কাজের সময় মিটিং-মিছিল করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ক্ষোভ প্রকাশের দিনেই খোদ শাসক দলের মিছিলে স্তব্ধ হয়ে গেল শহরের প্রাণকেন্দ্র।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সদ্য সমাপ্ত তিন পুরভোটের গণনা পিছিয়ে দিয়েছে। তার প্রতিবাদে এ দিন কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করা হয় শাসক দলের পক্ষ থেকে। তার জেরেই এ দিন নাকাল হন সাধারণ মানুষ।
শহরে কাজের দিনে মিটিং-মিছিল করলে যে সাধারণ মানুষেরই ভোগান্তি হয়, মঙ্গলবার একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন সেই মন্তব্য করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। প্রধান বিচারপতি এ দিন এও জানান, সোমবার শহরে মিছিলের জেরে যে ব্যাপক যানজট ছিল, তিনি নিজে তার সাক্ষী ছিলেন। প্রধান বিচারপতি এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘মিটিং-মিছিলের জন্য সাধারণ মানুষ কেন ভুগবে?’’
পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা ২টো থেকে শাসক দলের মিছিল শুরু হয় কলেজ স্ট্রিট থেকে। মিছিল ওয়েলিংটন, এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে বেলা তিনটে নাগাদ ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছয়। পুলিশ জানায়, মিছিল শুরুর আগেই ওয়েলিংটন থেকে কলেজ স্ট্রিট মুখী রাস্তায় যান চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকে। ফলে লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি, ম্যাডন স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, মিশন রো, জওহরলাল নেহরু রোড, রানি রাসমনি রোড-সহ মধ্য কলকাতার বেশ কিছু রাস্তায় যানজটের কবলে পড়ে। ভ্যাপসা গরমে বাস, ট্রামে আটকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে গরমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছন।
যানজট ছড়িয়ে পড়ে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত। ধর্মতলা চত্বরে পুজোর কেনাকাটা করতে আসা লোকজনও মিছিলের জেরে দুর্ভোগে পড়েন। তাঁদের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যে দল বড় মুখ করে বলে বনধ, মিটিং-মিছিল করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে দেবে না, তারাই কাজের দিনে মিছিল করছে। একই মুখে কত কথা যে বলে!’’
এ দিন মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির অন্যতম ক্ষোভের কারণ রাজনৈতিক দলগুলির জনস্বার্থ মামলায় যুক্ত না হওয়া। এর আগের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী শ্রীকান্ত দত্তকে নির্দেশ দেন, রাজনৈতিক দলগুলিকে মামলায় যুক্ত করতে।
ওই আইনজীবী এ দিন আদালতে জানান, জাতীয়, রাজ্য ও আঞ্চলিক মিলিয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে স্বীকৃতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তিনি ৩০টি দলের কার্যালয়ে গিয়ে মামলার নথি জমা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু আটটি দলের কার্যালয় তিনি খুঁজে পাননি। আইনজীবী এও জানান, তৃণমূলের কার্যালয় মামলার কাগজপত্র গ্রহণই করেনি। তা জেনে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘পুলিশকে বলব যেন কোনও মিটিং-মিছিলের অনুমতি না দেয়। তাহলেই রাজনৈতিক দলগুলি আদালতে ছুটে আসবে।’’ এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্র। প্রধান বিচারপতি এজি-কে নির্দেশ দেন, রাজ্যের তিনটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে মামলায় যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করতে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২১ নভেম্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy