Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লাজার চাই ইলিশ, নাচবেন ক্রোমা

গত বছর শিলিগুড়িতে আই লিগের ডার্বি হেরে যাওয়ার পর তাঁকে হাসতে হাসতে বেরেতো দেখে প্রচন্ড খেপে গিয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। সে কথা মনে রেখেই সম্ভবত বলে ফেললেন কিছু বিতর্কিত কথাও।

টনজরে: চিন্তিত কামো (বাঁ দিকে)। মেজাজে প্লাজা। —নিজস্ব চিত্র।

টনজরে: চিন্তিত কামো (বাঁ দিকে)। মেজাজে প্লাজা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
Share: Save:

ডার্বির আগে হঠাৎ-ই দুর্ধর্ষ ফর্মে ফেরা উইলিস প্লাজা ঠিক করে রেখেছেন, ট্রফি জিতেই ইলিশ মাছ খাবেন।

আর সবুজ-মেরুন জার্সিতে পাঁচ গোল করে ফেলা আনসুমানা ক্রোমা ভেবে রেখেছেন, ট্রফি জিতলে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উৎসব করবেন বিশেষ নাচের মাধ্যমে।

শুক্রবারই শিলিগুড়িতে ঢুকে পড়েছেন এ বারের ডার্বির দুই মহা তারকা। দুই প্রধানের সমর্থকদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে। সেবক রোডের দুই প্রান্তের দুই হোটেলে উঠেছে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। চারিদিকে বাঙালির সেরা উৎসবের আলো জ্বলে উঠেছে। দুর্গামণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এ রকম আবহেও বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকেই সবুজ-মেরুন আর লাল-হলুদ পতাকার ছড়াছড়ি। বাইক মিছিল। হোটেলের সামনে দু’দলের সমর্থকদের ভিড়।

এ সব দেখার আগেই খালিদ জামিলের টিমের সেরা অস্ত্র উইলিস প্লাজা কিন্তু বলে দিলেন, ‘‘গতবার শিলিগুড়ির মাঠেই সহজ গোল নষ্ট করে হেরেছিলাম ডার্বিতে। সে দিন রাতে ঘুমোতে পারিনি। সেটা এখনও মনে আছে। মাঠে নামার আগেও সেটা মাথায় রাখব।’’ এরপর ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো স্ট্রাইকারের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘ট্রফিটা আমরাই পাব। তারপর কী করব ঠিক করেও রেখেছি। আমাদের বাড়ির কাছে একটা ইলিশ উৎসব হল কয়েকদিন আগে। আমাকে নিয়ে গিয়েছিল উদ্যোক্তারা। খেয়ে দেখলাম, দুর্দান্ত স্বাদ। শুনেছি, ওটাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের প্রিয় মাছ। রবিবার জিতলে আমাদের বাড়ির মালিককে অনুরোধ করব ইলিশ রেঁধে খাওয়াতে। ওটা তো আমি রাঁধতে পারি না।’’

কয়েকদিন আগেও যে প্লাজাকে দেখে মনে হতো বিমর্ষ। হতাশ। সেই ছিপছিপে চেহারার ছেলেটিই কী ভাবে যেন তেতে গিয়েছেন। আনন্দবাজার-এর সঙ্গে একান্তে কথা বলার সময় বলছিলেন, ‘‘লিগের প্রথম দিকটায় আমি ফিট ছিলাম না। সেই জন্যেই সমস্যা হচ্ছিল। তা ছাড়া আমার এক দাদা-র ক্যানসার। সেটাও মানসিকভাবে আমাকে বিপর্যস্ত করেছিল। এখন ও অনেকটা সুস্থ। আমিও ফিট। ফলে আমি চাপমুক্ত। সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি। কে গোল করল বড় কথা নয়। ট্রফিটা চাই।’’

গত বছর শিলিগুড়িতে আই লিগের ডার্বি হেরে যাওয়ার পর তাঁকে হাসতে হাসতে বেরেতো দেখে প্রচন্ড খেপে গিয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। সে কথা মনে রেখেই সম্ভবত বলে ফেললেন কিছু বিতর্কিত কথাও। ‘‘এ বার আমাদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা গতবারের চেয়ে ভাল। গতবার শুরুটা ভাল হয়েছিল। শেষ দিকে সেটা ছন্দ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একটা টিমের মধ্যে চারটে টিম হয়ে গিয়েছিল। ডার্বিতে সেটাও হারের অন্যতম কারণ ছিল। এ বার আমরা এককাট্টা। জিততেই হবে ম্যাচ।’’

সবাই বলছে এটা প্লাজা বনাম ক্রোমার লড়াই? দু’জনের উপরই নির্ভর করছে ম্যাচের ভাগ্য? প্লাজার উত্তর, ‘‘ও ভাবে বলাটা ঠিক নয়। বলতে পারেন, আমাদের উপর গোল করার দায়িত্বটা রয়েছে। সেটা করতে পারলে খুশি হব।’’

যা শুনে মোহনবাগানে সমর্থকদের মন জয় করে ফেলা ক্রোমার উত্তর। ‘‘প্লাজাকে বলে দেবেন ডার্বি জেতার পর নাচটা কেমন হবে সেটা ঠিক করে রেখেছি। প্লাজার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনও লড়াই নেই। লড়াইটা ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে। সেটা জিততে চাই।’’ বলে চলেন লাইবিরিয়ার স্ট্রাইকার। তাঁকে প্রশ্ন করা হল ডার্বির চাপ তো প্লাজা জানেন। আপনি তো নতুন। তাতেও এত আত্মবিশ্বাস!

‘‘আমাকে ডার্বির চাপের কথা বলবেন না। দু’টো টিমের বিরুদ্ধে আমার খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ছোট ক্লাবের হয়ে বড় দলের বিরুদ্ধে খেলার চাপ তো অনেক বেশি। তাছাড়া আমাদের দেশের ডার্বি যেটা হয় সেটা খেলছি তিন বার। আমি খেলতাম বি ওয়াই সি-র হয়ে। লাসাকু এফসি-র বিরুদ্ধে হতো ডার্বি। ঠিক এখানকার মতো পরিবেশ। পঞ্চাশ হাজার লোক থাকত মাঠে। এখানে তো শুনলাম অর্ধেক থাকবে। ওই ম্যাচেও গোল আছে আমার।’’

ইস্টবেঙ্গলে তো আমনা, প্লাজারা ভাল ফর্মে। ওদের মাঝমাঠ ভাল খেলছে? ক্রোমার জবাব, ‘‘ওদের রক্ষণটা নিয়ে একটু বলুন। ওদের অনেক খেলা দেখেছি। জানি কোথায় সমস্যা।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার আর কামোর মধ্যে একটা সমঝোতা গড়ে উঠেছে। তা ছাড়া আমাদের রক্ষণও ভাল খেলছে। উইং প্লে-ও হচ্ছে। ফলে জিততে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ প্লাজা এবং ক্রোমা—দু’জনের মধ্যে কখনও কথা হয়নি। দেখাও হয়নি কোনও ম্যাচে। দু’জন দু’জনকে দেখেছেন টিভিতে। তাতেই যেন অদ্ভুত একটা বৈরিতা তৈরি হয়েছে দু’জনের মধ্যে। মনে হচ্ছিল, সেটা তৈরি করে দিয়েছেন দু’দলের কোচই। কিছুটা ট্যাকটিকাল কারণে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও একান্তে কথা বললেই বোঝা যাচ্ছে আগুনে মেজাজে রয়েছেন দুই তারকা।

এখন দেখার, চতুর্থীর রাতে উৎসবের আলো ছড়ায় কার মুখে? প্লাজা না, ক্রোমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE