বিশ্ব ক্রিকেটের উপরে নিয়ন্ত্রণই কি হারিয়ে ফেলল ভারত? আধুনিককালে মাঠে এবং মাঠের বাইরে যাদের ভাবা হতো সর্বময় নেতা, তারাই আইসিসি-র সভায় পর্যুদস্ত হয়ে ফিরছে। বুধবার আইসিসি-র মহাবৈঠকে দু’টি ভোটাভুটির একটিতে ভারতীয় বোর্ড হেরেছে ১-৯ ফলে। অন্যটিতে ২-৮ ফলে। একটিতে ঠিক হল ভারত আগের চেয়ে অনেক কম টাকা পাবে। অন্যটিতে আইসিসি পরিচালনার ব্যাপারে এন শ্রীনিবাসনের তৈরি পরিকাঠামোকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন গঠনতন্ত্রের প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল।
ভারতীয় বোর্ডের দাবি মতো, পুরনো নিয়মে ২১ শতাংশ লভ্যাংশ ছাড়তে রাজি হয়নি ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা। মনোহর ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি দিতে চেয়ে রফা করতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় বোর্ড তা গ্রহণ করেনি। ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধিরা পাল্টা বলেন, তাঁরা পুরনো টাকাটাই চান। যা আইসিসি-র মোট আয়ের ২১ শতাশ। ভারতীয় বোর্ড রাজি না হওয়ায় ভোটাভুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং সেখানে বিপর্যস্ত হয়ে হারে ভারত।
আইসিসি-র সভায় লুটিয়ে পড়ার পরে প্রথম প্রশ্ন উঠেছে বিরাট কোহালিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিয়ে। অন্যান্য সব দেশ এই টুর্নামেন্টের জন্য দল ঘোষণা করে দিলেও ভারত তা করেনি। ভোটে হারের পর এখন কী করা হবে? বুধবার রাতে প্রভাবশালী বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রথমেই বিশেষ সাধারণ সভা ডাকা হচ্ছে। সেখানে আইসিসি-র সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। তার আগে দল ঘোষণা করার প্রশ্ন নেই। বোর্ডের মধ্যেও এখন শ্রীনিবাসন বা অন্য কোনও শীর্ষ কর্তার হাতে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। শ্রীনি চান, যুদ্ধং দেহি মনোভাব দেখিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কটের হুমকি দিক। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে যথেষ্ট সমর্থন জোটাতে পারেননি। বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের যে চাপানউতোর চলছে, সেটাকেও আইসিসি-তে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে তুলে ধরছেন।
আরও পড়ুন: পঞ্চাশে অলআউট হতে আসিনি, বলে দিলেন ঋষভ
আইসিসি বৈঠক থেকে বেরিয়ে অন্য কয়েকটি দেশের সদস্যরা অবশ্য জানালেন, ভারতীয় বোর্ডের পক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সম্পূর্ণ বয়কট করা কঠিন হবে। একটি সূত্র জানাচ্ছে, আইসিসি আয়োজিত সমস্ত টুর্নামেন্টে খেলার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই চুক্তি সই করে ফেলেছে বোর্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সেই চুক্তির অন্তর্গত। এখন খেলব না বললে বড় ধরনের জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে।
ভারতের দল ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য আইসিসি এখনই পাল্টা চাপাচাপিতে যাচ্ছে না। এমনিতেও নিয়ম হচ্ছে, এক মাস আগে দল ঘোষণা করতে হবে। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সেই দল জানাতে হতো। এর পর যদি কোনও পরিবর্তন করতে হয়, সেটা করতে হতো ২৪ মে-র মধ্যে। এখন যা পরিস্থিতি, ভারতকে হয়তো এক বারেই দল ঘোষণা করতে হবে ২৪ মে-র মধ্যে। ভারতীয় বোর্ডের কোনও কোনও সদস্যের মতে, আইপিএল চলার মধ্যে কোনও সিদ্ধান্ত হয়তো নেওয়া হবে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে এসপার-ওসপার সিদ্ধান্ত যা হওয়ার আইপিএল ফাইনালের পরেই হবে।
কেউ কেউ উত্তেজিত ভাবে রাতেই বলতে থাকেন, ‘‘টিমটাই পাঠানো হবে না। দেখা যাক আইসিসি কী করে।’’ একইসঙ্গে তাঁদের মধ্যে আফশোসও চলছে যে, আধুনিক প্রজন্মে ভারতই শাসনকর্তা ছিল ক্রিকেট প্রশাসনে। জগমোহন ডালমিয়া শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত আইসিসি ভেঙে উপমহাদেশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিশ্বকাপ এনেছিলেন। পরবর্তী কালে শরদ পওয়ার এবং শ্রীনিবাসন আইসিসি প্রধান হয়েছেন। তাদেরই কি না ভোটাভুটিতে উড়িয়ে দেওয়া হল। কে বলবে এখনও এক জন ভারতীয় বসে আছেন আইসিসি প্রধানের চেয়ারে। শশাঙ্ক মনোহর।
কী বলা হবে একে? ভারতের কাছে ভারত হারল? হবে হয়তো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy