পর পর হারে হতাশ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ছবি: বিসিসিআই।
২০১৫র অগস্টে যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে, তা এত দিন পর এসে জোর ধাক্কা খেল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শুরুটা অবশ্য হেরেই হয়েছিল। তার পরের দু’ম্যাচ জিতে ২-১এ সিরিজ দখলে নেয় ভারত। ভারত, শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ফেরার পর নভেম্বরে এই দক্ষিণ আফ্রিকাই ভারতে এসেছিল চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে। ৩-০তে হেরেই ফিরতে হয়েছিল অ্যাওয়ে টিমকে। তার পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আবার তাদের সামনে ভারত।
এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছে এক নম্বর টেস্ট দল। কিন্তু প্রথম দুই টেস্টেই মুখ থুবড়ে পড়েছেন বিরাট কোহালিরা। তার আগে টানা ন’টি টেস্ট সিরিজ জিতে সাফল্যের তুঙ্গে থাকা একটা দল যে এ ভাবে নাস্তানাবুদ হতে পারে তা কে ভেবেছিল। তার পিছনে উঠে আসছে অনেক কারণ।
এক তো এই ন’টি সিরিজের মধ্যে ছ’টিই ছিল ভারতের ঘরের মাটিতে। বাকি তিনটি অ্যাওয়ে সিরিজ। দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাজিমাত করেছিল ভারত। সেটা শ্রীলঙ্কার মাঠে হোক বা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। কিন্তু টানা নয় সিরিজে জয়ের গর্ব বড় ধাক্কা খেয়েছে। তার পিছনে একটা বড় কারণ অবশ্যই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। যার ফলে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটু সহজ ভাবেই নিয়ে ফেলেছিল টিম ইন্ডিয়া। যার প্রভাব পড়েছে ভারতের খেলায়।
আরও পড়ুন
এই হার মানা যায় না, বলছেন কোহালি
এটা সামলে নেওয়া যেত প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ধাক্কা খাওয়ার পর। কিন্তু তেমনটা হল না। বরং প্রথম ইনিংস, দ্বিতীয় ইনিংস, দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসেও একই হাল হল ভারতের। সব থেকে বড় সমস্যা হল পিচের চরিত্রে। সবুজ পিচে ভারতের ব্যাটিং দাঁড়াতেই পারল না। বোলাররা কিন্তু পিচের চরিত্র অনুযায়ী সফল। কেপ টাউনের পিচে দুই দল খেলতে নামার আগে গ্রাউন্ডসম্যান ইভান ফ্লিন্ট জানিয়েছিলেন, আবহাওয়ার জন্যই এখানে এমন পিচ তৈরি হয়ে যায়। যেটা সিম ফ্রেন্ডলি করা সম্ভব হয় না। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘যদি ফাস্ট বোলাররা ভাল বল করতে পারেন তা হলে সেই দলের সুবিধে হবে। যে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে তাদেরই আসলে সুবিধে।’’ স্বাভাবিক ভাবেই ঘরের মাঠে সেই সুবিধে যে দক্ষিণ আফ্রিকা পাবে সেটাই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
আউট হয়ে ফিরছেন রোহিত শর্মা।
দ্বিতীয়ত, ভারতের টিম নির্বাচন এখনও পর্যন্ত বার বার সমালোচনার মুখে পড়েছে। অজিঙ্ক রাহানের মতো বিদেশের মাটিতে সফল ক্রিকেটারকে দুই টেস্টে বাইরে রেখে দিয়েই টিম বানিয়েছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। যার কারণ এখনও তেমন ভাবে পরিষ্কার না হলেও, সমালোচকদের বিচারে রোহিত শর্মাকে জায়গা করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত ঘরের মাঠে সফল রোহিতের কিন্তু বিদেশের মাটিতে সেই সাফল্য নেই। তবুও তাঁকে নেওয়া হয় প্রথম দু’টেস্টের প্রথম দলে। তৃতীয় টেস্টে অবশ্য রোহিতকে সরতে হচ্ছে। তাঁর জায়গায় ঢুকবেন রাহানে।
আরও পড়ুন
এক নজরে আইসিসি’র ২০১৭-র সেরা টেস্ট একাদশ
অন্য দিকে, প্রথম টেস্টে ওপেনিংয়ে ব্যর্থ শিখর ধবনকে সরিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে লোকেশ রাহুলকে এনেও সাফল্য আসেনি। ইনিংসের ভিতটাই তৈরি করতে পারেনি ভারত। যার ফলে ভুগতে হয়েছে পুরো দলকে। বাঁচাতে পারেনি বিরাট কোহালির সেঞ্চুরিও। ব্যাটিং ধসে চাপা পড়ে গিয়েছে ভারতীয় বোলারদের দাপুটে বোলিংও। প্রথম টেস্টের দলে তিনটি পরিবর্তন এনেও সেই ধস রোখা যায়নি।
রান আউট চেতেশ্বর পূজারা।
দ্বিতীয় টেস্টে হারের আরও একটা বড় কারণ অবশ্যই চেতেশ্বর পূজারার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান আউট হওয়া। প্রথম ইনিংসে বিরাট কোহালি যখন সেঞ্চুরি করে দলকে ভরসা দিচ্ছেন সেই সময় পূজারার শিশুসুলভ ভঙ্গিতে আউট হওয়াটা দলকে জোর ধাক্কা দিয়েছিল। জায়গায় পৌঁছেও পা এবং ব্যাট সময়মতো লাইনের ভিতরে না রাখতে পারাটা তাঁর হালকা মনোভাবের পরিচয়। দ্বিতীয় ইনিংসেও যখন দলের তাঁকে দরকার তখন মাত্র ১৯ করে রান আউট হয়ে ফেরা। আবারও রান আউট। অসময়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন অনেকেই।
<p>দ্বিতীয় টেস্টে হারের আরও একটা বড় কারণ অবশ্যই চেতেশ্বর পূজারার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান আউট হওয়া। প্রথম ইনিংসে বিরাট কোহালি যখন সেঞ্চুরি করে দলকে ভরসা দিচ্ছেন সেই সময় পূজারার শিশুসুলভ ভঙ্গিতে আউট হওয়াটা দলকে জোর ধাক্কা দিয়েছিল। জায়গায় পৌঁছেও পা এবং ব্যাট সময়মতো লাইনের ভিতরে না রাখতে পারাটা তাঁর হালকা মনোভাবের পরিচয়। দ্বিতীয় ইনিংসেও যখন দলের তাঁকে দরকার তখন মাত্র ১৯ করে রান আউট হয়ে ফেরা। আবারও রান আউট। অসময়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন অনেকেই।</p><p style=" text-align:="" />আরও পড়ুন
আইসিসি-র বর্ষসেরা ওয়ান ডে টিমে কারা রয়েছেন জানেন?
দক্ষিণ আফ্রিকার পিচ, ভারতের ব্যাটিং ধস, সঙ্গে ভুল দল নির্বাচন থেকে টানা ক্রিকেট খেলার ক্লান্তি, সবই এখন কাঠগড়ায়। সিরিজ এমনিতেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। মান বাঁচাতে শেষ টেস্ট জিততেই হবে ভারতকে। না হলে সামনে দীর্ঘ ওয়ান ডে সিরিজ জয়ের রসদ পাওয়া মুশকিল।
ম্যাচ শেষে বিরাট কোহালির ব্যক্তিগত সাফল্যের এই উচ্ছ্বাস উধাও হয়ে গিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy