Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
শারজার সেই সচিন-ঝড় বিরাট প্রেরণা

মানবিকতার ডাকে শিশুদের পাশে ভারতীয় দল

অনুষ্ঠানের মঞ্চটিও অভিনব। যা তৈরি গত নয় দশকের ভারতীয় ক্রিকেট তারকাদের কোলাজ দিয়ে। যে কোলাজে জ্বলজ্বল করছিলেন সিকে থেকে ভিকে। অর্থাৎ কর্নেল সিকে নাইডু, থেকে বিরাট কোহালি পর্যন্ত সব যুগের তারকা ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছবি।

জুটি: সিসিএফসি-র অনুষ্ঠানে হাজির ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং কোচ রবি শাস্ত্রী। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জুটি: সিসিএফসি-র অনুষ্ঠানে হাজির ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং কোচ রবি শাস্ত্রী। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৪
Share: Save:

কান ফাটানো শব্দ নেই। নেই সাইকেডেলিক আলোর দৌরাত্ম্যও!

বদলে হাজির টুকরো টুকরো আবেগের কোলাজ, ক্যানসার আক্রান্ত মুমূর্ষ শিশুদের পাশে দাঁড়াবার ইচ্ছাশক্তি, আর প্রাক্তন ও বর্তমান তারকাদের প্রেরণা দেওয়ার প্রয়াস আর বিনোদন। সঙ্গে উপরি পাওনা দুর্দান্ত এক ক্রিকেট আড্ডা।

অনুষ্ঠানের মঞ্চটিও অভিনব। যা তৈরি গত নয় দশকের ভারতীয় ক্রিকেট তারকাদের কোলাজ দিয়ে। যে কোলাজে জ্বলজ্বল করছিলেন সিকে থেকে ভিকে। অর্থাৎ কর্নেল সিকে নাইডু, থেকে বিরাট কোহালি পর্যন্ত সব যুগের তারকা ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছবি।

বিকেলে ইডেন থেকে ফিরেই গোটা ভারতীয় দল নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন রবি শাস্ত্রী, বিরাট কোহালিরা। হাজির ভারতের প্রথম সরকারি টেস্ট জয়ী সিডি গোপীনাথ থেকে সুনীল গাওস্কর, ম্যাথু হেডেন, ভিভিএস লক্ষ্মণ ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা।

আর এ সব নিয়েই শনিবার সন্ধ্যায় জমজমাট ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাবের ২২৫ বছর পূর্তির উৎসব ‘লেজেন্ডস ফর হোপ’। অর্থাৎ যে কিংবদন্তিরা নিরন্তর আশা জুগিয়ে চলেন। বর্ণাঢ্য এই সন্ধ্যার আয়োজক আবার এই শহরের এক প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার অরুণলাল। যিনি অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলে দিলেন, ‘‘ভাল ক্রীড়াবিদরা নিজেদের প্রেরণা জোগান আর মহান খেলোয়াড় প্রেরণা জোগান বাকি সমাজকে। তাই আমার ক্লাব সি সি অ্যান্ড এফ সি দাঁড়িয়েছে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের পাশে। যে শিশুরা অর্থের অভাবে থেকে যায় চিকিৎসাহীন। নিভে আসে তাদের জীবনের দীপ। আর ক্লাবের সেই প্রয়াসে সামিল সানি, রবি, বিরাট, সৌরভ-রাও। এই অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত পুরো অর্থটাই যাবে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য।’’

ক্লাবের ২২৫ বছরের জন্মদিনে তাই অরুণলালের ক্লাব এ দিন তিন কোটি টাকার আর্থিক অনুদান তুলে দিল ক্যানসার হাসপাতাল টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের হাতে। যা দেওয়া হল ভারত অধিনায়কের হাত দিয়ে।

তার আগেই অবশ্য সমাজসেবায় আরও বড় নজির গড়ে ফেলেছেন ভারত অধিনায়ক। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ক্যানসার আক্রান্ত মুমূর্ষ শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে ছবি এঁকেছিলেন এক চিত্রকর। সেই ছবিতে তুলি দিয়ে নিজের নাম লিখলেন বিরাট কোহালি। যা নিলামে বিক্রি হল ৩৫ লক্ষ টাকায়।

মঞ্চে ততক্ষণে ঋদ্ধিমান সাহা, শিখর ধবন-সহ গোটা ভারতীয় দলকে ডেকে নিয়েছেন কোচ রবি শাস্ত্রী। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গাওস্কর রবি শাস্ত্রী যখন একই মঞ্চে তখন সেখানে ক্রিকেট নিয়ে জোরালো আড্ডা হবে না তাই হয় নাকি।

ঘোষক ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, জীবনের প্রিয় মুহূর্ত। শাস্ত্রী প্রথমে বললেন, তিরাশির বিশ্বকাপ জয় ও পঁচাশির বেনসন অ্যান্ড হেজেজ কাপ জয়ের কথা। তার পরে বললেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় বিরাটকে চারটে শতরান করতে দেখা তৃপ্তির মুহূর্ত। বিদেশে যে কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের খেলা সেরা ইনিংস।’’

আর বিরাটের তৃপ্তির মুহূর্ত? ভারত অধিনায়ক এ বার বলেন, ‘‘আমি এখনও কিংবদন্তি হইনি। আরও দশ বছর খেলতে চাই। আপাতত তৃপ্তির মুহূর্ত হল সাধারণ মানুষ যখন আমার খেলা দেখতে মাঠে আসেন।’’ তার পরে বললেন, ‘‘আপাতত আমার জীবনের সেরা তিনটি মুহূর্ত হল, শারজায় সচিন পাজি-র সেই মরুঝড়ের ইনিংস। ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে যুবরাজ ও কাইফের সেই ঐতিহাসিক ফাইনাল জেতানো। আর ২০০৭-এ ইংল্যান্ডে গিয়ে ভারতীয় দলের সিরিজ জয়।’’

এ বার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পালা। ‘প্রিন্স অব কলকাতা’ বললেন, ‘‘রবি একটু আগে বিরাটের চারটে শতরানের কথা বলে গেল। নিঃসন্দেহে দারুণ ইনিংস। কিন্তু আমার তৃপ্তির মুহূর্ত ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভিভিএস লক্ষ্মণের সেই ২৮১ রানের ইনিংস। সঙ্গে রাহুল দ্রাবিড়ের জুটি।’’

লক্ষ্মণ যা শুনে বলছেন, ‘‘সেই সিরিজে আমাদের অধিনায়ক সৌরভও দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব করেছিল। ওটা আবার আমার তৃপ্তির মুহূর্ত।’’ যা শুনে সৌরভ ফের বলতে শুরু করেন, ‘‘প্রত্যেক যুগেই একটা সেরা টিম থাকে। লক্ষ্মণ সেই সময়ের সেরা টিম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওর সেরা ইনিংস খেলেছিল। ঠিক যেমন সানি ভাই (সুনীল গাওস্কর) তাঁর সময়ে বিখ্যাত ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারিকে কাবু করে শতরানের পর শতরান করে গিয়েছে।’’

গাওস্কর অবশ্য বললেন তাঁদের তিরাশির বিশ্বকাপ জয়ের কথা। ‘‘বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ উইকেট এলবিডব্লিউ হয়েছিল। ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে কি না তা না দেখেই ছুটেছিলাম লেগ বাই বাঁচাতে। যখন দেখলাম আউট দিয়েছেন আম্পায়ার তখন বলটা পকেটে পুরে নিয়েছিলাম। বলটা আজও যত্ন করে বাড়িতে রেখে দিয়েছি। জীবনের সেরা পঁচাত্তর গজ সে দিন দৌড়েছিলাম বাই রান বাঁচাতে। এটাই আমার ক্রিকেট জীবনের সেরা মুহূর্ত।’’

একই মঞ্চে তিরাশির বিশ্বকাপ ও পঁচাশির বেনসন অ্যান্ড হেজেজ কাপ জয়ী দুই ক্রিকেটার রবি শাস্ত্রী ও সুনীল গাওস্কর রইলেন। তাঁদের উপস্থিতি জানিয়ে দিয়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক অজানা মুহূর্তের গল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Indian Team
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE