পরীক্ষা: খেলোয়াড় জীবন বাজি রেখে চলছে স্বপ্নার অনুশীলন।
পদক জেতার জন্য কতটা ঝুঁকি নিতে পারেন একজন অ্যাথলিট?
এর জীবন্ত উত্তর হতে পারেন দেশের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট জলপাইগুড়ির মেয়ে স্বপ্না বর্মন। যিনি শুধু এশীয় পর্যায়ে পদক জেতার জন্য নয়, দু’পায়ে বারোটি আঙুল নিয়ে সবথেকে কঠিন ইভেন্ট হেপ্টাথলনে নামার জন্য পরিচিত সারা দেশে। অদ্ভুত পায়ের জন্য জুতো-সমস্যা মিটিয়ে এশীয় সেরা হয়েছেন গত অগস্টে। এ বার বড় চোটের সমস্যা কাটিয়ে পদক জিততে মরিয়া তিনি।
কার্যত নিজের খেলোয়াড় জীবনকে বাজি রেখে কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়াডের পদকের জন্য ঝাঁপাচ্ছেন এই রাজবংশী পরিবারের মেয়ে। কোমরের চোটের জন্য মুম্বইয়ের নামী ডাক্তাররা তাঁকে অস্ত্রোপচারের কথা বললেও শুধু ইঞ্জেকশন আর বিদেশি ফিজিও-র সাহায্য নিয়ে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন সোনার মেয়ে। সল্টলেকের সাইতে অনুশীলনের ফাঁকে স্বপ্না বলছিলেন, ‘‘গত জুলাইতে এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপে যত পয়েন্ট (৫৯৪৩) করেছি, তা করতে পারলেই আমি সোনা পাব দুটো বড় টুনার্মেন্টে। এখন অস্ত্রোপচার করলে পাঁচ-ছয় মাস বসে যেতে হবে। আমার স্বপ্নটাই অপূর্ণ থেকে যাবে হয়তো। এশিয়াডের পদক জেতার পর অস্ত্রোপচার করব ঠিক করেছি। ডাক্তাররাও সেটা মেনেছেন। তখন না হয় বিশ্রাম নেওয়া যাবে।’’
কিন্তু সেটা কি চরম ঝুঁকির কাজ হবে না? জাতীয় ও এশীয় চ্যাম্পিয়ন মেয়ে যেন আরও জেদি, ‘‘পারব, আমি পারব। পারতেই হবে। তিনটে ইঞ্জেকশন নেওয়া হয়ে গিয়েছে। জানুয়ারিতে আবার নেব। আমার বয়স কম, তাই চেষ্টা করতেই পারি।’’ মা চা-বাগানের শ্রমিক। বাবা রিকশা চালান। লড়াই করে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসার জন্যই সম্ভবত প্রচণ্ড পরিশ্রমী এবং সঙ্কল্পে অটল। সে জন্য ঝুঁকি সত্ত্বেও ব্যথা কমানোর জন্য স্পনসরের সাহায্যে দিল্লি-মুম্বই করছেন নিয়মিত। এবং সঙ্গে সকাল-বিকেল মিলিয়ে ছয় ঘণ্টা হালকা অনুশীলন। স্বপ্নার কোচ সুভাষ সরকার বলছিলেন, ‘‘স্বপ্না অত্যন্ত লড়াকু মেয়ে। পিঠের ব্যথার জন্য লন্ডনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভাল ফল করতে পারেনি। আমি ছিলাম না। এক মাস একা একা ছিল শিবিরে। এখন যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে পদক পেতেই পারে। কারণ গতবার এশিয়াডে যে পদক জিতেছিল, সে করেছিল ৫৯১৯ পয়েন্ট। স্বপ্না তার চেয়ে বেশি পয়েন্ট করেছে।’’
ছাত্রীকে উদ্বুদ্ধ করতে অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী গ্রেট ব্রিটেনের জেসিকা ইউনিসের কথা বলছেন সুভাষ। যিনি স্বপ্নার মতো কোমরের নীচের ব্যথা নিয়েই সেরা হয়েছিলেন। সাইতে গত ছয় বছর সুভাষের কাছে রয়েছেন স্বপ্না। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চোট পেয়ে ফেরার পর আর মাঠে নামেননি বছর একুশের এই অ্যাথলিট। ডাক্তারদের পরামর্শ নিচ্ছিলেন চোট নিয়ে। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তাঁর খেলোয়াড় জীবন মনে হয় শেষ। সেটাই আরও জেদ বাড়িয়েছে চারুচন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে নেমেছেন অনুশীলনে। বলছিলেন, ‘‘এখন কোচ লং জাম্প এবং হাই জাম্প করতে বারণ করেছেন। হেপ্টাথলনের অন্য পাঁচটা ইভেন্ট করছি। জানুয়ারির শেষে ব্যথা কমলে ওগুলো করব।’’ সামনের বছরের মার্চে পাতিয়ালায় সিনিয়র ফেডারেশন কাপে স্বপ্না নামছেন কমনওয়েলথ ও এশিয়াডের টিমে ঢোকার যোগ্যতা পেতে। আপাতত টিমে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সল্টলেক সাইতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy