Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরিশ্রমী কার্তিক, কৃপণ কুলদীপই ম্যাচে ফেরাল কেকেআর-কে

অজিঙ্ক রাহানেও খুবই ভাল নেতৃত্ব দিলেন, দারুণ ব্যাট করলেন। তবু হেরে বিদায় নিতে হল আইপিএল থেকে। নাইট রাইডার্সের ১৬৯-৭ তাড়া করতে নেমে রাজস্থান দারুণ এগোচ্ছিলও।

পরামর্শ: কুলদীপকে নিয়ে আলোচনায় কার্তিক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

পরামর্শ: কুলদীপকে নিয়ে আলোচনায় কার্তিক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৬:২৭
Share: Save:

বুধবার ইডেনের ‘এলিমিনেটর’ ম্যাচটা যেন হয়ে উঠেছিল দুই অধিনায়কের লড়াই। আর বাজি জিতে বাজিগর হয়ে থাকলেন শাহরুখ খানের দলের অধিনায়কই।

দীনেশ কার্তিককে এ বারের আইপিএলে যত দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। অসম সাহসী। কুড়িতম ওভারেও বল করতে ডাকছেন অনভিজ্ঞ তরুণ প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে। এক জন অধিনায়ক যখন কোনও তরুণের উপর এই আস্থা দেখায়, সেটা সেই ক্রিকেটারের মননটাই পাল্টে দিতে পারে। অধিনায়ক কার্তিকের আর একটা ব্যাপার আমার নজর টেনেছে। পরিশ্রমী অধিনায়কের ভূমিকাতেই ওঁকে দেখতে পাচ্ছি। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ওভারের পর ওভার কাটিয়ে দেওয়া নয়, দৌড়ে দৌড়ে বোলারদের কাছে যাচ্ছেন কার্তিক। কোনও বোলার মার খেলে তাঁকে গিয়ে বোঝাচ্ছেন কী করতে হবে। ফিল্ডিংয়ে পরিবর্তন করছেন দ্রুত।

ক্রিকেটে একটা কথা আছে, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। অর্থাৎ কিনা, অধিনায়ক নিজেই উদাহরণ রাখেন দলের সামনে। কার্তিক সেটাই করে দেখাচ্ছেন। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে শেষ বলে ছক্কা মেরে জেতানোর পর থেকে কার্তিকের সোনার সময় চলছে। বুধবারেও সেটা ছিল অব্যাহত। আইপিএলে প্রত্যেকটা ম্যাচে দারুণ খেলে নাইট দুর্গের প্রধান প্রহরী হয়ে উঠেছেন তিনি। এ দিনও কঠিন সময়ে ক্রিজে এসে ৩৮ বলে ৫২ করে গেলেন। যেমন উইকেটের পিছনে দক্ষতার সঙ্গে উইকেটকিপিং করছেন, তেমনই উইকেটের সামনে অসাধারণ ব্যাট করছেন। ভারত কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পাশাপাশি আরও এক জন ফিনিশারকে তৈরি করে রাখতে পারছে ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য।

তবে কেকেআরের বুধবারের জয়ের পিছনে আরও দু’জনের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আন্দ্রে রাসেল এবং কুলদীপ যাদব। আইপিএল বা টি-টোয়েন্টি অনেকটাই শক্তি নির্ভর খেলা। সেখানে বড় পার্থক্য করে দিচ্ছেন শক্তিশালী আন্দ্রে রাসেল। এ দিন ব্যাট হাতে প্রথমে দলকে বড় স্কোরে নিয়ে গেলেন। তার পরে বল হাতে ১৯তম ওভারটা দুর্দান্ত করলেন। দিলেন মাত্র ৬ রান। এর পর রাজস্থানের শেষ ওভারে তোলার দরকার হত ৩৪ রান। ম্যাচটার নিষ্পত্তিই মোটামুটি করে দিয়ে গেলেন বোলার রাসেল। কিন্তু তারও আগে মাঝের দিকে ম্যাচটা ঘোরানোর নায়ক কুলদীপ যাদব। চার ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে এক উইকেট নিলেন কুলদীপ। শুধু তা-ই নয়, রাজস্থান যখন টপ গিয়ারে রান তুলছে, সেই সময়ে এসে রানের গতিই মন্থর করে দিলেন কুলদীপ। হিসাব বলছে, ১৩টা ডট বল করেছেন চায়নাম্যান স্পিনার। টি-টোয়েন্টিতে যা অবিশ্বাস্য!

অজিঙ্ক রাহানেও খুবই ভাল নেতৃত্ব দিলেন, দারুণ ব্যাট করলেন। তবু হেরে বিদায় নিতে হল আইপিএল থেকে। নাইট রাইডার্সের ১৬৯-৭ তাড়া করতে নেমে রাজস্থান দারুণ এগোচ্ছিলও। কিন্তু রাহানে (৪১ বলে ৪৬) ও সঞ্জু স্যামসন (৩৮ বলে ৫০) আউট হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল দলটা। কেউ হয়তো আর মনে রাখবে না যে, টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও নবম ওভারে স্লিপ রেখে বল করাচ্ছিলেন রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক। কে মনে রাখবে যে, স্পিনারকে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শর্ট লেগ ফিল্ডার দিয়েছিলেন রাহানে!

ম্যাচ জিতলেও পাওয়ার প্লে-তে কেকেআরের ব্যাটিং আমাকে বেশ অবাক করেছে। প্রথম ছয় ওভারেই নাইটরা হয়ে গেল ৪৬-৩। কাউকে তিনটে উইকেট নিতে হয়নি, নিজেরাই উপহার দিয়ে গিয়েছেন। সুনীল নারাইন প্রথম বলে চার মারার পরে দ্বিতীয় বলেই স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে স্টাম্পড। রবিন উথাপ্পা দিনের পরে দিন তিন নম্বরে খেলে যাচ্ছেন কিন্তু এই মরসুমে ওঁকে রান করতেই দেখলাম না। স্পিনের বিরুদ্ধে ব্যাটের ‘ফেস’ বন্ধ করে দিয়ে আউট হলেন উথাপ্পা। আর ক্রিস লিন তো শ্রেয়স গোপালের গুগলিটা ধরতেই পারলেন না। গত কাল বৃষ্টি হওয়ার পরে ইডেনের মাঠ ও পিচ ঢাকা ছিল। সেই কারণে উইকেটে বল পড়ে কিছুটা থমকে আসছিল এই ম্যাচে। শ্রেয়সের গুগলিতে সেই কারণে আরও বোকা বনে গেলেন লিন।

আমি বুঝতে পারছি না, এত ভাল খেলার পরেও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের প্রতিশ্রুতিমান ব্যাটসম্যান শুভমান গিলকে কেন ঠিক মতো ব্যবহার করছে না কেকেআর। অনেক নীচে ওকে ব্যাট করতে পাঠানো হচ্ছে। উথাপ্পার জায়গায় ওকেই তিনে পাঠানো উচিত। এ দিনও বেশ কিছু ভাল স্ট্রোক খেলে গিয়েছে। তা দেখার পরে অন্তত টনত নড়ুক নাইট রাইডার্সের দল পরিচালন সমিতির।

আন্দ্রে রাসেলের শক্তি দেখে আমি বিস্মিত। অবিশ্বাস্য পাওয়ারহিটার! জোফ্রা আর্চারের স্লোয়ার বল মারতে গিয়ে ঠিক মতো পেলেন না রাসেল। তার পরেও টেনিস বলের মতো মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উ়ড়িয়ে দিলেন গ্যালারিতে। শুনেছি, স্যর ডন ব্র্যাডম্যান অনেক ধরনের হুক মারতেন। তার মধ্যে একটা হুককে বলা হত টেনিস শট। স্যর ডনের সঙ্গে নিশ্চয়ই রাসেলের তুলনা হয় না। কিন্তু এ দিন ইডেনে রাসেল যে শটটা খেললেন, সেটা দেখে আর কী-ই বা বলা যায়! সত্যিই টেনিস বল শট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE