Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

‘লাখ লাখ টাকা রোজগার করে ওরা, বিমানে ফিরতে পারত না কি?’

ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল! এই নিয়ে যে এমন সাতকাহন তৈরি হবে কে-ই বা ভেবেছিল? মেহতাব, শুভাশিসেরা কী প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তা তাঁরাই জানেন। কিন্তু ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে হারের পর জনশতাব্দীর নন-এসি কামরায় সংরক্ষণ ছাড়া রফিক, নারায়ণরা যে ভাবে শহরে ফিরলেন তাতে নানা প্রশ্ন উঠছে ফুটবল মহলে।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ২২:২৯
Share: Save:

ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল! এই নিয়ে যে এমন সাতকাহন তৈরি হবে কে-ই বা ভেবেছিল? মেহতাব, শুভাশিসেরা কী প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তা তাঁরাই জানেন। কিন্তু ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে হারের পর জনশতাব্দীর নন-এসি কামরায় সংরক্ষণ ছাড়া রফিক, নারায়ণরা যে ভাবে শহরে ফিরলেন তাতে নানা প্রশ্ন উঠছে ফুটবল মহলে। কেউ বলছেন, এমনটাই তো হয়, খেলতে পারলে ভাল না পারলে চলো। কেউ বা বলছেন, ব্যাপারটা অসম্মানের। আবার কারও মত, ক্লাব নয়, আসল দায়ী তো ফুটবলাররাই। এই ঘটনা ইস্টবেঙ্গলের হারকে ভুলিয়ে দিয়েছে। বরং উঠে আসছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।

আরও খবর: বাথরুমের প্যাসেজ থেকে ইস্টবেঙ্গল দলকে সিটে বসালেন বাগান সমর্থকরা

দোষী কে? ক্লাব না ফুটবলাররা? অতীতে তাঁদের সঙ্গেও কি এমন ধরনের অপমানকর ব্যবহার করা হয়েছিল? কী বলছেন প্রাক্তনরা?

এত ক্ষণে সকলেই জেনে গিয়েছেন এই ঘটনার কথা। ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের মুখে কুলুপ। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের কামরায় বাধ্য হয়েই সেলফি তুলতে হয়েছে মোহনবাগান সমর্থকদের সঙ্গে। তাঁরাই নাকি বসার জায়গা ছেড়ে দিতে চেয়েছেন রফিক, নারায়ণদের। প্রাক্তন ফুটবলার কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য ইস্টবেঙ্গল প্লেয়ারদের প্রতি সহানুভূতিশীল। আগেই শুনেছিলেন এই ঘটনার কথা। বললেন, ‘‘এমনটা আমাদের সঙ্গেও হয়েছে। ’৭৬ সালে ডুরান্ডে হেরে কলকাতায় ফিরতে পারিনি। ট্রেনে যেতে হয়েছিল মু্ম্বইয়ে। ’৭৮ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আসলে হেরে গেলে কেউ আর থাকতে চায় না। মন খারাপ থাকে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই জায়গা ছেড়ে ফিরে আসতে চায়। ওদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে হয়তো।’’

সকাল থেকে ঘুরে ফিরে আঙুল উঠেছে ক্লাবের দিকে। যদিও ইস্টবেঙ্গল প্লেয়াররা বার বারই বলেছেন, ক্লাবের কোনও ভূমিকা নেই এ ব্যাপারে। প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার অবশ্য বলছেন, ‘‘খুব অশোভন ঘটনা। জেতা-হারা তো থাকবেই। ’৭০ থেকে ’৭৬ মোহনবাগান লিগ পায়নি বটে কিন্তু এমন ঘটনা কখনও হয়নি।’’ কিন্তু পাশাপাশি গৌতম অন্য একটা প্রশ্নও তুলে দিলেন, ‘‘নিজেদের ভুলের জন্য এই শাস্তি কি ফুটবলাররা নিজেরাই বেছে নিল? যারা এত টাকা পাচ্ছে তারা কেন এ ভাবে আসবে? হারের জন্য যদি এটা করতে ওরা বাধ্য হয় তা হলে সেটা খারাপ।’’

গৌতম সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে আরও কঠিন প্রশ্ন তুলছেন সুভাষ ভৌমিকও। ইস্টবেঙ্গলের খেলা হতাশ করেছে তাঁকে। কিন্তু এ ভাবে ফিরে ক্লাবের সম্মান নষ্ট করাটা মানতে পারছেন না তিনি। তাঁর কথায়: ‘‘অর্ণবরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করে। নিজেরা পারত না টিকিট কেটে ফ্লাইটে ফিরতে?’’ ক্লাবের সপক্ষেও পাল্টা প্রশ্ন তুলে দেন তিনি, ‘‘ক্লাব তো ওদের উপর বিশ্বাস করেছিল। ভেবেছিল ফাইনাল খেলবে দল। সেটা পারেনি। এ বার ওদের কাজের জন্য ক্লাবের দিকে আঙুল উঠছে!’’

প্রায় একই বক্তব্য দীপেন্দু বিশ্বাসেরও। তিনি ফুটবলারদের সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তুলছেন কর্তাদের ভাবনাচিন্তার দিকেও। দীপেন্দু বলেন, ‘‘ফাইনাল সাত দিন পর, এটা তো জানাই ছিল। ফাইনালে উঠলেও সাত দিন কটকের গরমে কোনও দল থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তা হলে সেই ব্যবস্থা কেন করে রাখা হয়নি? সেমিফাইনালে ওঠার পরই ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা করে রাখা উচিত ছিল।’’ ক্লাবের বিরুদ্ধে এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ফুটবলারদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য: ‘‘মেহতাব, অর্ণব, শুভাশিসরা দেশের জার্সি পরে খেলে। ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবে খেলে। আইএসএল খেলে। নিজেদের সম্মানের কথাটা ওরা ভাবল না কেন? সবাই মিলে একটা গাড়ি ভাড়া করে ফিরতে পারল না? ওদের সঙ্গে তো ক্লাবেরও সম্মান জড়িয়ে রয়েছে!’’

যদিও উল্টো পথে হাঁটছেন প্রাক্তন ফুটবলার অলোক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়ে এত হইহই করার কিছু নেই। প্লেয়ারদের যেমন ভাবা উচিত ছিল, ক্লাবেরও ভাবা উচিত ছিল। ’৮৫-তে আমাদেরও তারকাখচিত ইস্টবেঙ্গল টিম ছিল। সেখানে কৃষাণু, সুদীপ, মনোরঞ্জনরা ছিল। আমরাও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বাসে ফিরেছিলাম। তবে এই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেই আমরা খেলেছি। এটা এই ক্লাবের ঐতিহ্য নয়।’’

এক তো ইস্টবেঙ্গলের হারের হতাশা। সঙ্গে এই অসম্মানে রীতিমতো অস্বস্তিতে প্রাক্তনরাও। ক্লাবের পাশাপাশি অনেকেই আঙুল তুলছেন ফুটবলারদের মানসিকতার দিকেও। এমনটা তো হওয়ার ছিল না। প্রশ্ন উঠছে, মেহতাব, অর্ণবদের মতো সেলিব্রিটি ফুটবলাররা কেন ভাবলেন না নিজেদের সম্মানের কথা?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE