স্থগিত: আপাতত ময়দানে দেখা যাবে না এই দৃশ্য। ফাইল চিত্র
নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল বাংলার হকিতে। দেশের হকি মানচিত্রেও।
ভারত স্বাধীন হওয়ার বছর (১৯৪৭) ছাড়া যে টুর্নামেন্ট কখনও বন্ধ হয়নি, বিশ্বের সেই প্রাচীনতম নথিভুক্ত হকি প্রতিযোগিতা বেটন কাপ বন্ধ হয়ে গেল। বুধবার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ১২২ বছরের পুরানো এই টুর্নামেন্ট। কিন্তু রাজ্য হকি সংস্থার কর্তারা চিঠি দিয়ে সর্বভারতীয় সংস্থাকে জানিয়ে দিয়েছেন, এ বছর তাঁদের পক্ষে টুনার্মেন্ট করা সম্ভব নয়। পরের বছর ঘাসের মাঠে তা করার সময় চেয়েছেন তাঁরা। যা সমালোচনা থেকে বাঁচার ঢাল বলে মনে করছেন সবাই। কারণ হকি ইন্ডিয়ার নিয়মানুযায়ী ক্লাস ওয়ান হকি টুনার্মেন্ট হতে পারে শুধু কৃত্রিম টার্ফেই।
বাংলার হকির ‘ব্লু রিবন’ বলা হয় যাকে সেই বেটন কাপের কতটা গুরুত্ব দেশে? হকির যাদুকর ধ্যানচাঁদ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘‘কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, জীবনের সেরা ম্যাচ কোনটা? তা হলে বলব ১৯৩৩-এর বেটন কাপ ফাইনাল। যেখানে কাস্টমসের সঙ্গে খেলেছিল ঝাঁসি হিরোজ। এই টুনার্মেন্ট এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তা বন্ধ হয়নি।’’ স্বাধীনতার পর টানা সত্তর বছর চলা বেটন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য। ধ্যানচাঁদ-পুত্র অশোককুমার থেকে অলিম্পিক্সের সোনাজয়ী গুরবক্স সিংহ—সবাই অবাক।
বেটন বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ভোপাল থেকে দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলিম্পিক্স তারকা অশোককুমার ফোনে বললেন, ‘‘তাই না কি? এ তো দুঃসংবাদ! বেটন তো দেশের সেরা টুনার্মেন্ট! আমি তো দশ-বারো বার খেলেছি। সব হকি তারকাই মুখিয়ে থাকে ওটা খেলার জন্য।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত দিন ধরেও ময়দানে একটা অ্যাস্ট্রোটার্ফ করতে পারল না রাজ্য হকি সংস্থা। এটাও তো আরও লজ্জার।’’
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি হোক প্রতিভা অন্বেষণের মঞ্চ, চায় ভারত
কিন্তু কেন বন্ধ হয়ে গেল ঐতিহ্যের বেটন কাপ? দুটো কারণ উঠে আসছে। এক) বাংলায় হকির কোনও অ্যাস্ট্রোটার্ফ নেই। যেটা ছিল সাইয়ে, সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন করে তৈরি হয়নি এখনও। দুই) রাজ্য হকি কর্তাদের কোন্দল ও চূড়ান্ত ব্যর্থতা।
হকি ইন্ডিয়া তাদের ক্যালেন্ডারে বেটন করার জন্য ২০-২৭ ডিসেম্বর সময় দিয়েছিল। রাজ্য সংস্থা ধরেই নিয়েছিল সাইয়ের মাঠ তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু সেখানে টেন্ডার ডেকেও তা বাতিল হয়েছে বলে খবর। রাজ্য সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট গুরবক্স সিংহের আত্মজীবনী বেরোচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর। সেটা প্রকাশিত হওয়ার আগে বেটন বন্ধের শরিক হয়ে তিনি বেশ বিব্রত। ‘‘লজ্জার ব্যাপার হল। লেসলি ক্লডিয়াস, কেশব দত্তের মতো ১৭ জন অলিম্পিক্স পদকজয়ী ছিলেন ও আছেন বাংলায়। ২৭টা সোনার পদক আছে। সেখানে অ্যাস্ট্রোটার্ফ নেই বলে বেটন বন্ধ। সাইয়ের মাঠ তৈরি হয়নি বলেই এটা করতে হল,’’ বলে
দিলেন গুরবক্স।
কলকাতার ফুটবল ডার্বির মতো বেটন কাপের ম্যাচ দেখতে একসময় ময়দানে উপচে পড়ত দর্শক। গুরবক্স রাজ্য সচিব থাকার সময় ময়দান থেকে সাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বেটন। এই অবস্থাতেও দেশের সেরা ক্লাব বা সংস্থা আসত বেটন খেলতে। সাইয়ে প্রায় দর্শকহীন অবস্থায় চলত খেলা। মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে এখন বন্ধই হয়ে গেল টুনার্মেন্ট। রাজ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন। কর্মসমিতির ছয়জনও সেই পথে গিয়েছেন। ফলে চূড়ান্ত অচলাবস্থা বাংলার হকিতে। আর সেই আবহে ঐতিহ্যের বেটন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লজ্জা আরও বাড়ল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy