Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিল্প বনাম শক্তির লড়াইয়ে এগিয়ে রাখছি রোনাল্ডোদের

মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল— দুই বড় ক্লাবের হয়েই ভারতীয় ফুটবলের মক্কায় আমি খেলেছি। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরাই ‘কালো হরিণ’ নামকরণ করেছিলেন আমার।

মহড়া: এল ক্লাসিকোর আগে প্রস্তুতি মেসি-রোনাল্ডোদের।

মহড়া: এল ক্লাসিকোর আগে প্রস্তুতি মেসি-রোনাল্ডোদের।

আই এম বিজয়ন
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৯
Share: Save:

লা লিগায় এল ক্লাসিকো নিয়ে লিখতে বসে কলকাতার কথা খুব মনে পড়ছে।

মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল— দুই বড় ক্লাবের হয়েই ভারতীয় ফুটবলের মক্কায় আমি খেলেছি। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরাই ‘কালো হরিণ’ নামকরণ করেছিলেন আমার। তাই ওই শহরটার প্রসঙ্গ উঠলেই রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি। দেশের অন্য শহরের সঙ্গে কলকাতার কোনও তুলনাই হয় না। মাঠে পা দেওয়া মাত্র দর্শকদের চিৎকারে শরীরে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হতো। কলকাতার দর্শক, ময়দান আমার স্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। আনন্দবাজারের সৌজন্যে আরও একবার আমার প্রিয় শহরের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হল।

রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্বৈরথ। বার্সেলোনায় লিওনেল মেসি। রিয়াল মাদ্রিদে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বিশ্বের সেরা দুই তারকার লড়াই দেখার চেয়ে আকর্ষণীয় কিছুই হতে পারে না। দু’জনেরই ট্রফির ক্যাবিনেটে পাঁচটি করে ব্যালন ডি’ওর ট্রফি। এটা এমন একটা ম্যাচ, যেখানে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকবে ওরা।

এল ক্লাসিকো বলে নয়। এই ধরনের ম্যাচের আগে সব ফুটবলারেরই এ রকম মানসিকতা থাকে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আমার এই উপলব্ধি হয়েছে। ডার্বির আগে মনের মধ্যে অদ্ভুত অস্থিরতা তৈরি হতো। মনকে শান্ত রাখার জন্য আমি সারা দিন ফ্ল্যাটে বসে মালয়ালি সিনেমা দেখতাম। নিজেকে বলতাম, তোমার খেলা দেখতে যাঁরা আসছেন, তাঁদের হতাশ কোরো না। এই ম্যাচটাই হচ্ছে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার মঞ্চ। মেসি, রোনাল্ডোরও হয়তো এ রকমই মনের অবস্থা হয়।

এল ক্লাসিকোর দিন চারেক আগে অনুশীলন না করায় রোনাল্ডোর খেলা জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমি কিন্তু জানতাম, যে ভাবে হোক এই ম্যাচটায় ও খেলবে। কোনও ফুটবলারই এই ধরনের ম্যাচ মাঠের বাইরে থাকতে চায় না। আর রোনাল্ডো তো জন্মযোদ্ধা।

মেসির মতো অবিশ্বাস্য প্রতিভা নিয়ে জন্মায়নি সি আর সেভেন। শুধুমাত্র পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা ওকে পৌঁছে দিয়েছে খ্যাতির শিখরে। আমার ধারণাই সত্যি প্রমাণিত হল। শুক্রবার দলের সঙ্গে পুরোদমে অনুশীলন করে রোনাল্ডো বুঝিয়ে দিয়েছে, ও তৈরি। তা ছাড়া এই ম্যাচের উপরেই তো লা লিগায় রিয়ালের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

১৬ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে লিগ টেবলের শীর্ষে বার্সেলোনা। এক ম্যাচ কম খেলে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রিয়াল। চির প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১১ পয়েন্ট পিছিয়ে তারা। এল ক্লাসিকো জিততে না পারলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই ফিঁকে হয়ে যাবে রিয়ালের। সদ্য ক্লাব বিশ্বকাপ জেতা জিনেদিন জিদানের দল সেটা কখনওই চাইবে না। দ্বিতীয়ত, ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবাউতে নিজেদের দর্শকদের সামনে জয়ের অনুভূতিটাই আলাদা। দু’দলের মুখোমুখি সাক্ষাতে রিয়াল একটু এগিয়ে। ২৩৫টি ম্যাচের মধ্যে তারা জিতেছে ৯৫টি। বার্সেলোনার জয় ৯১টি। অমীমাংসিত ভাবে খেলা শেষ হয়েছে ৪৯ বার। পরিসংখ্যান দিয়ে অবশ্য এই ম্যাচের উত্তাপ মাপতে যাওয়া অবশ্য ভুল। বাস্তবটা হচ্ছে, লিগ টেবলে বার্সেলোনার চেয়ে পিছিয়ে রিয়াল।

রোনাল্ডোদের চেয়ে ১১ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলে কিন্তু মেসিদের খুব একটা স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। লিগ টেবলের দু’নম্বরে থাকা আতলেতিকো দে মাদ্রিদের সঙ্গে ব্যবধান মাত্র ছয় পয়েন্টের। তাই ওরাও মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে জয়ের জন্য। এই পরিস্থিতিতে আট মাস পরে সুস্থ হয়ে ওঠা মিডফিল্ডার রাফিনহা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বার্সেলোনা ম্যানেজার আর্নেস্তো ভালভার্দে-কে। কিন্তু স্ট্রাইকার পাকো আলকাসার-কে তিনি পাচ্ছেন না। তবে আমার মতে এই ম্যাচে মেসির লড়াইটা একটু কঠিন হবে রোনাল্ডোর চেয়ে। আর্জেন্তিনা অধিনায়ক বল নিয়ে অনায়াসে তিন-চার জনকে কাটিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেই কারণেই ওর খেলা বেশি মুগ্ধ করে। জিদানের মতো ম্যানেজার এল ক্লাসিকোয় কিন্তু মেসিকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেবেন না। হয়তো দেখা যাবে, ও বল ধরলেই রিয়ালের চার-পাঁচ জন একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়। মেসির সঙ্গে লুইস সুয়ারেসের বোঝাপড়াও দুর্দান্ত। রিয়ালের ফুটবলাররা শুরু থেকেই তা নষ্ট করে দিতে চাইবে।

রোনাল্ডোর প্রধান অস্ত্র পাওয়ার প্লে। বল বেশিক্ষণ ও পায়ে রাখে না। সতীর্থকে পাস দিয়েই গতি বাড়িয়ে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ে জায়গা নেই। ফলে ম্যান মার্কিং করে রোনাল্ডোকে আটকানো কঠিন। সি আর সেভেন-কে আটকানোর অস্ত্র হচ্ছে, জায়গা নিতে না দেওয়া।

শনিবার মাদ্রিদে শিল্প বনাম শক্তির লড়াইয়ে জিতবে তা হলে কে, সেটা সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE