অভিনন্দন: সেঞ্চুরির পরে অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে ধবন। ছবি: পিটিআই।
রবিবার ডাম্বুলায় শিখর ধবনের দুরন্ত সেঞ্চুরি বুঝিয়ে দিল, ও এখন কতটা ভয়ঙ্কর। এক জন মারকুটে ওপেনার এ রকম ফর্মে থাকলে দলের চেহারাই বদলে যায়।
ফর্মের শিখরে: গত আড়াই মাসে শিখর ধবন বোধহয় হোটেলের ঘরের চেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছে ২২ গজে। কী পারফরম্যান্স! জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে যার শুরু। এই সময়ের মধ্যে ১৬টা আন্তর্জাতিক ইনিংসে চারটে সেঞ্চুরি আর চারটে হাফ সেঞ্চুরি করেছে। এক হাজারের উপর রান। ব্যাটিং গড় ৬৭.৪৬। এই সময়ে ভারতীয় দলে এত সফল আর কোনও ব্যাটসম্যান হয়েছে বলে তো মনে পড়ে না। তাই যেন মনে হল রবিবার ডাম্বুলায় বিরাট কোহালি নিজের ব্যাটিংয়ের চেয়ে ধবনের পারফরম্যান্স বেশি উপভোগ করল।
ধবন-প্রভাব: আত্মবিশ্বাসকে শিখর যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, তার প্রভাব ওর পারফরম্যান্সে তো বটেই, দলের ওপরও যথেষ্ট পড়ছে। ওপেনাররা যদি শুরু থেকেই দ্রুত গতিতে অনেকটা রান তুলে দেয়, তা হলে যেমন ইনিংসের ভিতটা শক্ত হয়, তেমনই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ওপর থেকে চাপ অনেকটা কমে যায়। এর ফলে দুটো রাস্তা খুলে যায়। এক, চাপমুক্ত হয়ে রান তুলতে পারে পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা। দুই, গড়া যায় বড় ইনিংস। যা বিপক্ষের উপর চাপ বাড়াতে পারে বা অনায়াসে জয় এনে দিতে পারে। রবিবারই যা হল। ২১ ওভার বাকি থাকতেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানটা (২১৭) পেরিয়ে যায় ভারত। কাউকে কোনও বাড়তি পরিশ্রমই করতে হয়নি এই জয় পেতে। এ রকম হতে থাকলে ক্রিকেট দুনিয়ার কাছে ভারত কিন্তু ত্রাস হয়ে উঠবে।
সহবাগের উত্তরসূরি: টেস্ট হোক বা ওয়ান ডে— ক্রিজে এসে শুরুতেই যদি শিখর শর্ট বল পায় আর সেটা যদি অফ স্টাম্পের বাইরে হয়, তা হলে ও স্কোয়ার কাট মারবেই মারবে। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ওর ব্যাটিং দেখতে দেখতে মনে হয়, বীরেন্দ্র সহবাগের কোনও ইনিংসের ভিডিও রেকর্ডিং দেখছি। একেবারে ওই ঘরানার ব্যাটসম্যান শিখর। যে ভাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলের বড় সম্পদ হয়ে উঠেছিল ইনিংসের শুরুতেই সহবাগের এই আগ্রাসী ব্যাটিং, সে ভাবেই ক্রমশ কোহালির টিমে গেমচেঞ্জার হয়ে উঠেছে ধবন। সুনীল গাওস্কর বা রাহুল দ্রাবিড় ঘরানার না হয়েও ধারাবাহিক রান করা সম্ভব, ভারতীয় ক্রিকেটে এটা দেখিয়ে দিয়েছে বীরু, ধবনরা। এরা নিজস্ব একটা ঘরানা তৈরি করে নিয়েছে, যেখানে গতি, আগ্রাসন এবং নিখুঁত টেকনিক সবই হাজির।
অবাক করা উন্নতি: ধবনকে দেখেই মনে হচ্ছে পায়ের নড়াচড়া, যাকে ক্রিকেটের পরিভাষায় ফুটওয়ার্ক বলে, সেটা নিয়ে ও প্রচুর খেটেছে। এত ভাল ও নিখুঁত ফুটওয়ার্ক ওর আগে দেখা যেত না, যেটা এখন দেখা যাচ্ছে। এটাই ওর এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের আসল রহস্য বলেই মনে হচ্ছে। না হলে স্পিনারকে কেউ এত নিখুঁত স্টেপ আউট করে মারতে পারে? এর থেকে আর একটা জিনিসও বোঝা যায়। ক্রিজে কতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাট করতে নামছে ও। এমন এক জন আত্মবিশ্বাসী ব্যাটসম্যান শুরু থেকেই নামলে পরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও তার প্রভাব পড়ে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই তা বোঝা গিয়েছে। তা ছাড়া অজিঙ্ক রাহানেকে যে দলের বাইরে থাকতে হয়, সেই দলের ব্যাটিং লাইন-আপের শক্তি নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই।
বোলারদের ত্রাস: রবিবার শিখরের ইনিংসে সব রকম শটই দেখা গেল। কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, পুল, হুক, রিভার্স সুইপ— এ সবই মেরেছে। তবে স্কোয়ার অব দ্য উইকেট শটগুলো অসাধারণ ছিল। ওর কভার ড্রাইভ সেরা ফর্মের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মনে করাল। প্রথম বল থেকে দাপট, আগ্রাসনে ঠাসা ইনিংস, স্কোরবোর্ডে রীতিমতো ঝড় তুলে দেওয়া— এগুলো শিখরের ব্যাটিংয়ের বৈশিষ্ট। যা বিপক্ষের বোলারদের হতাশ করে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। এক জন ব্যাটসম্যানকে যদি কোনও দিক দিয়েই আটকানো না যায়, তা হলে তো বোলাররা হতাশ হবেই।
শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হল। টেস্ট সিরিজের মতো ওয়ান ডে সিরিজও কিন্তু দুরন্ত ভাবে শুরু করল ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy