যে কোনও ছুতোয় আইনজীবীদের কর্মবিরতি নিয়ে বারবার সরব হয়েছে আদালত। কিন্তু আইনজীবীরা তাতে বিশেষ আমল দেননি। এ বার আইনজীবীদের কর্মবিরতি নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলায় বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং রাজ্য বার কাউন্সিলকে যুক্ত করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর।
ওই মামলার আইনজীবী শ্রীকান্ত দত্ত আদালতকে জানান, কর্মবিরতি আটকাতে ২০০২ সালে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া একটি নির্দেশিকা বের করেছিল। কিন্তু এ রাজ্যের আইনজীবীদের সংগঠনগুলি সেগুলি মানছে না। এই সওয়ালের পর প্রধান বিচারপতি বলেন, এই মামলায় বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং রাজ্য বার কাউন্সিলকে যুক্ত করতে হবে। দু’সপ্তাহ পর ফের মামলাটি শুনবেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে বিচারপতি চেল্লুর আইনজীবীদের হুটহাট কর্মবিরতি থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার আবেদন করেছেন। কিন্তু আইনজীবীদের একাংশের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাননি। কর্মবিরতি এবং ছুটি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সংঘাত চরমে ওঠে এ বছর হোলির ছুটি নিয়ে। এ বছর দোলের পরের দিন রাজ্য সরকার হোলির ছুটি ঘোষণা করেছিল। তার প্রেক্ষিতে বার কাউন্সিল প্রধান বিচারপতির কাছে হোলির দিন হাইকোর্টেও ছুটি দেওয়ার দাবি জানায়। প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর অবশ্য সেই দাবি মানতে চাননি।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, প্রধান বিচারপতি-সহ কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবী বার অ্যাসোসিয়েশনকে বিকল্প একটি প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কী সেই প্রস্তাব? বার অ্যাসোসিয়েশনকে বলা হয়েছিল, শুক্রবার ৬ মার্চ হাইকোর্ট বন্ধ থাকলে তার পরিবর্তে আইনজীবীদের গ্রীষ্মাবকাশ, পুজো বা শীতের ছুটিতে এক দিন হাইকোর্ট খোলা রাখা হবে। ওই দিন আইনজীবীদের শুনানিতে অংশ নিতে হবে। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে চায়নি বার অ্যাসোসিয়েশন। তার আগে এক আইনজীবীর মৃত্যুতে আইনজীবীদের বড় একটি অংশ পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করলেও, প্রধান বিচারপতি-সহ বেশ কয়েকজন বিচারপতি তাঁদের আদালত চালু রেখে নজির গড়েন। তাঁদের আদালতে শুনানিও করেন কয়েকজন আইনজীবী।
এর পরেও হুটহাট কর্মবিরতি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনজীবীদের সংঘাত জারি থেকেছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত মেনে আইনজীবীদের বড় একটা অংশ এজলাসে না এলেও, প্রবীন আইনজীবীদের একটা বড় অংশ কিন্তু এজলাসে গিয়ে সওয়াল করেছেন। হাইকোর্টের একটি সূত্রের মতে, দিনকে দিন কর্মবিরতির ডাক উপেক্ষা করে এজলাসে উপস্থিত থাকার প্রবণতা বাড়ছে। আইনজীবীদের কর্মবিরতির আন্দোলনে সামিল হওয়াকেও অনৈতিক বলেও মনে করেন অনেকে।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, আইনজীবী বা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি করার কোনও অধিকার নেই। কারণ, ওঁরা সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। কর্মবিরতি অনৈতিক কাজ বলেই মনে করি।’’ কলকাতা হাইকোর্টের অন্য এক প্রবীণ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘বার কর্মবিরতি ডাকতেই পারে। কিন্তু কেউ যদি ওই আন্দোলন উপেক্ষা করে আদালতে হাজির হতে চান তাঁকে বাধা দেওয়াটা অন্যায়। এটা আইনত দণ্ডনীয়।’’
কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, পুলিশের কেস রেকর্ড কিংবা অন্য কাগজপত্র দেখে বিচারপতিরা কোনওমামলার রায় দিতেই পারেন। শুধু আমেরিকার আদালতে নয়, এ দেশে সুপ্রিম কোর্টেও আইনজীবীদের সওয়াল ছাড়াই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট বিচারপতি মনে করলেই কাগজপত্র দেখেই তিনি রায় দিতে পারেন। এক প্রবীণ আইনজীবীর মন্তব্য, ‘‘বিচারপতিরা একটু সাহসী হলেই আইনজীবী ছাড়াই মামলার নিষ্পত্তি করতে পারেন তাঁরা। আর এই ব্যবস্থা চালু হলেই আইনজীবীদের হুটহাট কর্মবিরতির আন্দোলন বন্ধ হবে মনে করেন ওই সব প্রবীণ আইনজীবী।
তবে এ বার কলকাতা হাইকোর্টেরই এক আইনজীবী কর্মবিরতির আন্দোলন রুখতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় মামলার নিষ্পত্তি কী হয় তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন আইনজীবীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy