Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিদানে বিরাটদের কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই

ভারত-পাক স্বাধীনতা দিবসের আগে শান্তির বার্তা আফ্রিদির

তিনি, শাহিদ আফ্রিদি— ভারত-পাকিস্তানের আরও এক স্বাধীনতা দিবসের আগে ওয়াঘার ও পার থেকে শোনালেন নিজের স্বপ্নের কথা। নিজের নতুন লড়াইয়ের শপথ।

মাঠের বাইরে একে অন্যের পাশে আফ্রিদি-কোহালি। ফাইল চিত্র

মাঠের বাইরে একে অন্যের পাশে আফ্রিদি-কোহালি। ফাইল চিত্র

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৫:০২
Share: Save:

থর মরুভূমির ধুধু প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্যন্ত কিছু গ্রাম। যেখানে হাসপাতাল তো দূর অস্ত্, খাবার জলও নেই। বাচ্চারা জন্ম নেওয়ার তিন মাস পরে থেকেই মৃত্যু যাদের ওপর থাবা বসায়।

তিনি শপথ করেছেন, সেই মৃত্যুপুরীতে জীবনের মন্ত্র শোনানোর।

পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক গ্রাম আছে, যেখানে জলসঙ্কট সাধারণ মানুষের নিত্যসঙ্গী।

তিনি শপথ করছেন, তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা মেটাবেন।

প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই উত্তপ্ত হোক না কেন, এখনও এই দুই দেশ হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারে বলে তাঁর বিশ্বাস।

তিনি স্বপ্ন দেখছেন, ওয়াঘা পেরিয়ে এসে ভারতের মাটিতেও শান্তি-সম্প্রীতি-সমাজসেবার বীজ বপন করতে পারবেন।

তিনি, শাহিদ আফ্রিদি— ভারত-পাকিস্তানের আরও এক স্বাধীনতা দিবসের আগে ওয়াঘার ও পার থেকে শোনালেন নিজের স্বপ্নের কথা। নিজের নতুন লড়াইয়ের শপথ। ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে আসার পরে এখন আমার দ্বিতীয় ইনিংস চলছে,’’ ফোনে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলছিলেন পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার। সমাজসেবার পাশে এখনও টুকটাক ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যস্ততা তাঁর নিত্যসঙ্গী। বেশ কয়েক বারের চেষ্টার পরে সাক্ষাৎকারের জন্য সময় বার করতে পারলেন ‘চিরতরুণ’ এই ক্রিকেটার। ‘‘জীবনের এই ইনিংসটায় আমার লক্ষ্য মানুযের জন্য কিছু করা। আল্লা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন, আমি এ বার মানুষকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই।’’

ঠিক কী কাজ করছে আপনার শাহিদ আফ্রিদি ফাউন্ডেশন? একটু ভাবলেন আফ্রিদি। তার পর বলে চললেন, ‘‘আমার লক্ষ্যই হচ্ছে পাকিস্তানে যত প্রত্যন্ত এলাকা আছে, সেখানে স্বাস্থ্য সমস্যা আর জলসঙ্কট দূর করা। আমরা সে রকম অনেক জায়গায় হাসপাতাল তৈরির চেষ্টা করছি। যেমন তিরাহ উপত্যকা। (খাইবার অঞ্চলে)। যেখানে সামান্য খাবার জল জোগাড় করতে ১২-১৩ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। আমরা সে জায়গায় পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করছি। হিন্দু-মুসলমান সবার জন্য আমার ফাউন্ডেশন এই কাজটা করে চলেছে।’’

আফ্রিদির ফাউন্ডেশনের প্রধান কাজটা হচ্ছে থর মরুভূমি অঞ্চলে। যে কথা বলার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম চারশোটা ওভারবাউন্ডারি মারা ব্যাটসম্যান, ‘‘জানেন, ওই সব অঞ্চলে এমন এমন জায়গা আছে যেখানে বাচ্চারা জন্মের তিন মাসের মধ্যেই মারা যেতে শুরু করে। আমরা ওই সব জায়গায় ফোকাস করছি। ওখানে মা এবং শিশুদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করছি। আমি স্বপ্ন দেখি, এক দিন এই মৃত্যুলীলা ঠিক শেষ হবে।’’

ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাক ক্রিকেটারের নাম জানতে চাইলে, নিঃসন্দেহে আফ্রিদির নামটা সবার আগে থাকবে। শুধু ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে কেন, ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছেও আফ্রিদির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কখনও ভারতীয় টিমের সই করা জার্সি, কখনও বিরাট কোহালির সই করা ব্যাট তাঁর জন্য উপহার হিসেবে গিয়েছে। যে কথা বলতে গিয়ে রীতিমতো আপ্লুত হয়ে পড়েন আফ্রিদি, ‘‘বিরাট কোহালি যে চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান, তা তো গোটা দুনিয়া জানে। কিন্তু ও যে কত বড় মাপের মানুষ, সেটা আমি জানি। যখনই আমি কোনও সাহায্য চেয়েছি ওর কাছে, বিরাট এগিয়ে এসেছে। ওর ওই ব্যাটটা পাঠিয়ে দিয়েছে আমার ফাউন্ডেশনের জন্য। অসাধারণ ছেলে।’’

আরও এক জন ক্রিকেটারের কথা বলছেন আফ্রিদি। যিনি সীমান্তের এ-পারে থেকে আফ্রিদির মতোই নিজস্ব ফাউন্ডেশন গড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যুবরাজ সিংহ। আফ্রিদি বলছিলেন, ‘‘আমি তো যুবরাজকে বলে রেখেছি, তুই এত ভাল কাজ করছিস। আমি সব সময় তোদের পাশে আছি। যদি কিছুর দরকার হয়, আমাকে বলবি। আমি সব রকম ভাবে তোদের সাহায্য করতে তৈরি।’’

ভারত-পাকিস্তান জুড়ে থর মরুভূমি। সীমান্তের দু’পাশেই একই হাহাকারের ছবি। আফ্রিদি মনে করেন, হিন্দুস্থান-পাকিস্তান এক সঙ্গে কাজ করলে সাধারণ মানুষ আরও অনেক বেশি উপকৃত হবেন। তাই ভারতে এসে সাধারণ মানুষের জন্যও কাজ করতে তৈরি তিনি। বলছিলেন, ‘‘আমার ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও কাজ করছে। আমেরিকা, বাহরাইন এ সব জায়গায় আমরা খাদ্য সরবরাহ করছি। যদি ভারতে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই, তা হলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না। যদি ওখান থেকে কোনও এন জি ও আমাকে ডাকে কাজ করার জন্য, তবে আমি, আমার ফাউন্ডেশন তৈরি।’’

আরও পড়ুন: ধবন ঝড়ের পরে পাল্টা ধাক্কা লঙ্কার

১৪ আর ১৫ অগস্ট দুই দেশের স্বাধীনতা দিবস। তার আগে আফ্রিদির গলায় সম্প্রীতির ডাক, শান্তির আহ্বান। বলছিলেন, ‘‘প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কেন হিংসা থাকবে। কেন মারামারি হবে। আমি তো জানি, ভারতের মানুষ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের কতটা ভালবাসে। আবার ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও আমাদের দেশের মানুষ শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে। যেখানে এত ভালবাসা দুই দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে, সেখানে হিংসাত্মক ঘটনা কেন ঘটবে?’’

আফ্রিদি মনে করেন, দুই দেশের মানুষকেই ভুল বোঝানো হয় নানা ভাবে। এবং, এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। ‘‘আমার মনে হয় এই দায়িত্বটা সেলিব্রিটিদের নিতে হবে। বোঝাতে হবে, আমরা কেন বাইরের লোকের কথা শুনে মারামারি করব।’’

নিজের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে বার বার ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে দেখা যেত তাঁকে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি শান্তির প্রতীক। জীবনের কোন ইনিংসটা তাঁর কাছে বেশি চ্যালেঞ্জিং? ‘‘জীবনের এই দু’টো পর্বেই আমাকে নানা ভাবে দায়িত্বশীল হতে হয়েছে। প্রথমটায় আমি খেলেছিলাম দেশকে জেতানোর জন্য। দ্বিতীয়টায় খেলছি মানুষের জন্য। প্রথম ইনিংস আমার শেষ। আর এই দ্বিতীয় ইনিংসে আমায় জিততেই হবে।’’

দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি জিতলে শুধু আফ্রিদিই জিতবেন না, জিতে যাবে মানব জাতিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE