাময় পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ভিভ রিচার্ডসের ৩৩ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন ডানস্টান

হালফিলে বাংলা থেকে জাতীয় স্তরে খুব বেশি ক্রিকেটার খেলেননি। অনূর্ধ্ব উনিশে দল হিসেবে ভাল ফল করলেও দু’এক জন ক্রিকেটারই নিয়মিতভাবে সুযোগ পেয়েছেন। হালফিলে বাঁ হাতি পেসার কনিষ্ক শেঠ বা স্পিনার প্রদীপ্ত প্রামাণিক ছাড়া সেভাবে কেউ উঠে আসেননি। আর এক জোরে বোলার ঈশান পোড়েল খুব সম্ভাবনাময় বলে শোনা গেলেও এশিয়া কাপের দলে তার সুযোগ হয়নি। বাংলার যুব দলের কোচ গৌতম সোমের (জুনিয়র) কথায়, ‘‘ঈশান বয়সের দিক থেকে যোগ্য। অনূর্ধ্ব তেইশে শেষ ম্যাচেও পাঁচ উইকেট পেয়েছে। ও এশিয়া কাপের দলে নেই জেনে অবাকই হয়েছি।’’ তার পরেই অবশ্য যোগ করছেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ। হয়তো নির্বাচকেরা নতুন ছেলেদের দেখে নিচ্ছেন। তার পর ঈশানকে হয়তো ঠিকই ডেকে নেওয়া হবে।’’

কতটা গ্রহণযোগ্য এই যুক্তি তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। ফেব্রুয়ারিতে যদি বিশ্বকাপ হয়ই, তাহলে এশিয়া কাপে খেলিয়ে তৈরি রাখা হবে না কেন? সিএবি-তে গত কয়েক বছর ধরে যিনি জুনিয়র ক্রিকেটের দায়িত্ব সামলেছেন, সেই সুবীর (বাবলু) গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বাংলার যে ব্যাচটা খুব ভাল ছিল, তারাই গত বার কোচবিহার ট্রফি জিতল। তাদের অনেকের বয়সসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। নতুনদের মধ্যে খুব সম্ভাবনাময় কেউ আছে কি না, সেটা অপেক্ষা করে দেখতে হবে।’’ তিনি মানছেন, এশিয়া কাপের দলে বাংলা থেকে একজনেরও সুযোগ না পাওয়াটা অবশ্যই চিন্তার কারণ। লোঢা কমিটির সুপারিশ কার্যকর করায় আপাতত সিএবি-তে নেই সুবীরবাবু। জুনিয়র ক্রিকেট দেখাশোনা চলছে সাময়িক আয়োজনের ভিত্তিতে।

কেউ কেউ দেশ জুড়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়াকে দায়ী করছেন। প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বললেন, ‘‘কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঁচ থেকে কমিয়ে তিন নির্বাচক করে দেওয়াটা ক্ষতি করছে। অন্তত জুনিয়র ক্রিকেটে তিন নির্বাচক দিয়ে পুরো কাজ সামলানো খুবই কঠিন।’’ এই মুহূর্তে তিন জন নির্বাচকের কেউ বাংলা থেকে নেই। আগের মতো নিজেদের ক্রিকেটারদের হয়ে গলা ফাটানোর জন্যও তাই এ রাজ্য থেকে কোনও নির্বাচকই থাকছেন না।

শুধু জুনিয়র ক্রিকেট বলেই নয়, সিনিয়রেও খুব ভাল ছবি দেখা যাচ্ছে না। টেস্ট দলে এ রাজ্য থেকে আছেন ঋদ্ধিমান সাহা এবং মহম্মদ শামি। তা-ও শামি বাংলায় এসেছেন পরে। অশোক ডিন্ডার মতো লড়াকু পেসার প্রত্যেক মরসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর উইকেট তুলেও ডাক পান না। মনোজ তিওয়ারি আইপিএলে দারুণ মরসুমের পরেও ডাক পাননি। এমনকী, ‘এ’ দলেও জায়গা হচ্ছে না তাঁদের। জুনিয়রে না থাকলেও সিনিয়রে কিন্তু বাংলা থেকেই জাতীয় নির্বাচক আছেন। ডিন্ডা এ দিনও রঞ্জি ট্রফিতে ২১ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন। অধুনা বাংলা থেকে জাতীয় নির্বাচক এবং প্রাক্তন ক্রিকেটার দেবাঙ্গ গাঁধী এ বার ডিন্ডার জন্য কতটা উদ্যোগী হন, তা দেখার অপেক্ষায় বাংলার ক্রিকেটমহল।

যদিও শুধু বঞ্চনার কাহিনি বলে বাংলার ক্রিকেটের এই দুর্দশার ছবিকে আর ঢেকে রাখা যাবে না। ভারতীয় দলে এখন তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহাল, হার্দিক পাণ্ড্য-রা রীতিমতো শাসন করছেন আন্তর্জাতিক স্তরে। সেখানে বঙ্গ ক্রিকেটে ভিশন ২০২০-র মতো প্রকল্প, বিশাল অর্থ দিয়ে ভিভিএস লক্ষ্মণ বা মুথাইয়া মুরলীধরনের মতো বিশেষজ্ঞ এনেও নতুন মুখ উঠে আসছে কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BCCI Cricket U-19 team India Bengal Cricketers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE