Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
প্রাক্তন অধিনায়কে আস্থা রাখছে টিম ম্যানেজমেন্ট

পাশ-ফেল এখন ধোনির হাতে

ধোনির ফিটনেস নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। ওয়ান ডে-তে এখনও ক্ষিপ্রতম উইকেটকিপারদের একজন। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে তাঁর ফর্ম নিয়ে এবং শুনতে অবাক লাগলেও এক সময়ের সেরা ওয়ান ডে হিটারের স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিরাট-শাস্ত্রীর সঙ্গে ধোনিকেও কি একই ফ্রেমে দেখা যাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে? ফাইল চিত্র

বিরাট-শাস্ত্রীর সঙ্গে ধোনিকেও কি একই ফ্রেমে দেখা যাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে? ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
পাল্লেকেলে শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫৪
Share: Save:

ওয়াংখেড়েতে ঐতিহাসিক ২ এপ্রিলের রাতে যিনি ছক্কা মেরে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন, তাঁকে কি দেখা যাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে? কী হবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে নীতি? আরও দু’বছর পরে ৩৭ বছর বয়সি হয়েও কি ‘মিডাস’ তাঁর সোনার ছোঁয়া ধরে রাখতে পারবেন?

ভারতীয় ক্রিকেট জনতা এবং জাতীয় নির্বাচকদের কাছে এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ধোনির ফিটনেস নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। ওয়ান ডে-তে এখনও ক্ষিপ্রতম উইকেটকিপারদের একজন। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে তাঁর ফর্ম নিয়ে এবং শুনতে অবাক লাগলেও এক সময়ের সেরা ওয়ান ডে হিটারের স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ধোনি এখনও আগের মতো বিগ হিট করতে পারেন। কিন্তু খুচরো রান নেওয়ার ব্যাপারে সমস্যায় পড়ছেন। অনেক ডট বল খেলে ফেলছেন তিনি। যার জন্য তাঁর সঙ্গী ব্যাটসম্যানের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ওয়ান ডে-তে ধোনির কেরিয়ার স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯০-এর কাছাকাছি। গত এক বছরে সেটা নেমে এসেছে ৮০-র ঘরে। আগে যেমন অহরহ প্রচুর ম্যাচ জেতাতেন, এখন সেটাও অনেক কমে এসেছে।

এর পরেও টিম ম্যানেজমেন্টের সমর্থন পাবেন ধোনি। তাঁর এবং যুবরাজ সিংহের অবস্থান এক নয়। যুবরাজের ফিটনেস এবং ফিল্ডিং নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া ধোনি মাঠে থাকা মানে ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর মস্তিষ্কও হাজির থাকল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও দেখা গিয়েছে নানা মুহূর্তে দুর্লভ পরামর্শ দিয়ে কোহালির পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ থেকে তাই ধোনিকে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং ধোনিকে বিশেষ ভূমিকায় ব্যবহার করার কথা ভাবা হতে পারে। ফিনিশারের আরও আধুনিক সংস্করণ ভাবা হচ্ছে তাঁর জন্য। যেটার নামকরণ করা যেতে পারে ‘সুপার ফিনিশার’। মানে একেবারে শেষ মুহূর্তে যিনি আসরে নামবেন। ধরা যাক, ১৫ বলে ২০ দরকার। কে নিশ্চিত ভাবেই ম্যাচ জেতাবেন? টিমের অনেকের কাছে এখনও এই প্রশ্নের উত্তর ধোনি।

তবে এটা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই যে, ধোনির এগিয়ে চলার রাস্তায় ফুলের পাশাপাশি কাঁটাও থাকবে। এমনিতে গত এক বছরে তাঁর ওয়ান ডে গড় মোটেও খারাপ নয়। ১২ অগস্ট ২০১৬ থেকে ১২ অগস্ট ২০১৭— এই সময়ে ১৮টি একদিনের ম্যাচ খেলে ধোনি করেছেন ৫৭৮ রান। গড় ৫২.৫৪। একটি সেঞ্চুরি, চারটি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ১৩৪। কিন্তু গড় যতই ভাল দেখাক, জনতার চোখের সামনে রয়েছে এই তথ্য যে, ধোনি আর আগের মতো ম্যাচ জেতাতে পারছেন না।

ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচে তিনি করেন মোট ৬৭ রান। ওভালের ফাইনালে মহম্মদ আমিরের বলে বিধ্বস্ত ব্যাটিংকে টেনে তুলতে ব্যর্থ হন। এর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে পাঁচ ম্যাচে করেন মোট ১৫৪ রান। সর্বোচ্চ ৭৮ নট আউট। একটি ম্যাচ জেতান, কিন্তু আর একটি নিশ্চিত জেতা ম্যাচে তিনি দীর্ঘক্ষণ ক্রিজে থাকা সত্ত্বেও হেরে যায় ভারত। তার পরেই ফিনিশারের যোগ্যতা নিয়ে ফের অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠে পড়ে।

ধোনিকেও তাই ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স করে দেখাতে হবে। শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ফের শ্রীলঙ্কা— লম্বা ক্রিকেট সূচি রয়েছে আগামী তিন মাস ধরে। বলে দেওয়া যায়, নতুন বছরের আগেই ধোনির বিশ্বকাপ ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে।

যদি তিনি লাগাতার ব্যর্থ হতে থাকেন, ঋষভ পন্থের মতো কাউকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। আবার এটাও বলে রাখা দরকার যে, ধোনি যদি চালিয়ে যেতে পারেন, তা হলে তাঁকে খুব খুশি মনে সমর্থন করে যাবে টিম। অধিনায়ক কোহালি বা হেড কোচ রবি শাস্ত্রী, দু’জনের মনেই তাঁর ক্রিকেট মস্তিষ্ক, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

তবে ধোনিকে সমর্থন করে যাওয়ার পাশাপাশি বিকল্প তৈরির কথাও ভাবতে পারেন নির্বাচকেরা। ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে সবচেয়ে বেশি করে নাম শোনা যাচ্ছে দিল্লির তরুণ প্রতিভা ঋষভ পন্থের-ই। রঞ্জিতে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে তাঁর ঝোড়ো ইনিংস দেখে টুইটারে প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং সচিন তেন্ডুলকরও।

ঋষভকে কয়েকটি ম্যাচে খেলিয়ে দেখা হতে পারে। তবে ধোনি যদি রান পেতে থাকেন এবং যদি স্ট্রাইক রেট সম্পর্কিত খুঁত মেরামত করে ফেলতে পারেন, এখনও তিনিই কোহালিদের এক নম্বর পছন্দ। বিশ্বকাপের পরীক্ষায় পাশ-ফেল তাই তাঁরই হাতে! এবং, এখনও এতটাই শ্রদ্ধা রয়েছে তাঁর প্রতি যে, না পারলে টেস্টের মতো ওয়ান ডে-র মঞ্চও ধোনি নিজেই ছেড়ে দিয়ে চলে যাবেন বলে সকলের বিশ্বাস। বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার দরকারই হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE