আড্ডা: বিরাটের সঙ্গে কলকাতার হোটেলে শ্রীলঙ্কার জ্ঞান। ছবি: ফেসবুক
পরনে শ্রীলঙ্কার জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি। হাতে রঙ্গনা হেরাথ-দের দেশের জাতীয় পতাকা। কলকাতা টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ইডেনে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এই দু’জনকে। এক জনের নাম জ্ঞান সেনানায়েকে। অপর জন মহম্মদ নীলম। কখনও ইডেনের ‘এল’ ব্লক কখনও বা এল ওয়ান’ ব্লক থেকে ভারতীয় সমর্থকদের পাল্লা দিয়ে শ্রীলঙ্কার জাতীয় পতাকা ওড়াচ্ছেন তাঁরা।
বুধবার টেস্ট শুরুর আগের দিন কলম্বো থেকে উড়ে এসেছেন কলকাতা। স্পনসর সে দেশের দু’টি বাণিজ্যিক সংস্থা। ইডেনে আসার টিকিট তাঁদের দিয়েছেন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ম্যানেজার অশঙ্ক গুরুসিংহে। টেস্ট চলাকালীন থাকছেন ধর্মতলা চত্বরের হোটেলে। কলকাতায় ডাক্তারি পড়তে আসা জনাদশেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে রোজ দল বেঁধে ইডেনে আসছেন দেশের পতাকা হাতেই। মজার ব্যাপার এটাই যে এই দুই শ্রীলঙ্কার সমর্থক আবার ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির ভক্ত।
আর তা এতটাই যে বুধবার কলকাতায় পা দিয়েই শুক্রবার সন্ধ্যায় চলে গিয়েছিলেন ভারতীয় দলের টিম হোটেলে। সেখানে দেখা করেন বিরাটের সঙ্গে। মিনিট দশেক আড্ডাও দিয়েছেন বিরাটের সঙ্গে। সেখানেই ভারত অধিনায়ক কোহালি তাঁদের নাকি কলকাতার রসগোল্লা চেখে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বলে দাবী নীলমের।
আরও পড়ুন: ভারতের বার্তা, তদন্ত শুরু ম্যাচ রেফারির
এখানেই শেষ নয়। শ্রীলঙ্কার এই দুই ক্রিকেট সমর্থককে বিরাট দিল্লি টেস্টের সময় নৈশভোজেও আপ্যায়ন করেছেন বলে জানাচ্ছেন জ্ঞান ও নীলম। রবিবার কলকাতা টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা যখন শেষ হল, তখন প্যাভিলিয়নের দিকে হেঁটে আসছিলেন শ্রীলঙ্কান বোলার দাসুন শনকা। তাঁকে দেখেই জোরে গ্যালারি থেকে হাঁক পাড়লেন জ্ঞান। যা শুনে শনকাও হাত নাড়লেন জ্ঞানকে। জ্ঞান তখন ইংরেজিতে বলছেন, ‘‘ভাল হয়েছে শিখরকে সেঞ্চুরি করতে দিসনি। এ বার দ্রুত ওদের বাকি উইকেটগুলো ফেলে ম্যাচটা জেতার চেষ্টা কর শেষ দিন।’’ শুনে হাসতে হাসতে হাসতে ড্রেসিংরুমের দিকে এগিয়ে যান শনকা।
এ বার প্রতিবেদকের দিকে ফিরে জ্ঞান বলতে শুরু করলেন, ‘‘শ্রীলঙ্কা দল আমার প্রাণ। কিন্তু আমরা দু’জনেই বিরাট কোহালির ভক্ত। ছেলেটা চোখে চোখ রেখে লড়তে জানে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়।’’ একটু থামলেন জ্ঞান। তার পরে নীলমের থেকে মোবাইল চেয়ে নিয়ে দেখাতে শুরু করে দিলেন বিরাটের সঙ্গে তাঁর তোলা ছবি। বললেন, ‘‘ভারতীয় হোটেলে শুক্রবার গিয়েছিলাম বিরাটের সঙ্গে আড্ডা দিতে। ওরা যখন শ্রীলঙ্কায় খেলতে গিয়েছিল এ বার, তখনই ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে বিরাট আর রোহিত শর্মার সঙ্গে। রোহিত কফি খাওয়াল সে দিন। শ্রীলঙ্কায় আমাকে একটা ‘সানগ্লাস’ দিয়েছিল ও। আর বিরাট বলল, দিল্লিতে আমার বাড়ি। সেখানে টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। ওখানে আমাদের হোটেলে চলে এস। তোমাদের ডিনার দেব।’’
বয়সের কারণে দীনেশ চণ্ডীমল, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজদের টিমের সঙ্গে এখন আর সে ভাবে গোটা বিশ্ব ঘুরে বেড়াতে পারেন না শ্রীলঙ্কার সেই বিখ্যাত সমর্থক পার্সি অভয়শেখরা। তাঁর জায়গা নিয়েছেন এই জ্ঞান-নীলম জুটি। ছোটখাটো ব্যবসা করেন দু’জনেই। এর বাইরে গত ষোলো বছর ধরে বিশ্বের যে প্রান্তেই ক্রিকেট খেলতে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল, সেখানেই জাতীয় দলকে সমর্থন করতে উড়ে গিয়েছেন তাদের এই দুই সমর্থক। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছেন। গিয়েছেন ভিভ-সোবার্সদের ওয়েস্ট ইন্ডিজেও। ভারত সফর শেষ হলেই দলের সঙ্গে উড়ে যাবেন বাংলাদেশে।
জ্ঞান বলছেন, ‘‘ছিয়ানব্বইয়ের সেই ভারত-শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল টিভিতে দেখে কলকাতা সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা হয়েছিল। কিন্তু তা বদলে যায়, ২০০৯ সালে। সে বার এক দিনের ম্যাচে ইডেনে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। কলকাতার দর্শকদের আতিথেয়তা ভুলিনি। আর সেদিনই বিরাট শতরান করে জিতিয়েছিল ভারতকে। আর আমি ওর ফ্যান হয়ে যাই সে দিন থেকে।’’ মহম্মদ নীলম বলছেন, ‘‘ইডেনে এই নিয়ে তিন বার এলাম। এখান দর্শক ক্রিকেট সমঝদার। তা ছাড়া আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত যিনি লিখেছেন সেই আনন্দ সমরাকুনের লেখা পড়েছি ছোটবেলায়। কলকাতা আর রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে। তার পর থেকেই কলকাতা এলে মনে হয় এটা আমার ঘরের বাইরে আর একটা ঘর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy