হাজিরার পরে দ্বিতীয় বার আদালতে ঢোকার সময়। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
মামলায় নাম জড়ানোয় তিনি আদালতে গিয়েছিলেন আত্মসমর্পণ করতে। আর, সেই আত্মসমর্পণেই প্রচারের অনেকখানি আলো নিজের দিকে টেনে নিলেন বাবুল সুপ্রিয়।
মুম্বই থেকে আসানসোলে ফিরেছিলেন সোমবার রাতে। মঙ্গলবার দলের ৭ নেতা-কর্মী ও বাবা সুনীলচন্দ্র বড়ালকে নিয়ে তিনি আদালতে যান। গোটা সময়টা সব সময়েই ঘিরে রইল অন্তত শ’দুয়েক মানুষের ভিড়। কখনও বিচারকের অনুরোধে সৌজন্য সাক্ষাৎ, কখনও বার অ্যাসোসিয়েশনে বসে গান, ভক্তদের সই বিলোনো সব আবদারই মেটাতে হল তাঁকে।
গরমের জন্য এখন আদালত বসছে সকালে। তাই পুলিশের দায়ের করা জাতীয় সড়ক অবরোধের মামলায় আত্মসমর্পণ করতে সকাল ৮টাতেই আদালতে পৌঁছে যান বাবুল। নীল জিন্স, কালো শার্টে বাবুল গাড়ি থেকে নামতেই সেরেস্তা থেকে ছুটে আসেন আইনজীবীরা। ছেঁকে ধরেন আরও বহু মানুষ। বাবুল অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারকের এজলাসে যান। বিচারক অনিরুদ্ধ মাইতি তখনও না আসায় দায়িত্বে ছিলেন সুপ্রিয়া খা।ঁ তিনি বাবুলকে ফের ১০টায় আসতে বলেন।
এজলাস থেকে বেরোতেই ছবি তোলা ও সই নেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। তাঁকে বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে গিয়ে বসার অনুরোধ করেন আইনজীবীরা। মুচকি হেসে বাবুল বলেন, “এমনিতেই মদ্যপানের অভিযোগ উঠেছে। আর বারে যেতে বলবেন না।” তার পরেই যোগ করেন, “অভিযোগটা অবশ্য খারিজও হয়ে গিয়েছে।” হাসির রোল ওঠে। বারে বসেই বাবুল গান ধরেন, “বারে বারে কে যেন ডাকে আমারে...” আইনজীবীদের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে অস্ত্র আইনের খুঁটিনাটিও জানতে চান তিনি (কেননা ওই আইনেই তাঁর বিরুদ্ধে আর একটি অভিযোগ দায়ের করে বসে আছে তৃণমূল)।
১২ এপ্রিল রানিগঞ্জ থানার পুলিশ বাবুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করে, তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬, ১৪৩, ২৮৩ ধারা ও ১৯৫৬-এর জাতীয় সড়ক আইনের ৮ (বি) (২) ধারায় মামলা হয়েছিল। শুনানির শুরুতেই বাবুলের আইনজীবী রাম ইকবাল সিংহ জামিনের আবেদন জানান। সঙ্গে-সঙ্গে সরকার পক্ষের আইনজীবী সুস্মিতা সেন চক্রবর্তী জানান, জাতীয় সড়ক আইনের ধারাটি জামিনঅযোগ্য। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক অনিরুদ্ধ মাইতি ১৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে বাবুলের জামিন মঞ্জুর করেন। দু’পক্ষের আইনজীবীই জানান, এ দিন পুলিশ আদালতে কেস ডায়েরি পাঠায়নি। শুধু বিচারবিভাগীয় রেকর্ড পাঠিয়েছে। তাতে ঘটনার বিবরণ দিয়ে ধারাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। দু’পক্ষের কথা শুনে বিচারক বাবুলকে জামিন দেন। এর পরেও পুলিশি তদন্ত জারি থাকবে। সুস্মিতাদেবী বলেন, “আমি জামিনের বিরোধিতা করিনি। শুধু জামিনঅযোগ্য ধারাটি স্মরণ করিয়েছি। বিচারক ভাল বুঝেছেন, তাই জামিন দিয়েছেন।”
ঘটনাচক্রে, এ দিনই জি টি রোড ধরে আদালতে যাওয়ার সময়ে গাড়ি থেকে তৃণমূল নেতা তথা আসানসোল পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে দেখতে পান বাবুল। মদ্যপানের অভিযোগ ওঠার পরে এই জিতেন্দ্রবাবুই বাবুলের ডাক্তারি পরীক্ষার আবেদন করেন। তাঁকে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে বাবুল কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি বলেন, “আমি ওঁকে বলেছি, আপনি আমায় অনেক চিঠি পাঠিয়েছেন। আমারও কিছু আইনি চিঠি পাঠানো দরকার। কোন সময়ে পাঠালে সুবিধা হবে, বলুন। তিনি সময় দিয়েছেন। সেই মতো চিঠি পাঠিয়ে দেব।” জিতেন্দ্রবাবু জানান, সকালে বাবুলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাঁর কথায়, “ওঁর বাবা-মাকে প্রণাম জানিয়েছি। শ্রীবৃদ্ধিও কামনা করেছি। উনি কিছু চিঠি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন।”
আসানসোলে টানা মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও মেয়ে শর্মিলির আব্দার ও একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবামের কাজে বাবুল তিন দিনের জন্য মুম্বই গিয়েছিলেন। ফিরেছেন স্ত্রী-কন্যাকে একরাশ দুশ্চিন্তায় রেখে। বাবুল বলেন, “ওরা কেউ ভীত নয়। আমাকে খুব উৎসাহও জোগাচ্ছে। তবে কিছুটা শক্ড বলতে পারো। শুধু ভাবছে, এ রকম কী করে হতে পারে!” ছেলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগে মনখারাপ বাবা সুনীলবাবুরও। তিনি বলেন, “ওকে ভোটে দাঁড়াতে এক মাত্র আমিই উৎসাহ দিয়েছি। কিন্তু এই রকম পরিস্থিতি হবে জানতাম না।”
বাবুল এ দিনও দাবি করেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে প্রচার থেকে বিরত রাখার চক্রান্ত করছে শাসকপক্ষ।” এ দিনও আদালত থেকে বেরিয়ে কুলটিতে যান তিনি। তার আগে বলেন, “অনেক তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমাকে তাঁরা নিমন্ত্রণও করেন। আমি যাই। কিন্তু এখন যে আচরণ করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy