Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অকেজো শোধন প্লান্ট, দুধপুকুরে বাড়ছে দূষণ

দুধপুকুরের দূষণ ঠেকাতে তৈরি হয়েছিল বিশেষ শোধন প্ল্যান্ট। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। প্ল্যান্ট মেরামতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নজরদারির ফাঁক গলে দুধপুকুরে স্নান-বাসন ধোওয়া-কাপড় কাচাও চলছে। পরিণাম, তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্ন দুধপুকুরের জলে দূষণের পরিমাণ মাত্রা ছাড়িয়েছে।

দুধপুকুরে ফের জমছে আবর্জনা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

দুধপুকুরে ফের জমছে আবর্জনা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

দুধপুকুরের দূষণ ঠেকাতে তৈরি হয়েছিল বিশেষ শোধন প্ল্যান্ট। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। প্ল্যান্ট মেরামতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নজরদারির ফাঁক গলে দুধপুকুরে স্নান-বাসন ধোওয়া-কাপড় কাচাও চলছে। পরিণাম, তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্ন দুধপুকুরের জলে দূষণের পরিমাণ মাত্রা ছাড়িয়েছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক একটি পরীক্ষার হিসেব বেশ উদ্বেগের। সেই পরীক্ষার ফল বলছে— মাস কয়েক আগেও জলে দূষণের মাত্রা ছিল ২৩ হাজার কলিফার্ম। কিন্তু এখন তা ছুঁয়েছে ৮০ হাজারে।

তারকেশ্বরে দুধপুকুর পরিষ্কার রাখতে প্রশাসনিক স্তরে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল মাস কয়েক আগে। সেই বৈঠকে জেলা জজ জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিলেন। নির্দেশিকা দ্রুত রূপায়ণের কথাও বলা হয়। কিন্তু তারপরেও যে ব্যবস্থা বিশেষ নেওয়া হয়নি, দূষণের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণই তার প্রমাণ।

পুণ্যার্থীদের কাছে তারকেশ্বর শিব মন্দির লাগোয়া এই দুধপুকুরের আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন তারকনাথের মাথায় ভক্তদের ঢালা জল এবং দুধ সরাসরি দুধপুকুরে পড়ত। এতে পুকুরের জল দূষিত হত। তার উপর এখানে স্নান করার রেওয়াজও রয়েছে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি দুধপুকুরের দূষণ নিয়ে বিস্তর হইচই হয়। সেই সময় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নজরে আনেন। তারপরই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। বাম আমলেই বেশ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট প্রকল্প। যার উদ্দেশ্য ছিল, শিবের মাথায় ঢালা জল এবং দুধ যাতে সরাসরি পুকুরে গিয়ে না পড়ে।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরেরর ই়ঞ্জিনিয়াররা একটি প্লান্ট তৈরি করেন। ভক্তদের ঢালা দুধ-জল ওই প্লান্টের মাধ্যমে পরিস্রুত হয়ে দুধপুকুরে পড়ার ব্যবস্থা চালু হয়। কয়েক বছর হল ওই প্লান্টটি বিকল হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে সেটি সারানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। অভিযোগ, স্থানীয় পুরসভাও নজরদারি চালায়নি। ফলে, এখন শিবের মাথায় ঢালা জল আর দুধ শোধিত হচ্ছে না। সরাসরি নিকাশি নালার মাধ্যমে দুধপুকুরে চলে যাচ্ছে।

প্রশাসনিকভাবে তারকেশ্বর মন্দির দেখভালের দায়িত্ব জেলা জজ পরিচালিত পরিচালন কমিটির। বিষয়টি নজরে আসার পরই তাই জেলা জজ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, প্লান্টটি দ্রুত সারিয়ে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে পুকুরের চারপাশে দিনভর নজরদারি চালানোর কথাও বলা হয় যাতে পুকুরে কোনওরকম আর্বজনা না ফেলা হয়। এমনিতেই দুধপুকুরের জলে বাসন মাজা, জামাকাপড় কাচা এবং স্নান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভক্তরা যাতে অবাধে পুকুরের জলের কাছাকাছি যেতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করার নির্দেশও রয়েছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যকর করতে যে আঁটোসাঁটো নজরদারি থাকা দরকার, তা নেই। কোনও বিশেষ পুজো-পার্বণ না থাকলেও প্রতিদিন শয়ে শয়ে ভক্ত তারকেশ্বর মন্দিরে আসেন। শনি, রবি এবং সোমবার ভিড় হয় বেশি। আর বিশেষ পুজোর দিনে তো মন্দির চত্বরে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। সেই ভিড়ে নজরদারির রাশ আলগা হয়। আর সেই ফাঁকেই দুধপুকুরের জলে ছড়ায় দূষণ।

জল-দূষণের দায় নিতে নারাজ পুর-কর্তৃপক্ষ। তৃণমূল পরিচালিত তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সামন্তের বক্তব্য, ‘‘বাইরে থেকে কেউ আবর্জনা ফেলে দুধপুকুরে দূষণ ছড়াচ্ছে কিনা, সেটা দেখার ভার পুরসভার। সে জন্য নজরদারি চালানোও হয়। কিন্তু দুধ মিশ্রিত জল শোধনে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’’ তারকেশ্বর মন্দির পুরোহিত মণ্ডলীর এক কর্তার আবার ক্ষোভ, ‘‘দুধপুকুরকে দূষণমুক্ত রাখতে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। কারণ, মন্দির কমিটিতে আমাদের রাখা হয়নি।’’

কিন্তু শোধন প্লান্ট মেরামত করা হচ্ছে না কেন?

এ প্রশ্নের জবাবে অবশ্য প্রশাসনিক কর্তাদের মুখে কুলুপ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্তা শুধু বলেন, ‘‘প্লান্ট চালু রাখা থেকে জল শোধন, গোটা কাজটাই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের করার কথা। কেন তারা প্লান্ট সারাচ্ছে না, তা দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE