খেলা শুরুর আগে কোহালির ওয়ার্ম আপ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
বৃষ্টিতে ইডেন প্রায় ভাসছে। এক দিকে বর্ষাতি গায়ে মাঠকর্মীদের ভিড়। গ্যালারিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছাতা মাথায় দর্শক।
পরিবেশ এমন ভিজে হলেও ইডেনের দুই ড্রেসিংরুমের অন্দরে কিন্তু তাপ-উত্তাপ ভালই জমছে। শুধু রোদ ওঠার, স্বাভাবিক আবহাওয়ার অপেক্ষা। তার পরেই পাল্টা যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে রাখল ভারতীয় শিবির। অন্য দিকে শ্রীলঙ্কার কোচ নিক পোথাসও বলে গেলেন ভারতের পাল্টা হানার সামলাতে তাঁরাও তৈরি।
টেস্টের দ্বিতীয় দিন পৌনে দু’ঘণ্টা খেলা হওয়ার পরে ফের বৃষ্টিতে থেমে যায় দ্বিতীয় দিনের খেলা। দু’দিনে মাত্র ৩৩ ওভার, ইডেনে সম্প্রতি কোনও টেস্টে হয়েছে কি না, তা মনে করতে পারলেন না সিএবি-র একাধিক বর্ষীয়ান কর্তা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও বলে দিলেন, ‘‘আমার তেমন কোনও টেস্টের কথা মনে পড়ছে না। কিন্তু সেসব কথা মনে করে এখন কী লাভ? প্রকৃতির উপর তো কোনও হাত নেই আমাদের।’’
বৃষ্টিতে দুই শিবিরই মেতে উঠল আড্ডায়, গল্প-গুজবে। সঙ্গে চলল পরবর্তী পদক্ষেপের কৌশল তৈরির কাজও। কোথায় ভুল, কোথায় ঠিক, তা নিয়ে আলোচনাও। দলের ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর যেমন বলছিলেন, ‘‘এই সব দিনগুলোতে ড্রেসিংরুমে দলের সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যায়। দলের সবাই সবার সঙ্গে সময় কাটাতে পারে।’’ এ দিনও ভারতীয় ক্রিকেট সংসারে তা-ই হল। শ্রীলঙ্কা শিবিরেরও একই ছবি। সেখানে আবার জন্মদিন পালনের ঘটা। তরুণ ব্যাটসম্যান রোশন সিলভার জন্মদিন পালন করা হয় কেক কেটে। শুক্রবার ৩০-এ পা দিলেন রোশন।
শ্রীলঙ্কা শিবিরে এমন ‘ফিলগুড’ আবহাওয়া অস্বাভাবিক নয়। শুক্রবার প্রায় ১২ ওভারে তিন উইকেট ফেলার পরে দ্বিতীয় দিন আরও দু’উইকেট পড়ল ২১ ওভারে। প্রথম দিন যদি নায়ক হন সুরঙ্গা লাকমল, তা হলে এ দিন নায়ক দাসুন শনাকা। সবুজ উইকেটে যে ভাবে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে বোলিং করছেন শ্রীলঙ্কা পেসাররা, তা দেখে ভারতীয় শিবিরও বেশ তেতে রয়েছে।
ইডেনের উইকেটে এত ঘাস সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। এই নিয়ে ভারতীয় শিবিরে যেমন জোর আলোচনা চলছে, ভাবনা-চিন্তা হচ্ছে রঙ্গনা হেরথদের ড্রেসিংরুমেও। বিরাট কোহালিদের ফিল্ডিং কোচ বলছেন, ‘‘বাঙ্গারকে জিজ্ঞেস করছিলাম, হেডিংলেতে যখন ওপেন করতে নামতে, তখন কি এমনই কন্ডিশন থাকত? বাঙ্গারের ধারণা, এখানকার পরিবেশ আরও কঠিন।’’ অন্য দিকে আশিস নেহরা, ক্রিকেট ছাড়ার পরই যাঁর টিভি ধারাভাষ্যের অভিষেক এই টেস্টে, তিনি ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘এত বৃষ্টি হচ্ছে বলেই উইকেটটা আরও ভয়ঙ্কর লাগছে। বৃষ্টিটা না হলে এই উইকেটই দেখতেন দু’দিন পরে বেশ সহজ হয়ে যেত। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এত চ্যালেঞ্জিং অবস্থা থাকে না।’’
পাঁচ স্লিপ, একটি গালি নিয়ে ইডেনে ভারতীয়দের বল করতে শেষ কবে কাদের দেখা গিয়েছে, কে জানে? ফর্মের তুঙ্গে থাকা স্টিভ ওয়র অস্ট্রেলিয়াও এতটা আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েছিল বলে মনে পড়ছে না কারও। ভারতের ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর পাল্টা হুমকি দিয়ে বলছেন, ‘‘আমাদের মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব আর সুইংয়ের সুলতান ভুবনেশ্বর কুমার যখন এই উইকেটে বোলিং করবে, তখন আমরাও নিশ্চয়ই একই রকম ফিল্ডিং সাজাবো। লাকমলরা যে ভাবে এই উইকেট থেকে সুইং আর ল্যাটারাল মুভমেন্ট পাচ্ছে, আমাদের বোলাররাই বা পাবে
না কেন?’’ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন উইকেট কিপার ও শ্রীলঙ্কার কোচ নিক পোথাস আবার ভারতকে ক্রিকেটের অল ব্ল্যাকস (বিশ্ব রাগবি চ্যাম্পিয়ন)-এর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘‘বল খুব একটা পুরনো হয়নি। মাত্র দু’দিন হয়েছে। এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, তাতে বেশ খুশি আমরা। তবে বেশি খুশি হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, ওরা খুবই ভাল দল।’’ সবুজ উইকেটে ভারতের পাল্টা আক্রমণের কথা আগাম ভেবে শ্রীলঙ্কার কোচের বক্তব্য, ‘‘এখন পর্যন্ত আমাদের বোলিং ঠিকঠাক হলেও এই অবস্থায়, যেখানে ব্যাটিং করা কঠিন, সেখানে আমাদের পরের কাজটাও সহজ না।’’
বিরাটদের ধারণা, শেষ তিন দিনে ২৭০ ওভার খেলা হলেও ম্যাচের ফয়সালা হতে পারে। শ্রীলঙ্কার কোচও এই ব্যাপারে একমত হয়ে বলছেন, ‘‘পিচে ঘাস ছেড়ে রাখতেই পারে ভারত। ওদের সেই অধিকার আছে। ওদের দিক থেকে ওরা ঠিকই। আমাদের এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সেরা খেলা খেলে ম্যাচটা বার করতে হবে।’’
এখন শুধু বৃষ্টি থামার অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy