Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মেসিদের ডেরার টিকিট জয়

বার্সেলোনার কারখানায় দুই বঙ্গসন্তান

খুদে ফুটবল প্রতিভা বেছে নিতে গত এক মাস ধরে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে শিবির করেছে মেসি-ইনিয়েস্তা-জাভিদের ক্লাব বার্সেলোনার স্কুল এফসিবি-এস্কোলা।

প্রতিভা: বার্সা অ্যাকাডেমিতে যাচ্ছে অহন ও আয়ুষ(পাশে)।

প্রতিভা: বার্সা অ্যাকাডেমিতে যাচ্ছে অহন ও আয়ুষ(পাশে)।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০৪:২১
Share: Save:

বাঙালির সেরা খেলা ফুটবল। তা আরও একবার প্রমাণ রাখল মার্কিন মুলুকের দুই খুদে বাঙালি।

এক জনের বয়স ১২, অন্য জনের ৮। মার্কিন মুলুকের ইন্ডিয়ানাপোলিসে ওই দুই বঙ্গসন্তান— অহন এবং আয়ুষ ভট্টাচার্যের মনপ্রাণ জুড়ে রয়েছে ফুটবল। আর তার উৎকর্ষ বাড়াতে আগামী নভেম্বর মাসের শেষে আমেরিকার ইন্ডিয়ানাপোলিস থেকে দুই ভাই উড়ে যাবে লিওনেল মেসির আঁতুরঘর— ‘লা মাসিয়া’য়।

খুদে ফুটবল প্রতিভা বেছে নিতে গত এক মাস ধরে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে শিবির করেছে মেসি-ইনিয়েস্তা-জাভিদের ক্লাব বার্সেলোনার স্কুল এফসিবি-এস্কোলা। প্রায় ৫ হাজার খুদে ফুটবলার ওই ক্লাবে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই প্রায় ১০ শতাংশ ফুটবলারকে বেছে নিয়েছেন এফসিবি-এস্কোলার কোচেরা। তার মধ্যে আয়ুষ এবং অহন অন্যতম। বাকিদের সঙ্গে তারাও পেয়ে গিয়েছে লা-মাসিয়ায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার ছাড়পত্র।

বার্সেলোনার ওই স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, নভেম্বরের শেষে ১০ দিনের ক্যাম্পে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে লা-মাসিয়ায়। সেখানে শুধু ফুটবল কোচিং দেওয়াই নয়, ১০ দিনে তাদের দেখানো হবে মেসিদের ঘরের মাঠ কাম্প ন্যু থেকে শুরু করে বার্সেলোনার ইতিহাস এবং কাতালোনিয়া প্রদেশের আরও অনেক খুঁটিনাটি।

কোচের সঙ্গে অহন এবং আয়ুষ ভট্টাচার্য।

য়োহান ক্রুয়েফের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে তৈরি হয়েছিল ‘লা মাসিয়া’ অ্যাকাডেমি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এখানে এসেই ফুটবলের পাঠ নিতে শুরু করেছিলেন মেসি। ওই ‘লা মাসিয়া’ থেকেই ফুটবলার হয়ে উঠেছেন ইনিয়েস্তা, জাভি, পিকে, ফাব্রেগাস-রা। ২০১০ সালে বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন দলের অধিকাংশ ফুটবলারই ছিলেন লা মাসিয়া অ্যাকাডেমির। এমনকী, বার্সেলোনার প্রাক্তন কোচ পেপ গুয়ার্দিওয়ালাও ছিলেন ‘লা মাসিয়া’র ফসল।

আরও পড়ুন: ফেডেরারকে রোখার মতো কাউকে দেখা যাচ্ছে না

মেসির অ্যাকাডেমিতে ডাক পেয়ে উল্লসিত দুই খুদে বাঙালি। বড়ভাই অহন খেলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে আর আয়ুষ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। দু’জনেরই মন-প্রাণ জুড়ে রয়েছে মেসি। ইন্ডিয়ানাপোলিস থেকে ফোনে দু’জনেই বলে উঠল, ‘‘আমরা খুব খুশি। মেসি যেখানে খেলত, সেই জায়গায় ফুটবল শিখব।’’ ছেলেদের এই সাফল্যে অবশ্য আরও বেশি উল্লসিত তাদের বাবা-মা কুন্তল ভট্টাচার্য আর শিখা ভট্টাচার্য। কুন্তল বললেন, ‘‘আমরা পুরো পরিবরাই ওখানে যাব বলে ঠিক করে ফেলেছি। মেসিদের কাম্প-ন্যু’তে যাব— এটা ভেবেই তো শিহরিত হচ্ছি। আর সেখানে আমার দুই ছেলে ফুটবলের কোচিং নেবে, এটা যেন এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না।’’

অহন ভট্টাচার্য।

কৃতিত্বটা বিরাট এবং দারুণ গর্বের— বলছেন এ দেশের প্রাক্তন মিডফিল্ডার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এত ছোট বয়সে ফুটবলের স্বর্গরাজ্যে ওরা গিয়ে খেলবে— এটাই তো দারুণ ব্যাপার। তবে এখানেই যে ওদের পথ চলা শেষ নয়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। ওরা যদি ফুটবলটা চালিয়ে যেতে পারে, তা হলে আর পাঁচ-ছ’বছর পরে ভারত কিন্তু ফুটবলে দু’জন বড় প্রতিভা পেতে পারে।’’

ইন্ডিয়ানাপোলিসের হোসিয়ার ক্লাবে ফুটবলের হাতেখড়ি আয়ুষ এবং অহনের। অহন ফুটবল শুরু করেছে ৮ বছর বয়সে। আযুষ শুরু করে আরও ছোটবেলায়, মাত্র ৪ বছর বয়সে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী কুন্তলের কথায়, ‘‘পড়াশোনায় ওরা দু’জনেই ভাল। কিন্তু ফুটবলটা ওদের ভালবাসা, ধ্যান-জ্ঞান।’’ কুন্তল জানান, ইতিমধ্যেই বার্সেলোনার ফুটবল স্কুলগুলির তরফে আমেরিকায় শিকাগো, মায়ামি, অস্টিনের মতো জায়গায় বেশ কিছু ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোয় স্কুল নেই। অ্যারিজোনায় ওরা নতুন একটি আবাসিক অ্যাকাডেমি তৈরি করছে। ‘‘বার্সেলোনা থেকে ফেরার পরে অ্যারিজোনার অ্যাকাডেমিতে দুই ভাইকে ভর্তি করে দেওয়ার ইচ্ছে আছে। তা হলে, ফুটবল আর পড়াশোনা— দু’টোই ওরা একসঙ্গে চালিয়ে যেতে পারবে,’’ ভাবছেন কুন্তল। তবে কোনও অবস্থাতেই দুই ভাইকে ফুটবল থেকে দূরে সরাতে চান না তিনি।

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE