Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শতকের হাফসেঞ্চুরি: দুই নায়কের যাত্রাপথ

‘সচিনকে ছুঁতে আরও অনেক সময় লাগবে’

ইডেনে পঞ্চম দিন খেলা দেখে আমার মনে হচ্ছিল এটা ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্ট না কি, অস্ট্রেলিয়ায় বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ দেখছি?

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪২
Share: Save:

সোমবার শেষ হওয়া ভারত-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্টের পরে স্মৃতি হাতরেও মনে করতে পারছি না, চারটে স্লিপ আর দু’টো গালি নিয়ে একজন ভারতীয় বোলার শেষ কবে বল করেছে!

ইডেনে পঞ্চম দিন খেলা দেখে আমার মনে হচ্ছিল এটা ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্ট না কি, অস্ট্রেলিয়ায় বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ দেখছি?

দু’দলের দুই উইকেটকিপার— ভারতের ঋদ্ধিমান সাহা এবং শ্রীলঙ্কার নিরোশান ডিকওয়েলা বেশির ভাগ সময় বল ধরছিল কাঁধের নীচে। এতেই বোঝা যাচ্ছিল, পিচে কতটা বাউন্স ছিল। পঞ্চম দিনের শেষ ওভারেও উইকেট বেশ প্রাণবন্ত। বল পড়ে ভাল উচ্চতায় ছুটছিল।

ইডেনে এই ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিন ধরে দেখার পরে আমার মনে হচ্ছে, প্রথম দু’দিন যদি বৃষ্টির জন্য এতটা সময় নষ্ট না হতো, ভারতই ম্যাচটা জিতে যেতে পারত।

বিরাট যে ভঙ্গিতে পঞ্চাশতম সেঞ্চুরিটা করল, সেটাও মনে রাখার মতো। স্টান্স নিতে গিয়ে ও দেখে নিয়েছিল অফসাইডে পয়েন্ট ও থার্ডম্যান অ়ঞ্চলে ফিল্ডার বাউন্ডারিতে রয়েছে। লেগ সাইডেও মিডউইকেট অঞ্চলের ফিল্ডার রয়েছে বাউন্ডারিতে। এক্সট্রা কভার ও মিড-অফ অঞ্চলে ফিল্ডার বাউন্ডারিতে নেই। বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দেখতে বসে তখনই আগাম বলে দিয়েছিলাম, জায়গা তৈরি করে লাকমল-কে বিরাট এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে মারবে। ম্যাচেও তাই হল।

টেস্টে ১৮টি এবং একদিনের ক্রিকেটে ৩২টি শতরানের সৌজন্যে এ দিন ওর কেরিয়ারের পঞ্চাশতম শতরানটি পেল বিরাট। যা করতে ওর লাগল সব মিলিয়ে ৩৪৮টি ইনিংস। যেটা কি না সচিন তেন্ডুলকরের চেয়েও তম সময়ে। সচিনের ৫০তম শতরান করতে লেগেছিল ৩৭৬টি ইনিংস। এ দিন ভারত জুড়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শততম শতরানের মালিক তেন্ডুলকরকেও কি আগামী দিনে পিছনে ফেলতে পারে কোহালি? আমি বলব, বিরাট কোহালির ফিটনেস দুর্দান্ত। দুর্দান্ত রানিং বিটুইন দ্য উইকেট্‌স। অনবদ্য ফিল্ডিং। শততম শতরানের লক্ষ্যটা তবু খুব চ্যালেঞ্জিং। আমার মনে হয়, সচিনের ৫১ টেস্ট সেঞ্চুরি ধরা বিরাটের পক্ষে কঠিন হবে। তবে ৪৯টি ওয়ান ডে সেঞ্চুরি ও টপকে যেতেই পারে। আরও একভাবে দেখলে সচিনের টেস্ট সেঞ্চুরি বেশি ওয়ান ডে সেঞ্চুরির চেয়ে। কিন্তু বিরাট যে গতিতে এগোচ্ছে, ওয়ান ডে-তে অনেক বেশি সেঞ্চুরি করেও সচিনের একশো সেঞ্চুরির বিরল মাইলস্টোনে পৌঁছে যেতে পারে। আমার মনে হয়, বিরাটকে আরও দশ বছর অন্তত খেলতে হবে সচিনকে ধরতে হলে। সেটা অনেক কিছু উপর নির্ভর করবে। ওর ফিটনেস, ফর্ম এবং অবশ্যই ক্রিকেটের প্রতি খিদে এবং অধ্যাবসায়। এখনও পর্যন্ত যা দেখেছি, বিরাটের দায়বদ্ধতা, খিদে এবং অধ্যাবসায় নিয়ে প্রশ্নই নেই।

সচিনের ৫০তম সেঞ্চুরি (২০১*)
২৫ নভেম্বর নাগপুরে বনাম জিম্বাবোয়ে ২০০০।

বিরাটের ৫০তম সেঞ্চুরি (১০৪*)
২০ নভেম্বর ইডেন বনাম শ্রীলঙ্কা ২০১৭

যাই হোক, ইডেনের পিচের কথা ফিরি। এর আগে ইডেনের বাইশ গজ পরিচিত ছিল ‘ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ’ হিসেবে। এ বার কিন্তু তা পেসারদের স্বর্গ হয়ে দেখা দিল। এই প্রথম ইডেন টেস্ট থেকে ভারতের কোনও স্পিনার উইকেট পেল না। শ্রীলঙ্কার যে ১৭টি উইকেট পড়েছে, প্রত্যেকটাই তুলল পেসাররা। অনেকেই এ দিন লাঞ্চের সময় বলছিলেন, ম্যাচ ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি ও উমেশ যাদবদের দাপটে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জেতার দিকে চলে গিয়েছিল ভারতই। আর তার জন্য কোহালিদের মরিয়া ভাবকেই কৃতিত্ব দিতে হবে। ব্যাটসম্যান কোহালির এমন একটা কীর্তির দিনে আমার দারুণ লাগল ক্যাপ্টেন কোহালির মানসিকতাও। কী নাছোড় মনোভাব! সামান্য জেতার গন্ধ পেলেই শিকারী বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ইডেনে আগে সুইংয়ের ভেল্কি দেখা যেত। বিশেষ করে সকালে শুরুর স্পেলে আর পড়ন্ত বিকেলের দিকে। এই দু’টো সময়েই গঙ্গার হাওয়া খেলত। সোমবারে যেন পুরনো ইডেনের সেই চেহারা ফিরে এসেছিল। মহম্মদ শামি টানা ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটার গতিবেগে বল করে যাচ্ছিল। ভুবনেশ্বর কুমারও পেস বাড়িয়েছে। দু’দিকে সুইং করিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করে গেল। নিরোশান ডিকওয়েলা উইকেটের পিছনে তিনজন ফিল্ডার হয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে ‘নো বল’-এ হাঁটু মুড়ে ছক্কা মেরেছিল শামিকে। এ ভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মারলে যে কোনও ফাস্ট বোলারই ক্ষেপে যাবে। শামি এমনিতে খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে। ফাস্ট বোলার হলেও কখনও ওকে খুব একটা স্লেজ করতে দেখিনি। সেই শামিই এ দিন ডিকওয়েলার মুখের উপর গিয়ে কথা শুনিয়ে এল।

প্রথম চারদিনে মনে হচ্ছিল, ভারত ব্যাকফুটে। আর নাগপুরে দ্বিতীয় টেস্টের পূর্বাভাস হিসেবে পঞ্চম দিনের শেষে কি না বলতে হচ্ছে, অ্যাডভ্যান্টেজ ভারত। বলে না, ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE