Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভারতীয় ক্রিকেটে আবার সৌরভ-সচিন যুগলবন্দি

দাদাগিরি? আইপিএল মরসুম ছা়ড়া করার কখন সময় পাবেন, জানেন না। কমেন্ট্রি? না এবং না। সিএবি? আপাতত থাকছে। এবিপি-সহ হাতেগোনা দৈনিকে কলাম লেখা? গেল। জাতীয় টিভি চ্যানেলে বিশেষজ্ঞের মতামত দেওয়ার লোভনীয় চুক্তি? গেল। আটলেটিকো? থাকবে তবে ইনভলভমেন্টের সময় অনেক কমে যেতে পারে। স্কুল গড়া-সহ অফিসের অজস্র কাজ? গো স্লো হয়ে যেতে বাধ্য। আগামী শনিবার থেকে জীবন আবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বদলাতে চলেছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের।

সেই জুটি। — ফাইল চিত্র

সেই জুটি। — ফাইল চিত্র

গৌতম ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:১৮
Share: Save:

দাদাগিরি?
আইপিএল মরসুম ছা়ড়া করার কখন সময় পাবেন, জানেন না।
কমেন্ট্রি?
না এবং না।
সিএবি?
আপাতত থাকছে।
এবিপি-সহ হাতেগোনা দৈনিকে কলাম লেখা?
গেল।
জাতীয় টিভি চ্যানেলে বিশেষজ্ঞের মতামত দেওয়ার লোভনীয় চুক্তি?
গেল।
আটলেটিকো?
থাকবে তবে ইনভলভমেন্টের সময় অনেক কমে যেতে পারে।
স্কুল গড়া-সহ অফিসের অজস্র কাজ?
গো স্লো হয়ে যেতে বাধ্য।
আগামী শনিবার থেকে জীবন আবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বদলাতে চলেছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। সে দিনই কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে বসে তিনি বোর্ডের চুক্তিতে সই করবেন। জগমোহন ডালমিয়া তাঁর বোর্ড শাসনের জমানায় নানা সময়ে চমক দিয়েছেন মহাতারকাদের ব্যবহারে। কখনও কপিল দেবকে কোচ করেছেন। কখনও সুনীল গাওস্করকে উপদেষ্টা হিসেবে টিমের সঙ্গে রেখেছেন। কিন্তু নিজের পঁচাত্তরতম জন্মদিনের দু’দিনের মধ্যে ডালমিয়া আরও একটা মহাতারা সম্মেলন ঘটালেন সচিন-সৌরভকে দেশের ক্রিকেটমঞ্চে ফেরত এনে!

সচিন-সৌরভ দেশের হয়ে শেষ একসঙ্গে ওপেন করেন ২০০৭-এর গ্বালিয়রে। আট বছর পর এই জুড়ি আবার ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোতে ফেরত। এ বার হাতে ব্যাট নেই। কিন্তু আছে প্রভূত ক্ষমতা। বলতে গেলে জাতীয় দলের ক্রিকেট পরিচালনার যাবতীয় ক্রিকেটীয় দায়িত্ব এঁদের হাতে তুলে দিল বিসিসিআই।

এঁরা দল চালাবেন। নতুন কোচ ঠিক করবেন। নির্বাচকদের নীতি ঠিক করে দেবেন। জুনিয়র ক্রিকেট পরিচালনা করবেন। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি চালাবেন। এঁরাই ঠিক করবেন, জাতীয় মিডিয়ার সঙ্গে সিনিয়র টিমের সম্পর্ক শ্রীনির আমলের মতো পাতচাপা থাকবে, নাকি আগল খুলে দেওয়া হবে? জুড়ির সঙ্গে থাকবেন ভিভিএস লক্ষ্ণণ। কমিটির কর্তৃত্বে কে থাকবেন, কাজের সীমান্ত কী হবে সে সব নির্দিষ্ট হবে আগামী শনিবার বোর্ড প্রেসিডেন্টের থিয়েটার রোডের অফিসে। সৌরভ-সচিন-লক্ষ্মণ ত্রয়ী সেখানে বসবেন বোর্ড সচিব এবং যাঁর অফিস সেই ডালমিয়ার সঙ্গে।

বোর্ড যে অভূতপূর্ব ভাবে এমন কমিটির কথা ভাবছে সেই এক্সক্লুসিভ খবর আনন্দবাজারের খেলার পাতায় প্রথম বার হয় গত ২৬ এপ্রিল। কিন্তু তার পর কমিটির ঘোষণায় আট সপ্তাহেরও বেশি দেরি যে কেন হচ্ছিল তা নিয়ে ক্রিকেটমহলে একরাশ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সোমবার জানা গেল দেরির অন্যতম কারণ তেন্ডুলকরের সময় নেওয়া। দ্রাবিড় না বলার পর তাঁর বিকল্প লক্ষ্মণেরও এক কথায় রাজি না হওয়া। শেষমেশ লক্ষ্মণ-সচিন দু’জনেরই সবুজ সঙ্কেত পাওয়া যায় রোববার।

এর পর সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর কনফারেন্স কলে কথা বলেন তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে। সল্টলেকের যাদবপুর মাঠে তখন সৌরভ-ভিভিএস। আর মুম্বইয়ে সচিন। দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট কথা হয় কমিটিতে কার কী ভূমিকা হতে যাচ্ছে তা নিয়ে। কল শেষ হওয়ার পর অনুরাগ বেরিয়ে এসে টুইট করেন, ‘বিসিসিআই সম্মানিত যে তিন লেজেন্ড ক্রিকেট নিয়ে জড়িত থাকতে রাজি হয়েছেন।’ ক্রিকেটারদের কেউ সরকারি ভাবে এ নিয়ে মুখ খোলেননি। শনিবার সরকারি ঘোষণা করার আগে তাঁরা কোনও রকম কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নন।

এমন ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি নিয়োগ যেমন ভারতীয় ক্রিকেটের তিরাশি বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন, তেমন ব্যতিক্রমী এ ভাবে বোর্ডের জরুরি ঘোষণা টুইট করা!

আপাতত অবশ্য টুইট করে খবর জানানোর চেয়েও বিস্ময় তৈরি হয়েছে এমন হাই পাওয়ার্ড কমিটি কি মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে ভারতীয় ক্রিকেটের? নাকি অধিক তারকা সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবে? কারও কারও মনে হচ্ছে এই কমিটির কাজে ওভারল্যাপিং এসে যাবে না তো যে একটা আর একটার সঙ্গে জড়িয়ে গেল?

আপাতত যে রূপরেখা নির্দিষ্ট হয়েছে তাতে অবশ্য ওভারল্যাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম। টেকনিক্যালি হয়তো তেন্ডুলকরই থাকবেন কমিটির শীর্ষে। কিন্তু আসল কাজটা সচিন নয়, সৌরভের কাঁধে থাকছে— ভারতের সিনিয়র দল সামলানো। লক্ষ্মণকে দেওয়া হবে সেই এলাকা যা দ্রাবিড়ের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। অনূর্ধ্ব উনিশ স্তর থেকে প্লেয়ার তুলে আনা এবং জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দায়িত্ব। তাঁকে এখন থেকে নিয়মিত হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু করতে হবে। সৌরভ? তিনি প্রায় সব সফরেই যাবেন সিনিয়র দলের সঙ্গে।

যা আভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে এই কমিটি যাকেই কোচ করুক, অঘোষিত নন প্লেয়িং শীর্ষ মস্তিষ্ক হবেন সৌরভই। রাতে সিএবি দফতরে বসে তিনি বোঝাবার চেষ্টা করছিলেন, ‘‘আমার রোল তিন নম্বরে। প্রথমে ক্যাপ্টেন। তার পর কোচ। তার পরে আমি।’’ এই বিনয়ে বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। সৌরভ দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন মানে তিনিই দল চালাবেন। বা তার চেয়েও সিনিয়র টিমের ক্রিকেটনীতি ঠিক করবেন।

নতুন ‘চাণক্য’। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

সচিন সময় দেবেন ব্যাটসম্যানদের তৈরি করার পিছনে। বিদেশ সফরের আগে টিমের ব্যাটিং ইউনিটকে নিয়ম করে তাঁর কাছে যেতে হবে বান্দ্রা কুর্লার মাঠে। তিনি বকলমে টিমের ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ।

কিন্তু ইংল্যান্ড ক্রিকেটে যে কাজটা অ্যান্ড্রু স্ট্রস যে এ মুহূর্তে করছেন, অর্থাৎ সর্বাত্মক নীতি তৈরি। পিটারসেন ফিরবেন কি না, ইংল্যান্ড বিদেশ সফরের আগে ক’টা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলবে? সেগুলো সব বেহালার বাঁ হাতির দায়িত্বেই থাকবে।

যুবরাজ-জাহিরদের গ্রুপটা কি তা হলে অবসর না নিয়ে শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারেন? সৌরভ উত্তর দিলেন না। ‘‘এখন আমাদের কথা বলার অনুমতি নেই।’’ তার পর বললেন, ‘‘হরভজন তো ফিরল না কি?’’

ধোনির এত দিনের সাজানো সংসারে সর্বশক্তি সমেত দাদার রোমাঞ্চকর কামব্যাক— আইপিএলের বিগত দেড় মাসেও এত উত্তেজক কিছু ঘটেনি!

বাংলাদেশে কে?

ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি ঠিক করে ফেললেও বাংলাদেশ সফরে দল নিয়ে কে যাবেন, ঠিক হল না। আর দিন সাতেকের মধ্যে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে ভারতীয় টিম। জল্পনা চলছে, ছত্রিশ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না। বোর্ড চায় রবি শাস্ত্রী টিম নিয়ে যান। আগে বোর্ডের এই প্রস্তাবে শাস্ত্রী না করে দেন। এই পরিস্থিতিতে শাস্ত্রীকে আবার প্রস্তাব দেওয়া হল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শাস্ত্রী কী করবেন? এই মুহূর্তে তিনি দুবাইয়ে। সেখান থেকে লন্ডন চলে যাওয়ার কথা। এখন নতুন বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলে তিনি হয়তো সিদ্ধান্ত বদলে দুবাই থেকে ফেরত চলে আসবেন। সে ক্ষেত্রে টিমের সঙ্গে সৌরভের বিদেশ সফর জিম্বাবোয়ে সিরিজ দিয়ে শুরু হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE