Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চহালই শুরু করে দিলেন সেই বাগ্‌যুদ্ধ

দু’টো বিশ্বসেরা দল। যাদের মধ্যে ঠোকাঠুকি হলে ফুলকি ছুটবে, এ তো স্বাভাবিক। চেন্নাইয়ের বাইশ গজে যুদ্ধটা ভালই শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার নেথান কুল্টার নাইলের আগুনে একটা স্পেল দিয়ে। যার জবাব মাঠেই দিয়ে এসেছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য এবং এমএস ধোনি।

কলকাতায় এলেন চহাল। নিজস্ব চিত্র

কলকাতায় এলেন চহাল। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক দাশ
চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০৬
Share: Save:

মেজাজটাই আসল রাজা!

যে মেজাজ কখনও গনগনে উত্তেজনার। কখনও বা আবার বিন্দাস, খোলামেলা।

তাই কখনও দেখা যাচ্ছে, এক শিবির একটা যুক্তি দিলে অন্য শিবির সেটা মাঠের বাইরে ফেলে দিচ্ছে। আবার কখনও দেখা যাচ্ছে, চিপকের নায়কেরা ফুরফুরে মেজাজে বিমানবন্দরের মেঝেতেই বসে বা শুয়ে পড়ছেন!

দু’টো বিশ্বসেরা দল। যাদের মধ্যে ঠোকাঠুকি হলে ফুলকি ছুটবে, এ তো স্বাভাবিক। চেন্নাইয়ের বাইশ গজে যুদ্ধটা ভালই শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার নেথান কুল্টার নাইলের আগুনে একটা স্পেল দিয়ে। যার জবাব মাঠেই দিয়ে এসেছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য এবং এমএস ধোনি। আর ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের একটা মন্তব্যের জবাবে ভারতীয় শিবির থেকে ধেয়ে এল পাল্টা জবাব।

আরও পড়ুন: চায়নাম্যান লাও, হাঁকলেন স্মিথরা

প্রথম ম্যাচে হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্মিথ বৃষ্টিতে ওভার কমে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘ওভার কমে যাওয়ায় অবশ্যই আমাদের সমস্যা হয়েছে। টার্গেটটা বেশ কঠিন হয়ে যায়।’’ তাঁকে পাল্টা বলা হয়, আইপিএলের যুগে ২১ ওভারে ১৬৪ তো সে রকম কোনও স্কোরই নয়। এ বার অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের যুক্তি ছিল, ‘‘আইপিএলে আমাদের দু’টো নতুন বল সামলাতে হয় না। কিন্তু এখানে হল। আমাদের পেসাররাও যেমন নতুন বলে সাহায্য পেয়েছে, ওদের পেসাররাও পেল।’’

স্মিথের যে যুক্তি সোজা বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিচ্ছেন লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল। তিন উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ভাঙার অন্যতম কারিগর বলছেন, ‘‘হেরে গিয়েছে বলে এখন ওরা এই সব যুক্তি খাড়া করছে। জিতে গেলে দেখতেন বলত, দু’টো নতুন বল ছিল বলে আমাদের ব্যাটসম্যানদের শট খেলার সুবিধে হয়েছে। নতুন বল ভাল এসেছে ব্যাটে।’’ চহালের এই পাল্টা জবাব উত্তেজক সিরিজের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অস্ট্রেলীয় মিডিয়া ইতিমধ্যেই চহালের এই মন্তব্য নিয়ে লিখতে শুরু করেছে। লেখার সুর একটাই। স্মিথের যুক্তিকে আমল দিচ্ছেন না ভারতীয় লেগস্পিনার।

স্মিথ অবশ্য আরও বড় আঘাতটা খেয়েছেন তাঁর আইপিএল সতীর্থের কাছ থেকে। ধোনি তো শুধু ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়াকে হারাননি, দুর্দান্ত উইকেটকিপিংয়ের পাশাপাশি দাওয়াই দিয়েছেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে কী ভাবে ফেরাতে হবে, তারও। যে কথা সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করে নিয়েছেন চহালই।

চেন্নাইয়ে যেন বিরাট কোহালির টিমের ‘বড়দা’ হয়ে উঠেছিলেন ধোনি। যে বড়দা বিপদের সময় বুক চিতিয়ে লড়াই করবে। যে বড়দা পিছন থেকে পরামর্শ দেবে কী ভাবে কী করতে হবে। যে বড়দা আবার বিন্দাস মেজাজে মিশে যাবে টিমের জুনিয়রদের সঙ্গে। সোমবার দুপুরে কলকাতাগামী বিমানে ওঠার আগে দেখা গেল চেন্নাই বিমানবন্দরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন কোহালি, হার্দিকরা। আর মেঝেতে সটান শুয়ে আছেন ধোনি। কোনও কিছুরই যেন আর তোয়াক্কা করেন না তিনি। যে ছবি পরে টুইট করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড লেখে, ‘১-০ এগিয়ে গিয়ে এ ভাবেই রিল্যাক্স করতে হয়।’

রবিবার চেন্নাইয়ের দর্শকদের ভিড়ে দেখা গিয়েছে, প্রচুর সংখ্যক তরুণ-তরুণীর নীল জার্সির পিঠে লেখা ‘ধোনি’। এবং প্রাক্তন অধিনায়ক যে ভাবে খেলছেন, তাতে পরের ম্যাচগুলোয় সংখ্যাটা বাড়তে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ঘটনা হল, যতই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে, পারফরম্যান্সের সঙ্গে সঙ্গে ধোনির ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাবটাও যেন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ইতিমধ্যেই চেন্নাই সুপারকিংগসের জার্সি গায়ে এন শ্রীনিবাসনের তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে ঘুরে গিয়েছেন। বিতর্কিত শ্রীনির সঙ্গেও সখ্য কোনও ভাবেই কমেনি। রবিবার চিপকে শ্রীনিবাসন ছিলেন। এও শোনা যাচ্ছে, ম্যাচের পরে দু’জনের দেখা এবং কথাও হয়েছে।

সিরিজের যুদ্ধ ইডেনমুখী হওয়ার দিনে তা হলে কী ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে?

ভারতীয় শিবিরে ‘ফিল গুড’ হাওয়া। অস্ট্রেলিয়া আবার নিজেদের গেমপ্ল্যান নিয়ে ভাবতে বসেছে। স্মিথ যেমন বলছিলেন, ‘‘আমাদের একটু ভাবতে হবে। যদিও আমি এই হারটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি না, তবে নতুন করে ভাবনাচিন্তার জায়গা আছে।’’ অস্ট্রেলিয়ার এখন প্রধান মাথাব্যথার কারণ তিনটি। এক, ডেভি়ড ওয়ার্নারের সঙ্গী বাছা। দুই, জেমস ফকনার এবং অ্যাডাম জাম্পার ফর্ম। তিন, রিস্ট স্পিনারদের সামলানো।

হার্দিক-ধোনি পার্টনারশিপ নিশ্চয়ই অস্ট্রেলিয়াকে খাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল, কিন্তু শেষ ধাক্কাটা দেয় দুই রিস্ট স্পিনারই। চহাল-কুলদীপের মিলিত চেষ্টায় চেন্নাইয়ে এসেছে পাঁচ উইকেট।

ই়ডেনে কী হবে? পিচে টার্ন থাকবে কি না, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না ভারতীয় শিবির। কিন্তু চহালের কথায় রীতিমতো সতর্কবার্তা, ‘‘রিস্ট স্পিনারদের একটা সুবিধে হল, পিচে টার্ন না থাকলেও কিছুটা বল ঘোরানো যায়।’’

অস্ট্রেলিয়া নিশ্চয়ই এতক্ষণে সেই সতর্কবাণী শুনে ফেলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE