Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মেসি ম্যাচের রেফারি ছাড়তে চান সেই চাকরি

সেই নামী জাতীয় রেফারি বিপ্লব পোদ্দার চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া ‘পুরস্কারের চাকরি’ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবছেন।

ক্ষুব্ধ: হেনস্থার শিকার রেফারি বিপ্লব পোদ্দার। নিজস্ব চিত্র

ক্ষুব্ধ: হেনস্থার শিকার রেফারি বিপ্লব পোদ্দার। নিজস্ব চিত্র

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৮
Share: Save:

যুবভারতীতে লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনা টিমকে বাঁশি মুখে সামলেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে। মায়ানমার, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা-সহ আটত্রিশটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়েছেন ছয় বছর ফিফা প্যানেলে থাকার সুবাদে। পাঁচটি ডার্বি-সহ ঘরোয়া ফুটবলে চারশোরও বেশি ম্যাচ খেলিয়েছেন।

সেই নামী জাতীয় রেফারি বিপ্লব পোদ্দার চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া ‘পুরস্কারের চাকরি’ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবছেন। রাজ্য স্পোর্টস কাউন্সিলের ‘অপমানের অস্থায়ী চাকরি’ ছেড়ে আবার মাছ বিক্রির জীবনে ফিরে যেতে চান ফিফা প্যানেলের বঙ্গসন্তান।

চার বছর আগে ফেডারেশনের বিচারে দেশের সেরা সহকারী রেফারি হয়েছিলেন শ্রীরামপুরের বিপ্লব। বাংলায় যে সম্মান কেউ আগে পাননি। তখন তিনি প্রতিদিন সকালে মাছ বিক্রি করতেন শ্রীরামপুরের তিন বাজারে। সেই খবর আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়ার পর তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র তাঁকে ডেকে এনে চাকরি দেন। আসলে পাঁচ হাজার টাকার অস্থায়ী চাকরি। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল খুব দ্রুত তাঁকে পাকা চাকরি দেওয়া হবে। তা তো দেওয়া হয়ইনি। উল্টে সাফ গেমসের মতো আন্তর্জাতিক বা আই লিগ, আইএসএলের মতো দেশের সেরা টুনার্মেন্ট খেলানোর পর তাঁর ওই সামান্য মাইনে থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে হাজার হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার বিপ্লব বলছিলেন, ‘‘২০১৩ সালে দেশের সেরা রেফারি হওয়ার পর আমাকে বলা হয়েছিল পাকা চাকরি দেওয়া হবে। মাছ বিক্রি ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এখন পড়েছি মহা সমস্যায়। চাকরিও পাচ্ছি না। উল্টে চিঠি দিয়ে আন্তর্জাতিক বা দেশের বড় টুনার্মেন্ট খেলাতে গেলেও কেটে নেওয়া হচ্ছে মাইনে। শিলিগুড়িতে মেয়েদের সাফ গেমস খেলিয়ে আসার পর কাটা হয়েছে ২১৪৫ টাকা। খুব অপমানিত লাগে। ভাবছি আবার মাছ বিক্রি করব।’’

আরও পড়ুন: ট্রফি জিতে আসবো, শপথ বঙ্গ অধিনায়কের

পাকা চাকরির জন্য বর্তমান ক্রীড়ামন্ত্রী থেকে ক্রীড়া পর্ষদের কর্তা— সবার দোরে দোরে ঘুরেছেন বিপ্লব। বলছিলেন, ‘‘চার বছর অপেক্ষা করলাম। কিছুই হল না। ভাবছি কিছু না হলে পুরস্কারের চাকরিটা ছেড়ে দেব।’’

শুধু ক্রিকেট বা ফুটবল নয়, টেবল টেনিস এমনকী কুস্তিতেও বাংলা, দেশ বা আন্তর্জাতিক কোনও টুনার্মেন্টে প্রতিনিধিত্ব করলে অফিস থেকে সবেতন ছুটি পান ক্রীড়াবিদরা। কেন্দ্র, রাজ্য বা অনুমোদিত সব সংস্থায় সেটাই দস্তুর। রেফারিদের মধ্যে যাঁরা চাকরি করেন তাঁরাও সবেতন ছুটি পান। বিপ্লব এখন এক মাস পুরো সময় অফিস করলে হাতে পান সাড়ে ছয় হাজার টাকা। রেফারিং না করলে তাঁর অনটনের সংসারই চলবে না। কারণ একটা সর্বভারতীয় বা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়ে বিপ্লব পান চার থেকে দশ হাজার টাকা। সেটা কেন আটকাচ্ছে রাজ্য ক্রীড়া পর্যদ? কেনই বা অফিসে চিঠি জমা দিয়ে ম্যাচ খেলাতে গেলে কেটে নেওয়া হচ্ছে টাকা? ক্রীড়া পর্যদের যুগ্ম সচিব গৌতম বিশ্বাস প্রথমে বললেন, ‘‘ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন।’’ পরে ফোনে বললেন, ‘‘ওকে তো বলে দেওয়া হয়েছে কোথায় কোথায় খেলিয়েছ, তার কাগজ আনো, মাইনে ফেরত পাবে। শুধু চিঠি দিলে হবে না।’’ বিপ্লবের পাল্টা দাবি, ‘‘সাফ ও আই লিগ খেলানোর টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না বলা হয়েছে আমাকে। আর কলকাতা লিগ খেলানোর জন্য রাজ্য সংস্থার সচিবের চিঠি নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি বললেন, যে দিন ম্যাচ খেলাবে তার প্রত্যের দিনেরই চিঠি আনতে হবে। সেটা কি সম্ভব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE