নায়ক: রাজস্থান বোলারদের পাল্টা আক্রমণ আন্দ্রে রাসেলের। বুধবার ইডেনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর শেষ ওভারটা হয়ে যেতেই যখন ইডেন গর্জে উঠল ‘কে..কে..আর.... কে..কে..আর....’, তখন চার দিকের গ্যালারির দিকে একবার তাকিয়ে নিলেন দীনেশ কার্তিক। এই গ্যালারিই যে শুক্রবার ফের তাঁদের হয়ে গলা ফাটাবে। ফের ইডেনের দর্শকদের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব এখন তাঁদের কাঁধে।
মাঠের উচ্ছ্বাস পর্ব সেরে ড্রেসিংরুমে ফিরে আর এক প্রস্ত উৎসব হল নাইটদের। সারা ম্যাচে ইডেনের কর্পোরেট বক্সে বসে ছটফট করছিলেন নাইটদেরই এক জন। তিনি— কমলেশ নগরকোটি। ম্যাচ শেষে তিনিও নেমে এলেন মাঠে। জড়িয়ে ধরলেন সতীর্থদের। কমলেশকে উড়িয়ে আনা হয়েছে দলের একতা বজায় রাখার জন্য। তাঁর আসা সার্থক হয়েছে দেখে যে খুবই খুশি চোট পেয়ে আইপিএল থেকে ছিটকে যাওয়া তরুণ পেসার, তা তাঁর অভিব্যক্তিতেই স্পষ্ট।
আর বুধবারের জয়ের নায়ক আন্দ্রে রাসেল? তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে গোটা কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবির। তিনি কিন্তু ভুললেন না নাইটদের সবচেয়ে বড় ভক্ত বিশেষ ভাবে সক্ষম কিশোর হর্ষুলকে। ক্লাব হাউসের সামনে হুইল চেয়ারে অপেক্ষা করছিল সে। ম্যাচের সেরার স্মারক ছোট্ট গাড়িটা তাঁর হাতে দিয়ে রাসেল বললেন, ‘‘আজকের ম্যাচ উপভোগ করেছো? আমার ছয়গুলো উপভোগ করেছো?’’ উচ্ছ্বসিত তরুণ সমর্থকের উল্লাস দেখে এ বার রাসেল তাঁকে বললেন, ‘‘আমার এই ছোট্ট গাড়িটা তুমি নাও। এতে চড়ে আবার আমাদের ম্যাচ দেখতে আসবে।’’
এর পরে ড্রেসিংরুমের দিকে যেতে যেতে রাসেল কলকাতা নাইট শিবিরের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এই ইনিংসটার অপেক্ষাতেই ছিলাম। ভেবেই নিয়েছিলাম যে আজ আমাকে কিছু করতেই হবে। আর এ সব দিনে উইকেট কেমন, কতটা সাহায্য করবে, ও সব কিছু মাথায় থাকে না। তখন শুধু বল দেখো আর মারো।’’ এই কথাগুলো বলার পরেই গলা বুজে আসে তাঁর। কথা বন্ধ হয়ে যায়। বলেন, ‘‘আমি আর কিছু বলতে পারছি না। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’’
সাংবাদিক বৈঠকে এসে কুলদীপ যাদবও বলে গেলেন, ‘‘একা রাসেলই ম্যাচটা ওদের হাত থেকে বার করে নিল। আমরা তো ভেবেছিলাম ১৪০-১৪৫-এর বেশি তুলতেই পারব না। কিন্তু রাসেল এসে যা চালাতে শুরু করল, তাতেই ম্যাচটা ওদের কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সরে গেল। অসাধারণ ইনিংস খেলল। শেষ দিকের ওভারে ভাল বলও করেছে, ও-ই ম্যাচের সেরা।’’
অজিঙ্ক রাহানে ও সঞ্জু স্যামসন, যে দু’জন রাজস্থান রয়্যালসকে জয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের ফিরিয়ে দেন কুলদীপ ও পীযূষ চাওলা। রাহানের উইকেট নিয়ে কুলদীপ বলেন, ‘‘ওই সময় আজ্জু ভাইয়াকে আউট না করতে পারলে সমস্যায় পড়ে যেতাম। ও তখন ভাল ব্যাট করছিল। তবে আমি বাড়তি কিছুই করিনি। নিজের স্বাভাবিক বোলিংটা করেছি।’’
বুধবারের এই জয়ের পরে এ বার ফাইনালের আগে শেষ হার্ডলটা পেরোতে হবে কার্তিকদের। শুক্রবার সামনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। যারা লিগে এক নম্বর দল হলেও পরপর চারটি ম্যাচে হেরে ইডেনে নামবে। রবিবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের মায়াবী রাতের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছেন নাইটরা। কুলদীপ তো বলেই দিলেন, ‘‘হায়দরাবাদ খুবই ভাল দল। ওদের পক্ষে কঠিন হবে ম্যাচটা। ওরা অন্য একটা পরিবেশ থেকে অন্য রকম একটা উইকেটে (মুম্বই) খেলে এখানে আসছে। যেখানে ইডেনে আমাদের চেনা পরিবেশে নামব আমরা। সুতরাং শুক্রবারের ম্যাচে আমরাই এগিয়ে আছি।’’
দীনেশ কার্তিক এতটা আগ্রাসী না হলেও তিনি বলছেন, ‘‘পরের ম্যাচে দুটো সেরা দল একে অপরের মুখোমুখি হবে। ম্যাচটা আমাদের কাছে এখন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যারা স্নায়ুর জোর বজায় রাখতে পারবে, জয় তাদেরই।’’ আর ম্যাচের সেরা রাসেলও বাস্তববাদী। বললেন, ‘‘কোনও কিছুই নিশ্চিত নয়। আমাদের কাছে এখন প্রতিটা বল গুরুত্বপূর্ণ। আর পরের ম্যাচটা আমাদের কাছে নতুন একটা ম্যাচ।’’
মুম্বইয়ে ফাইনাল খেলতে যাওয়ার প্রস্তুতি যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। পরের ম্যাচের জন্য ‘কেকেআর হ্যায় তৈয়ার’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy