Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কাপ ফাইনালে ১৯ বনাম ৩২

এমবাপের সোনার দৌড়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মদ্রিচের চোখ বিশ্বজয়ে

এমবাপে এখন তরুণ প্রজন্মের নায়ক। এ বারের বিশ্বকাপের ধ্রুবতারার মতোই জ্বলজ্বল করছেন। আর একজন লুকা মদ্রিচ, দেশকে ফাইনালে তুলে  নায়কের আসনে।

লক্ষ্য: ব্যক্তিগত ট্রফি নয়। মদ্রিচ, এমবাপের পাখির চোখ বিশ্বকাপ। ফাইল  চিত্র

লক্ষ্য: ব্যক্তিগত ট্রফি নয়। মদ্রিচ, এমবাপের পাখির চোখ বিশ্বকাপ। ফাইল  চিত্র

রতন চক্রবর্তী
মস্কো শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

রাশিয়া বিশ্বকাপের সোনার বলের লড়াইয়ে রয়েছেন যে দু’জন তাঁদের একজনের বয়স ১৯, অন্য জনের ৩২।

ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে এবং ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ।

সোনার বুটের দৌড়ে যে দু’জন ছিলেন, তাঁদের কেউই ফাইনালে নেই। হ্যারি কেন আর রোমেলু লুকাকু। আর থাকতে পারতেন ফ্রান্সের আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যান। কিন্তু ফাইনালের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে তিনিও বলে ফেললেন, ‘‘আমি আর গোল করলাম কি না তাতে কিছু যায়-আসে না। ব্যালন ডি’ওর পেলাম কি না, তা নিয়েও মাথাব্যথা নেই। নিয়ে নেওয়া হোক আমার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার সব গোল। শুধু বিশ্বকাপটা চাই। যে কোনও মূল্যে ওটা জিততে চাই। আমরা একটা দল, গ্রিজ়ম্যান সেখানে এক জন সৈনিক।’’

সোনার বলের লড়াইয়ে জিততে হলে শেষ ল্যাপে যে দু’জনকে একে অন্যকে টপকাতে হবে তাঁদের জীবনে অদ্ভুত বৈপরীত্য। এমবাপে এখন তরুণ প্রজন্মের নায়ক। এ বারের বিশ্বকাপের ধ্রুবতারার মতোই জ্বলজ্বল করছেন। আর একজন লুকা মদ্রিচ, দেশকে ফাইনালে তুলে নায়কের আসনে।

মোনাকোতে ফুটবলার জীবন শুরু করে এমবাপে লিগের সব চেয়ে কম বয়সি ফুটবলার হিসাবে হ্যাটট্রিকের নজির গড়েন। রেকর্ড অর্থে তাঁকে নিয়েছে প্যারিস সাঁ জারমঁ। নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-এর পাশে খেলে এত ঝকঝকে হয়েছেন এমবাপে যে বিশ্বকাপে নেমেই তাঁর ছটায় আলোকিত ফুটবল বিশ্ব। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করার সুবাদে তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন পেলেকে! আর বেলজিয়ামকে হারানোর পর মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘ফাইনালে যেই সামনে পড়ুক সেই দলের বিরুদ্ধে গোল করার চেষ্টা করব। আমাদের যে কোনও মূল্যে ট্রফিটা পেতেই হবে।’’ বাবা ফুটবল কোচ, মা হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। বাড়িতে খেলার পরিবেশ। সেরা হওয়ার লক্ষ্য তো থাকবেই।

আরও পড়ুন: ‘সেরা দু’টো দলই খেলছে ফাইনালে’

কিন্তু এমবাপের সোনার দৌড়কে যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফেলেছেন এ বারের টুর্নামেন্টে ক্রোয়েশিয়ার নায়ক লুকা মদ্রিচ। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, অথচ তাঁকে নিয়ে আলোচনাই হত না এত দিন। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে রিয়ালের জার্সিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো যত গোল করেছেন তার ষাট ভাগ পাস হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা লুকার পা থেকেই এসেছে। অথচ তাঁর কথা বলেনি কেউ। তাঁকেও মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, ‘‘কখনও ব্যক্তিগত কোনও ট্রফির কথা মাথায় রেখে খেলি না। বিশ্বকাপেও খেলছি না। দলের ট্রফিটাই আসল।’’

তা হলে চুম্বকে কী দাঁড়াচ্ছে? ফাইনালে ওঠা দু’দলের কোনও ফুটবলারই আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ছুঁতে পারেননি। তাঁদের কাছে সোনার বল বা বুট নয়, আসল লক্ষ্য বিশ্বজয়ীর খেতাব। সেটা এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের দুই ফুটবলার গ্রিজ়ম্যান ও ব্লেস মাতুইদি। ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাটকো দালিচও। নিজেদের শিবিরে বসে গ্রিজ়ম্যান যেমন বলেছেন, ‘‘আমরা রক্ষণাত্মক খেলে জিতলাম নাকি ফুটবল বিরোধী রণনীতি নিয়ে জিতলাম সেটা বড় কথা নয়। আসল হল ট্রফিটা পাওয়া। ’’

আসলে বেলজিয়াম ম্যাচের পর দিদিয়ের দেশঁর রণনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এডেন অ্যাজার এবং থিবো কুর্তোয়া। তার জবাবই এ দিন দিয়েছেন গ্রিজ়ম্যান। নক আউট পর্বের পরপর তিনটে ম্যাচে ১২০ মিনিট করে খেলে জিতেছেন লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিতিচরা। তার মানে ফ্রান্সের তুলনায় ৯০ মিনিট বেশি পরিশ্রম করেছে ক্রোয়েশিয়া। তা হলে কি ফাইনালে দাভর সুকেরের দেশের ছেলেরা ক্লান্ত থাকবেন ফাইনালে? মাতুইদি বলে দিয়েছেন, ‘‘একেবারেই ভুল ধারণা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার সময় কি ওদের ক্লান্ত দেখাচ্ছিল? ওরা ক্লান্ত থাকলে ১২০ মিনিট খেলে জিতল কী করে? ক্রোয়েশিয়া দলটা অত্যন্ত শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ।’’ পাশাপাশি ফ্রান্সের মিডফিল্ড জেনারেলের মন্তব্য, ‘‘আমি মনে করি না ম্যাচ ১২০ মিনিট বা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়াবে। ওটা নিয়ে ভাবছিও না। আমাদের স্বপ্ন বিশ্বকাপ ছোঁয়া। ফ্রান্স যখন বিশ্বকাপ জেতে (১৯৯৮-তে) তখন আমি শিশু ছিলাম। বিশ্বকাপ জেতার আবেগটা বুঝতে পারিনি। সে জন্য ওটা হাত দিয়ে ধরতে চাই।’’

শুক্রবার লুঝনিকি স্টেডিয়ামের প্রেস সেন্টারে এসেছিলেন ক্রোয়েশিয়া কোচ দালিচ। বলে দিলেন, ‘‘আর একটা ইতিহাস গড়ার জন্য ছেলেরা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছে। ওদের মনোভাব দেখে আমি আশাবাদী হয়ে উঠেছি। আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ডের মতো টিমকে আমরা হারিয়েছি। এ বার ফ্রান্সকেও হারাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE